লক ডাউনের বন্দিদশা পেরিয়ে গত ২৯ শে নভেম্বর ২০২০ নাগেরবাজার অমরপল্লির থিয়ে এপেক্সে অভিনীত হল বাগুইআটি সহজিয়ার নাট্যসংস্হা প্রযোজিত নাটক “জড় আয়ু”।
এই নাটক এক স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের উপাখ্যান, যা কন্যাভ্রূণ হত্যা বিরোধী জীবন্ত এক দলিল। নাটকের স্ক্রিপ্ট ও তার স্মার্ট উপস্থাপনায় মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন এই নাটকের নাট্যকার প্রশান্ত সেন। তাঁর শক্তিশালী ক্ষুরধার লেখনী ও চমকপ্রদ গল্পের স্টাইল মন জয় করেছে দর্শকদের। গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবহৃত হয়েছে চারটি মৌলিক গান, যেগুলোর রচয়িতাও নাট্যকার নিজে। এ ছাড়াও নাটকে ব্যবহৃত হয়েছে দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। মৌলিক গানগুলির সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন তরুণ গায়ক ও সুরকার শৌর্যদীপ সান্যাল এবং নাটকের নির্দেশিকা অর্ণিশা সেন। নির্দেশিকার আবহ পরিকল্পনায় সুনিপুণ শব্দ প্রক্ষেপণ করেছেন ঋত্বিক ভট্টাচার্য্য। নাটকের আবহ ও শৌর্যদীপ সান্যালের লাইভ গিটার সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
নাটকটির একমাত্র চরিত্র স্বপ্ন, অর্থাৎ স্বপ্নলতা — একটি মফসসলের সাদামাটা অতি সাধারণ মেয়ে, যে কিনা তার বাবা মায়ের চোখের মণি। খুব পয়া, যেন সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মী। মাত্র মিনিট চল্লিশের নাতিদীর্ঘ এই নাটকের স্বল্প সময়সীমার মধ্যেও জন্ম থেকে বিবাহ পরতে-পরতে বিভিন্ন বয়সের স্বপ্নলতাকে স্বাভাবিক ও সাবলীলভাবে মঞ্চে উপস্থাপন করেছেন নাটকের নির্দেশিকা অর্ণিশা সেন তাঁর অনবদ্য অভিনয়ে, অভিব্যক্তিতে, অঙ্গ সঞ্চালনায়, নাচে-গানে-আবৃত্তিতে। অর্ণিশার ভয়েস মডিউলেশন সত্যিই শিক্ষনীয়। একজন complete actress বলেই মনে হয় অর্ণিশাকে। তার অভিনয় শিখিয়ে দেয় কীভাবে কোনো অভিনেতাকে চরিত্র হয়ে উঠতে হয়।
নাটকের আলোক পরিকল্পনা ও প্রক্ষেপণে সম্রাট সরকার ও সহায়তায় রূপ সরকার। নির্দেশিকার মঞ্চভাবনাকে সাফল্যের সাথে রূপদান করেছেন সম্রাট সরকার, তন্ময় মণ্ডল, প্রীতি সাঁতরা, কোমল দাস, সুরাজ পোদ্দার, দিশা মণ্ডল। স্বপ্নলতাকে সাজিয়েছেন রূপশিল্পী তনিমা মুখার্জী। পোশাকে রেণু দাস।
কন্যাভ্রণ হত্যাবিরোধী এই নাটক আরো দিকে দিকে অভিনীত হোক। এই নাটক দেখে যদি একটিও স্বপ্নলতার স্বপ্ন পূর্ণতা পায় তবে সেটাই এই নাটকের সাফল্য।