ভারতে করোনা মোকাবিলায় অসংখ্য ভুলে ভরা মোদী সরকারের নীতি

সাইফুল্লা লস্কর : অন্তত ১৮০ টি দেশে আতঙ্ক ছড়ানো করোনা ভাইরাসের প্রভাব বিশ্ব জুড়ে আপাতত নিম্নমুখী। নিজিল্যান্ডের মতো কিছু দেশ করোনা মুক্ত বলে ঘোষণা দিয়েছে ইতিমধ্যে। করোনার উৎপত্তিস্থল চীন এখন করোনার কথা প্রায় ভুলে গিয়েছে। এক সময় ভয়াবহ ভাবে আক্রান্ত হওয়া ইরান এবং ইতালি এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসছে করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠে। ইরান ইতিমধ্যে তাদের মসজিদগুলো মুসুল্লিদের জন্য খুলে দিয়েছে। ইতালি ও তাদের ঐতিহাসিক স্থান গুলো পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে। সার্বিক ভাবে বিশ্বে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু হারের গ্রাফ এখন নিম্নমুখী কিন্তু ভারত বর্ষ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে লকডাউন শেষের পথে কিন্তু সংক্রমণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এবং মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে পূর্বের তুলনায় দ্রুত হারে। এখন গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০,০০০ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে দেশ জুড়ে।

প্রশ্ন উঠছে, যদি করোনা সংক্রমন রোধে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে তাহলে এখন সংক্রমণ যখন বাড়ছে পূর্বের থেকে বেশি হারে তখন তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে কেন? আর যদি সরকারের যুক্তি মানা যায় যে করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের প্রয়োজন নেই তাহলে এতদিন সাধারণ মানুষজনকে কেন এই ভয়াবহ আর্থিক এবং সামাজিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হলো? এখন এত দিন আশঙ্কা করা গোষ্ঠী সংক্রমণ তো সেই শুরু হয়ে গেলো।

ভালো ভাবে দেখলে বোঝা যায় এই সংক্রমণ রোধে মোদী সরকারের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার জন্যই আজ দেশের পরিস্থিতি বাকি বিশ্বের তুলনায় খারাপ। করোনা সংক্রমন শুরুর সময় সরকারের পদক্ষেপ গুলো দেখলেই এটা বোঝা সম্ভব।

১. ভারতে প্রথম এই ভাইরাসের আবির্ভাবের নিদর্শন পাওয়া যায় ৩০ শে জানুয়ারি, কিন্তু তারপর মোদী সরকার কোনো ব্যাবস্থা না নিয়ে দিল্লির নির্বাচন, নমস্তে ট্রাম্পের নামে লক্ষ মানুষকে একত্রিত করা এবং মধ্য প্রদেশের বিধায়ক কেনা বেচায় মনোযোগী ছিল। মহারাষ্ট্রের মুখ্য মন্ত্রী উদ্ভব থাকতে কয়েকদিন আগে অভিযোগ করেছেন, ভারতে বিশেষ করে মহারাষ্ট্র করোনা ভাইরাসের বেশি সংক্রমনের পিছনে মূল কারণ মোদীর নমস্তে ট্রাম্প।

২. ১১ ই মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে অতি মহামারি (Pandemic) বলে ঘোষণা করে।

৩. ১৩ ই মার্চ ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ঘোষণা করে করোনা ভারতের জন্য হেলথ ইমার্জেন্সী নয়।

৪. ২২ শে মার্চ মোদী জনতা কারফিউ ঘোষণা করে একদিনের। তারপর দাবি করা হয় দেশ জুড়ে করোনার চেন বা শৃঙ্খল ভেঙ্গে গিয়েছে।

৫. ২৫ শে মার্চ মাত্র ৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে ঘোষণা করা হয় লকডাউন, রাজ্যের এবং জেলার বাইরে আটকে পরে হাজার হাজার মানুষ। মে মাসের আগে পর্যন্ত সরকার তাদের ফেরানোর কোনো ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি। এই সিদ্ধান্তের ফলে এ পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে বহু মানুষের।

পঞ্চম দফা লকডাউন শেষ করে সরকার আবার  জনজীবন সাধারণ পর্যায়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ কমার পরিবর্তে বেড়েই চলেছে। সঠিক সময়ে সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার জন্যই আজ ভারত সব থেকে খারাপ অবস্থায় এবং সব থেকে বেশি সংক্রামিত দেশের তালিকায় ক্রমশ অপরের দিকে যাচ্ছে, হয়তো কোনদিন আমেরিকার জায়গায় ভারতকে দেখবো আমরা। কিন্তু তখন স্বাস্থের ব্যাপারে অসচেতন বেশিরভাগ ভারতবাসীর অবস্থা কেমন হবে? এমন সরকারের ওপর দেশবাসী কিভাবে ভরসা করবে বিপদের সময় তা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে সাধারণের মনে।

Back To Top