জর্জ ফ্লয়েড এবং কেরালার হাতীর মৃত্যুতে আহত এবং সমব্যাথী ভারতবাসী মুসলমানদের মব লিঞ্চিংয়ের ব্যাপারে নিরব থাকে কেন ?

সাইফুল্লা লস্কর : আমেরিকার মিনিয়াপলিস শহরে পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল আমেরিকা সহ গোটা বিশ্ব। ভারত ও এর ব্যাতিক্রম নয়। বিভিন্ন সেলিব্রিটি থেকে জনপ্রতিনিধিরা সবাই প্রতিবাদ জানিয়েছেন এই বর্ণ বৈষম্যমূলক ঘটনার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে কেরালায় এক গর্ভবতী হাতীকে হত্যার ঘটনাও ভারতীয় জনমানসে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। কেরালার মালাপ্পাপুরমে কিছু চোরা চালানকারি নিরীহ হাতিটির শরীরে বিস্ফোরক প্রবেশ করিয়ে তাকে হত্যা করেছে বলে জানা গিয়েছে। অমানবিক এই ঘটনা ইতিমধ্যে প্রবল নাড়া দিয়েছে দেশের সাধারণ মানুষের বিবেককে।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা টুইট করে নিরীহ প্রাণীটির এই পাশবিক হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। টুইট করেছেন রতন টাটা এবং বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

এই বিশ্ব সংসারে সব থেকে অগ্রগামী উন্নত এবং শ্রেষ্ট প্রাণীটি হলো মানুষ। গত ৬ বছর ধরে ভারতে সাধারণ মানুষ মব লিঞ্চিংয়ের মত ঘৃণ্য সামাজিক অপরাধের স্বীকার হয়ে প্রাণ দিয়েছেন শুধু তাদের বিশেষ ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে। প্রশ্ন উঠছে বর্ণ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে প্রথম সারিতে থাকা ভারতীয়রা কেন নিরব থাকে সাধারণ মুসলমানদের মৃত্যুতে? কেন তাদের বিবেক নিরীহ হাতীর মৃত্যুতে জেগে উঠলেও জেগে ওঠেনা সৃষ্টির সেটা জীব মানুষের অমানবিক পাশবিক হত্যাকাণ্ডে? কেনো এখনও মুসলিম হত্যার প্রতিবাদ করাকে অপরাধ মনে করা হয় সভ্য ভারতে? কেন এই মানবতা প্রেমী সেলিব্রিটিদের টুইট করতে দেখা যায়না মুসলিম হত্যার দোষীদের শাস্তির দাবিতে? বর্ণ বৈষম্যের কারণে ফ্লয়েড হত্যায় আহত ভারতবাসী কি মনে করে ধর্ম বৈষম্যের কারণে হত্যা করা বৈধ এবং মানবিক? নাকি এটা শুধু মুসলমান হত্যার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য?
রয়টার্সের এক রিপোর্টে জানা গিয়েছে ভারত বর্ষে ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মোট ৩ টি মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনা সনে আসে কিন্তু তাতে কোনো প্রাণহানি হয়নী। ২০১৪ তে গেরুয়া ধ্বজাধারী মোদী সরকার মসনদে বসার পর থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মোট ৭৮ টি মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনা সামনে এসেছে এবং এতে মৃত্যু হয়েছে ২৮ জন নিরীহ মানুষের যার মধ্যে ২৪ জন মুসলমান। আহত হয়েছেন ১০৭ জন মানুষ যাদের প্রায় সবাই মুসলমান
নিত্যদিন মুসলমানদের হত্যা দেখে দেখে এখন আমাদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে কিন্তু প্রশ্ন ওঠে অন্য সবার মৃত্যুতে সমব্যাথী ভারতবাসী ভারতীয় মুসলমানদের ব্যাথা অনুভব করতে এত কুণ্ঠা বোধ করে কেন? ভারতের ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতিটা পরতে পরতে মুসলমানদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, লেখা আছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসংখ্য মুসলমানদের বলিদানের ঘটনা। তাহলে কেন মুসলমানদের ব্যাথার ভাগ নিতে এত ইতস্তত করে ভারতবাসি? কতদিন এই দ্বিমুখী মানবপ্রেম দেখিয়ে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় গোপন রাখা যাবে? মুসলমানরা কি মানুষ নয় নাকি তাদের ব্যাথা ভাগ করে নেয়া বর্তমান ভারতে পাপ? প্রশ্নের উত্তর করো জানা নেই। বিদেশি মিডিয়া এইসব ব্যাপারে কথা বললে তখনও আমরা লজ্জা বোধের পরিবর্তে তাদেরকে ভুল প্রমাণ করতে মিথ্যা যুক্তির আশ্রয় নিয় অথবা তাদের ভুল খুঁজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ি। এটাই কি মানব প্রেম নাকি জীব প্রেম ? যদি হয় তাহলে এই প্রেমের সংজ্ঞা কি ?

Back To Top