ভারত কি সত্যিই পারবে চিনা পণ্য ছাড়া চলতে ?
দেখুন বাস্তবতা

সাইফুল্লা লস্কর : সারাদিন টিভিতে, সংবাদপত্রে, সোশ্যাল মিডিয়ায় লাদাখ, সিকিম, উত্তরাখণ্ড অরুণাচল প্রদেশ প্রভৃতি জায়গায় চিনা সেনার আগ্রাসনের খবরে আশঙ্কিত এবং রাগান্বিত সাধারণ ভারতীয়দের অন্তঃকরনে চীনের বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবেই একটা ঘৃণার উদ্রেক হয়। আবার তারা যখন মিডিয়ায় শোনে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে চিনা পণ্য বয়কট করার অভিযানের কথা অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বিদেশি পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য কেনার আহ্বান, তখন সবাই চায় জাতীয় স্বার্থে চিনা পণ্য বর্জন করতে। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় যখন কেউ মিডিয়া জগৎ থেকে বাইরে এসে কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি হয়। জাতীয়তাবাদ দিয়ে গরীবের সংসার চলে না চলে স্বল্প মূল্যের চিনা পণ্য দিয়ে। যেখানে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে, যে দেশে বেকারত্বের হার এখন প্রায় ২৪ শতাংশ সেই দেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ টিভিতে জাতীয় স্বার্থের প্রতি নিজের সর্বোচ্চ অবদান দেয়ার পূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কম দামী চিনা পণ্য বাদ দিয়ে বেশি দামী দেশীয় পণ্য ক্রয় করে জীবনধারণ করার সাহস দেখাবে না।

কয়েকদিন আগে জানা যায় ‘BoycottChina‘ লেখা টিশার্ট তৈরি হচ্ছে চিনে এবং তা আমদানি হচ্ছে ভারতে। এটা থেকে বোঝা যায় ভারতীয় বাজার কতটা নিজেদের দখলে রেখেছে চিনা পণ্য। চীনের ৭০% ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী আমদানি করা হয় চীন থেকে। কিছুদিন আগে করোনা মোকাবিলার সময় ও চীন থেকে ভারত সরকার আমদানি করে মাস্ক, পিপিই, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি চিকিৎসা উপকরণ। এছাড়া ইলেকট্রনিকসের বাজারও তাদের দখলে। জিয়াওমি, ওপোর মতো চিনা মোবাইল কোম্পানি গুলোর দখলে ভারতীয় বাজারের ৬৬% অংশীদারিত্ব। পেটিএম, সুইগীর মতো ৩০ টি কোম্পানির মধ্যে ১৮ টিতে চিনা অর্থ বিনিয়োগ করা আছে। ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ২০% হয় চীনের সঙ্গে যা চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ২.৭%।

অনেকে বলছেন সরকারের এই চিনা পণ্য বর্জনের অঘোষিত অভিযান আসলে একটা ভাঙতাবাজি। সরকার যদি সত্যিই চায় ভারতবাসী চিনা পণ্য ক্রয় বিক্রয় করে চীনের অর্থনীতির অগ্রগতিতে সহায়ক না হোক তাহলে তারা কেন চিনা পণ্যের আমদানি সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দেয় না? এটার সোজা উত্তর হলো সরকারও জানে চিনা পণ্য ছাড়া এদেশের স্বল্প আয়ের কোটি কোটি মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে কতটা ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে আবার ভারতের বৈদেশিক বানিজ্য কতটা ব্যাহত হবে এই পদক্ষেপের ফলে। তাই এই পণ্য বর্জনের ডাক শুধু মিডিয়ার মাধ্যমে আপনার কানে পৌঁছানো হবে যাতে রাজনীতির চাকা ঘুরতে থাকে আবার বাস্তব জগতেও যেন অতটা খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মোদীর আমলে চিনের সঙ্গে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ হ্রাসের পরিবর্তে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় ভারতে চীন পণ্যের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৫% এবং ভারত থেকে চিনে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২২%। এটা থেকেই বোঝা যায় চিনা পণ্য বর্জন করা কোনো বাস্তব পরিকল্পনা নয়, সরকারও চায় না এটা হোক শুধু মাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ধরনের কথা মিডিয়ায় প্রচারিত হয়, চীনের বিরুদ্ধে সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকতে এবং সাধারণ মানুষকে চীনের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট হওয়া থেকে বিরত রাখা।

Back To Top