~মেহেবুব সাহানা
দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় স্রোত যখন তুঙ্গে তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও গৃহমন্ত্রী সারাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে একটা রাজ্যের ভোট প্রচারে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি শুরু করেছেন। এদিকে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নির্দিধায় ঘোষণা করে দিয়েছেন দেশের করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় স্রোতের জন্য দায়গ্রস্ত সাধারণ মানুষ । করোনা সংক্রমণের প্রথম স্রোতের জন্য দায়ী ছিল তাবলীগ জামাত আর দ্বিতীয় স্রোতের জন্য সাধারণ মানুষ । বাহ এই দেশে কোনো রকম তথ্য – প্রমান ছাড়াই কত সহজেই সাধারণ মানুষের উপর অথবা কোনো সম্প্রদায়ের উপর দায়ভার চাপিয়ে দেওয়া যায়। আর আমরা গোগ্রাসে কত সুন্দর ভাবে সেগুলো গিলেও ফেলি ।
এই দেখুন না পশ্চিমবঙ্গের ভোট গ্রহণের জন্য কেন্দ্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, তাদেরকে ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে গুলি করে মারার এবং গুলি করে ৫ জন কে মেরে ফেলাও হয়েছে ।
যাদের কে মেরে ফেলা হলো, তারা কারা? একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ?
তারপর পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী পক্ষের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুমকি দিয়ে বলেছেন, “শীতলকুচিতে দুষ্টু ছেলেরা গুলি খেয়েছে। এই দুষ্টু ছেলেরা থাকবে না বাংলায়। বেশি বাড়াবাড়ি করলে জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।।”
এই বক্তব্যের অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা করলে এই দাড়ায় যে এই রাজ্যে কোনো এক সম্প্রদায়ের মানুষই কেবল গন্ডগোল পাকাচ্ছে, এই দেশে সেই সম্প্রদায়ের মানুষদের থাকার কোনো অধিকার নেই, তারা ভোট ফোট না দিয়ে চুপ চাপ বাড়িতে থাকো । না হলে আগামী ভোট পর্বগুলোতে পশ্চিমবঙ্গের যে যে জায়গায় শীতলকুচি মতো সংখ্যালঘু মানুষের বাস সেখানেও গুলি করে মানুষ মারা হবে। এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি কেবল মাত্র সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বুথ গুলোতে সাধারণ বুথগুলোর থেকে দ্বিগুণ কেন্দ্র বাহিনী। আর এটাই বলে দিচ্ছে কেন্দ্রবাহিনী কেবল মাত্র একটা বিশেষ সম্প্রদায়কে শায়েস্তা করতে এসেছে এই রাজ্যে ।
ইনিয়ে বিনিয়ে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার মতো কিছু নেই । কেন্দ্রে ফ্যাসিবাদের সরকার চলছে তারা যে কত ভয়ঙ্কর, তারা বাংলা জিততে কতটা নিচে নামতে পারে আমরা সেটা প্রতি মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি । বিজেপি মুসলিম বিরোধী, তারা মুসলিমদের জানে প্রাণে মেরে ফেলতেও পিছপা হবে না এটা স্বাভাবিক আর এটা শুধু এই রাজ্যে না সারা দেশ জুড়ে চলছে । আর এর জন্য তারা গুন্ডা বাহিনী থেকে দেশের কেন্দ্র বাহিনী যাকে খুশি ব্যবহার করতে পারে । কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি ৩৪ বছর লেফট শাসিত রাজ্যের সাধারণ লিবারেল মানুষদের দৃষ্টি ভঙ্গিতে, অবাক হচ্ছি শীতলকুচি প্রসঙ্গে বাম নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে । অবাক হচ্ছি তৃণমূল তৃতীয় বার সরকারে আসার জন্য কিভাবে একটি সম্প্রদায় কে জূজূ ধরিয়ে তাদের যান প্রাণ সবকিছু কে বাজিতে লাগিয়েছে । অবাক হচ্ছি ২০২১ এর ভোট কি ভাবে কেবল মাত্র একটা সম্প্রদায়ের উপস্থিতি ও সংখ্যাকে (27%) সাধারণ মানুষের সামনে ভীত স্থাপন করে মেরুকরণের মাধ্যমে রাজনীতি করা হচ্ছে ।
শীতলকুচির ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে ২শে মে এর পর তৃণমূল, জোট অথবা বিজেপি যেই সরকার গঠন করুক না কেন, আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা যে ভালো থাকবে না এটা নিশ্চিত । বিজেপি ৮০ টির উপর সিট পেলেই ধরে নিতে হবে যে, গো মাংস, লাভ-জিহাদ, বাংলাদেশী, অনুপ্রবেশকারী জিহাদি এই গুলোই হবে আগামী পশ্চিমবঙ্গের মূল ইসু । আগামীর পশ্চিমবঙ্গে শীতলকুচির মতো মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলো থেকে বেরোতে থাকবে বুকে বুলেট নেওয়া মুসলিম যুবকদের তাজা রক্তের লাশ । শীতলকুচি সাধারণ হবে, শীতলকুচিকে সাধারণীকরণ করা হবে!
লেখক ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট।