PM CARES FUND এ জমা পড়া টাকা কোথায়? আরো একটা রাফায়েল নয় তো?

সাইফুল্লা লস্কর : দেশব্যাপী ঊর্ধ্বমুখী করোনা প্রকপের মাঝে চতুর্থ দফা লকডাউন শেষে কিছুটা ছাড় দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে পঞ্চম দফা লকডাউন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার শ্রমিক পায়ে হেঁটে বা বিরোধীদের চাপের মুখে মোদী সরকারের চালু করা শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে করে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন ঠিক তখন দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ গুলো তাদের দৈনিক রুজি রুটির সংস্থান করতে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছে। এই অবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রান তহবিল বা পিএমএনআরএফ থাকা সত্বেও পিএম কেয়ার্স ফান্ড চালু করার ঘোষণা করেন প্রথম দফা লকডাউন ঘোষণার ঠিক পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ২৮ শে মার্চ।

প্রধনমন্ত্রীর ঘোষণার পর সারা দেশ থেকে অসংখ্য মানুষ, বেসরকারি সংস্থা, দাতা সংগঠন এগিয়ে এসে দান করে এই ফান্ডে।এপ্রিলের শেষের দিকে জানা যায় ফান্ডে তখনও পর্যন্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে। দেশব্যাপী ক্রমশ ব্যাপক আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় যথেষ্ঠ সরকারি অর্থের যোগান না থাকায় বিরোধীরা প্রশ্ন তোলে পিএম কেয়ার্স ফান্ডে জমা পড়া টাকার ব্যাবহার নিয়ে। সরকার সেই সময় থেকেই এই ব্যাপারে কথা বলতে নারাজ, উপরন্তু জানানো হয় এই টাকার অডিট করতে পারবেনা ক্যাগ। এই অবস্থায় গত ২৯শে মে তারিখে সরকারের আসল উদ্দেশ্য সর্বসম্মুখে উন্মুক্ত হতে যায় যখন ব্যাঙ্গালোরের এক আইন বিভাগের ছাত্র হার্ষ কান্ডকোরির করা RTI এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে জানানো হয় যে এই ফান্ড ২০০৫ সালের RTI আইনের আওতায় আসে না। তাই এই ফান্ডের ব্যাপারে কোনো RTI এর জবাব দিতে বাধ্য নয় তারা কারণ এই ফান্ড সরকারি কর্তৃপক্ষ নয়।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্য মতে কেন্দ্র সরকার ১৩ ই মে তারিখে করোনা মোকাবিলায় এই ফান্ড থেকে ৩১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে এবং পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর ১০০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। বাকি অর্থের কোনো হিসেব দেয়া হয়নী।

এদিকে কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল গতকাল সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় মোদী সরকারের কাছে জানতে চান সরকার এই ফান্ড থেকে কত টাকা শ্রমিক দের দিয়েছেন? বিরোধীরা শুরু থেকেই বলে আসছিলেন পিএমএনআরএফ থাকার পর এমন ফান্ড তৈরি করার কোনো দরকার নেই। এখন তাদের আশঙ্কাই সত্যি হলো বলে মনে হচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী থারুর ও এই ফান্ড ক্যাগের দ্বারা অডিট না করার সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
অন্যদিকে মিস্টার হর্ষ বলেছেন তিনি আবার আবেদন করবেন এই বিষয়ে স্বচ্ছতা কতটা আছে তা জানার জন্য। দেশব্যাপী লকডাউন শেষের পথে কিন্তু কেন করোনা সংক্রমণ বাড়ছে এই প্রশ্নের জেরে চাপের মুখে থাকা সরকার এই ফান্ডের ব্যাপারে মিথ্যা অজুহাত দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা, জাতীয় প্রতীক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রের ব্যাবহার সব দিক থেকেই বোঝা যায় এটা জনগণের সম্পত্তি। উল্লেখ্য এই ফান্ডের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং তিন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এর সদস্য।

এখন সর্বক্ষেত্র থেকে প্রশ্ন উঠছে, সর্বসাধারণের অবদানের ফলে জমা টাকার হিসেব সর্বসমক্ষে অনা হবেনা কেন? এই ফান্ডের হিসেব নিকেশে স্বচ্ছতার অভাব এখন সুস্পষ্ট। তাহলে কোথায় গেলো হাজার হাজার কোটি টাকা, কে দেবে এর জবাব? সাধারণের টাকার হিসেব জনগণের জানার অধিকার নেই কেন? আসলে কি জনগন থেকে লুকোতে চাচ্ছে সরকার? আরো একটা রাফায়েল আমাদের অপেক্ষায় নেই তো?

Back To Top