ট্রাম্পের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে আটলান্টিক পাড়ি দিল ইরানি ট্যাংকার

ভেনেজুয়েলার জলসীমায় স্বাগত জানানো হচ্ছে ইরানি ট্যাংকারকে

সাইফুল্লা লস্কর : আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় বেহাল দুটি দেশ। ইরান এবং ভেনেজুয়েলা। একটি দক্ষিণ আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক অন্যটি মধ্য প্রাচ্যের ইসলামী গণতান্ত্রিক দেশ। দুটো দেশেরই সাধারণ শত্রু আমেরিকা। ভেনেজুয়েলার বিপদের দিনে এশিয়ায় করোনার অন্যতম প্রথম কেন্দ্রস্থল ইরান তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
করোনার আঘাতে মারাত্মক জখম আমেরিকার কঠোর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রবল জ্বালানি সংকটে ভুগতে থাকা ভেনেজুয়েলায় পাঁচটি জ্বালানি ভর্তি ট্যাংকার পাঠিয়েছে ইরান। যার প্রথমটি ১০ ই মে তারিখে ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে নোঙর করেছে। ইরান পাঁচটি ট্যাংকারে মোট ১৫ লক্ষ ব্যারেল জ্বালানি সরবরাহ করবে বলে জানা গিয়েছে। তবে এই জ্বালানি সাধারণ মানুষের কাছে কতটা পৌঁছবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। দেশটিতে তেলের জন্য মানুষকে কয়েকদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় পেট্রোল পাম্প গুলোতে। ডাক্টার নার্স সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ কর্মস্থলে যেতে প্রবল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। এই পাঁচটি ট্যাংকারে দেয়া জ্বালানিতে প্রায় ৫৫ লক্ষ গাড়ি থাকা দেশটির খুব বেশি হলে ১৫ দিনের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে পারবে। এক কালে পৃথিবীর বৃহত্তম তেলশোধনাগার ছিল ভেনেজুয়েলায়। তাদের জ্বালানি উৎপাদন আবার যাতে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে তাতে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইরান। জ্বালানির সঙ্গে তেলশোধনাগারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও সেখানে পাঠাচ্ছে ইরান।

ইরানি জাহাজগুলোর ওপর আমেরিকার হামলা চালানোর শঙ্কা থাকলেও তেমন কিছুই ঘটেনি। প্রথম ট্যাংকার পৌঁছানোর পর দেশটির রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরো ইরানের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন দেশ দুটোর বিরুদ্ধে কি ব্যাবস্থা গ্রহণ করা যায় তা আমরা খতিয়ে দেখছি।

পৃথিবীর সব থেকে বেশি প্রাকৃতিক তেলের ভান্ডার ভেনেজুয়েলা এখন অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজের সক্ষমতার মাত্র ১০ শতাংশ তেল উত্তোলন করতে পারে। এক সময়ে সমাজতন্ত্রের স্বর্গ বলে খ্যাত দেশটির সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক দেশটির জনপ্রিয় নেতা হুগো শ্যাভেজের সময় থেকে। ইরান ভেনেজুয়েলায় গত শতাব্দীতে সিমেন্ট এবং গাড়ি নির্মাণ কারখানা স্থাপন করলেও বহু দিন আগে নানা প্রতিকূলতার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।

পুঁজিবাদ বিরোধী দেশটির রাষ্ট্রপতি নিকোলাস
মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগ এনে তাকে গ্রেফতারের জন্য দেড় কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে আমেরিকা। আমেরিকা সমাজতান্ত্রিক দেশটিতে মাদূরোর বিরোধী মার্কিন মনোনীত প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসাতে চায়। যার ফলে তৈরি হয়েছে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা।
সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় করোনার প্রভাব সামলে ওঠা ইরান এখন লকডাউন শিথিল করে মসজিদ গুলোও খুলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার থেকে করোনা মোকাবিলায় ৫০০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েও অমানবিক মার্কিন বিরোধিতায় তা পায়নি ইরান, তা সত্বেও ইরানে করোনায় মৃত্যুর হার খুবই কম বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশ গুলোর তুলনায়। দেড় লাখের কিছু বেশি আক্রান্তের বিপরীতে মৃত্যু হয়েছে সাড়ে সাত হাজার মানুষের। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মুসলিম বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা ইরান আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা না থাকলে যে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হয়ে উঠবে তা মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এখন পশ্চিম গোলার্ধে আমেরিকার নাকের ডগায় ইরানের প্রভাব বিস্তারের এটা একটা প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে অনেকে। মার্কিন বিরোধিতা সত্বেও তারা ভেনেজু়েলাকে আরো জ্বালানি সংগ্রহ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছে ইরান। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর প্রবল অসহযোগিতা সত্বেও নিজের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ইরান।

Back To Top