মোদীর ভারতে আত্মনির্ভরশীলতা কোথায়?

ঘরমুখী পরিযায়ী শ্রমিকের দল।

সাইফুল্লা লস্কর : আত্মনির্ভরশীলতা প্রত্যেক মানুষের জীবনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।ব্যক্তিজীবনে,পারিবার ও সামাজ জীবনে, রাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক সমস্ত স্তরে আত্মনির্ভরশীলতার প্রয়োজন আমরা সর্বদা অনুভব করি।আবার রাষ্ট্রীয় অঙ্গনের ও ব্যক্তিগত জীবনের আত্মনির্ভরশীলতা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।কিন্তু নাগরিকের সবথেকে সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র যদি এই আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের দায়িত্ব শুধু নিজের কঠিনতম জীবন সংগ্রামে লিপ্ত নাগরিকের ওপর চাপিয়ে দায় সারে তাহলে তা কখনোই অর্জিত হবেনা।


২০১৪ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এবং এক গুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদী সরকার দিল্লির তখতে যখন আসীন হয় তখন তার মূল মন্ত্রই ছিল “সবকা সাথ, সবকা বিকাশ” অর্থাৎ রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের অধীন সবাই হতে হাত ধরে এগিয়ে যাবে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে। চতূর্থ ও পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যে আত্মনির্ভরশীলতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তার পর ৪০ বছরের অধিক সময় পার হতে গেলেও তার সঠিক বাস্তব রূপায়ণ কিন্তু ভারতবাসী আজও দেখেনি। ইউপিএ সরকার দশ বছরের শাসনের ক্লান্তি লগ্নে মোদীর এক গুচ্ছ প্রতিশ্রুতি স্বপ্ন দেখিয়েছিল অনেককে।অনেকে আবার নতুন আশায় বুক বেঁধেছিল।বেকার যুবক দের জন্য প্রতি বছর ২ কোটি করে কর্মসংস্থান, বিদেশ থেকে কালোটাকা ফেরত এনে দেশের কাজে লাগানো,পেট্রোলের দাম কমানো ও দেশীও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে উৎসাহিত করা,গরীব কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ সুনিশ্চিত করাসহ অনেক প্রতিশ্রুতি আশার আলো দেখিয়েছিল অনেককে।মেক ইন্ ইন্ডিয়া,স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া,উজ্জলা যোজনা,স্বচ্ছ ভারত অভিযান ইত্যাদি মোদীর আত্মনির্ভর ভারত তৈরির দিশায় প্রথম কিছু উদ্যোগ কিন্তু পরবর্তীতে জানা গেলো মেক ইন ইন্ডিয়ার লোগোই বিদেশে তৈরি।


ক্ষমতায় আসার আগেও যে প্রতিশ্রুতিই ভরসা ছিল এখন কার্যকালের দ্বিতীয় মেয়াদে সেটাই ভরসা প্রধানমন্ত্রী মোদীর।লাখো কোটি টাকার অনুদান বা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম করোনা প্যাকেজ ঘোষণার শুধু প্রদর্শন ও প্রচারের গৌরবটুকুই আমাদের বর্তমানে একমাত্র প্রাপ্তি। হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক পায়ে হেঁটে উত্তর ও পশ্চিম ভারত থেকে পূর্ব ভারতে ফেরার দৃশ্য বা কোনো ট্রেন প্লাটফর্মে কয়েক প্যাকেট খাবারের জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতাহাতি অথবা কোনো অভুক্ত শিশুকে সুটকেসের ওপর শুইয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া মায়ের চিত্র আত্মনির্ভরশীলতার কোন দিকের পরিচয় দেয়?মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদ এর রেললাইনের ওপর ঘুমন্ত শ্রমিকদের ওপর থেকে রেল ইঞ্জিন চলে যাওয়া এর থেকে অনেক ভয়ংকর অবস্থার দিকে নির্দেশ করে।


বিশ্বের অন্যান্য দেশের সরকার যখন করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে তাদের নাগরিকদের মাসের পর মাস সমস্ত খরচের দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বরাদ্দ করছে আমাদের তখন শুধু সংবাদমাধ্যমে পাওয়া বৃহৎ পাকেজের খবরেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে যা আদৌ কতটা সর্বসাধারণের কাজে আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।আমাদের রাষ্ট্র এতটাই আত্মনির্ভর যে এই বৃহৎ দেশে করোনা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় মাস্ক,ওষুধ,ভেন্টিলেটর সহ প্রায় সমস্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম চীনের মত দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশীয় ভাবে যতটুকু উৎপাদন সম্ভব তা আবার ভারতবাসীর কাজে আসার জন্য আমেরিকা বাহাদুরের অনুমতি লাগবে।মোদীর কাছে বেঙ্গল কেমিক্যালস এর প্রস্তুত হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ভারতীয়দের প্রয়োজনের থেকে আমেরিকাবাসীদের প্রয়োজন মেটানো বেশি জরুরি মনে হয়েছে।তাই এই পরিস্থিতিতে সর্বস্তর থেকে একটাই প্রশ্ন উঠছে মোদীর ভারতে আত্মনির্ভরশীলতা কোথায়??

Back To Top