জ্বলন্ত এক সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার নাটক সহজিয়ার “র‍্যাটরেস”

নানা সামাজিক সমস্যার প্রতিবাদে নাটককে হাতিয়ার করে বারবার গর্জে উঠেছে বাগুইআটি সহজিয়া নাট্যসংস্থা।

এবারে তাদের নাটকের বিষয় “র‍্যাটরেস” বা ইঁদুর দৌড় — যা সত্যিই এক সামাজিক ব্যাধি।

নতুন বছরের শুরুতেই পরপর দু’দিন —- ৮ জানুয়ারি ২০২১ ও ৯ জানুয়ারি ২০২১ যথাক্রমে মুক্ত অঙ্গন রঙ্গালয়ে ও থিয়ে এপেক্সে অভিনীত হল বাগুইআটি সহজিয়া নাট্যসংস্থা-র প্রযোজনায় একটি সফল নাটক “র‍্যাটরেস”।

একদিকে আত্মীয় বন্ধুদের প্রতিবেশিদের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় নামে তাদের হারিয়ে জেতার প্রবল আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে ক্রমশ সংকোচিত হয়ে আসা জীবনধারণের উপায় — এই দুইয়ের যাঁতাকলে বিভ্রান্ত অভিভাবক-অভিভাবিকারা ক্রমশই তাদের সন্তানদের ঠেলে দিচ্ছেন ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতায়।

নাট্যকার শ্রী প্রশান্ত সেন সামাজিক এই ব্যাধিটিকে মোকাবিলা করার জন্য কোনো রূপকের আশ্রয় না নিয়ে সোজাস সহজ আঙ্গিকে অভিভাবকদের mass counciling করেছেন। তাই নাটকের নামকরণটিও খুবই সরল ও স্বাভাবিক। “র‍্যাটরেস”।

“গঙ্গা ফড়িং ধরেনি সে খেলেনি ফুটবল
ছুটছে শুধু রেসের ইঁদুর সামনে খুড়োর কল
শৈশব তার আগেই গেছে যায় চলে কৈশোর
যাচ্ছে যাক-না অত ভাবনার সময়টা কই তোর?
মনে রাখিস জিততে হবে জীবনের র‍্যাটরেস
প্রথম তোকে হতেই হবে নইলে যে সব শেষ!”

নাট্যকারের লেখা এই গানের সুরে, তনিমা মুখার্জীর কণ্ঠ ও নৃত্য পরিচালনায় মহুয়া সরকারের নাচের তালে শুরু হয় নাটকটি।

পার্কে শুকনো আবসাদগ্রস্থ মুখে বসে আছে জয়। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে পার্কে বসে থাকা তার আঁকার স্কুলের সহপাঠী জয়কে দেখতে পায় পারমিতা। কথায় কথায় পারমিতা জানতে পারে জয় সেই সকলে স্কুলে রেজাল্ট জানার পর থেকেই এ পার্কে বসে আছে, আশানুরূপ ফল না করায়। এও জানতে পারে যে সে সকাল থেকে কিছুটা খায়নি। নিজের না-খাওয়া টিফিন বক্স থেকে টিফিন বের করে জয়কে খাইয়ে দেয় পারমিতা।

নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে দেখা যায় জীবন ও সরমা, অর্থাৎ জয়ের ভাবা ও মা ছেলের দুশ্চিন্তায় চিন্তাগ্রস্থ। ঠিক এমন সময় তার মেয়ে রিয়ার ভালো রেজাল্টের খবর দিতে মিষ্টি হাতে মেয়েকে নিয়ে প্রবেশ করেন অনুপমা। তাঁর চলে যাওয়ার পর প্রবেশ করেন তৎকালীন পুলিশের ইন্ফর্মার তথা এখন পেশাগতভাবে জমি-বাড়ির দালাল কেদার বাড়ুজ্জে। এরফর প্রবেশ করে ঝিলপাড় থানার ওসি অনীশ সেন। জয় সম্পর্কে কি কিছু সংবাদ শোনাতে আসেন তিনি? কী সেই সংবাদ? আসলে কে এই অনীশ? সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়ে শেষ হয় বাগুইআটি সহজিয়া নাট্যসংস্থা-র অত্যন্ত সফল এক প্রযোজনা “র‍্যাটরেস”। কিন্তু “র‍্যাটরেস” কি সত্যি শেষ হবার?

কলাকুশলীদের সাবলীল বলিষ্ঠ অভিনয়ে সফলভাবে উত্তীর্ণ বাগুইআটি সহজিয়ার “র‍্যাটরেস”। পারমিতা চরিত্রে কৃত্তিকা বোস, জয় চরিত্রে সম্রাট সরকার, জীবন চরিত্রে ঋত্বিক ভট্টাচার্য্য, সরমা চরিত্রে তনিমা মুখার্জী ও রিয়া চরিত্রে প্রীতি সাঁতরা নজর কেড়েছেন দর্শকদের। তবে প্রশংসনীয় অভিনয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন অনুপমার ভূমিকায় অর্ণিশা সেন, কেদারের চরিত্রে রবীন চক্রবর্তী এবং অনীশ সেনের ভূমিকায় নাটকের নাট্যকার ও পরিচালক শ্রী প্রশান্ত সেন। নৃত্যাংশে মহুয়া সরকার অনবদ্য। নৃত্য পরিকল্পনা করেছেন তনিমা মুখার্জী। এই নাটকের আলোক প্রক্ষেপণ করেছে রূপ সরকার। আবহ পরিকল্পনায় অর্ণিশা সেন ও নিয়ন্ত্রণে ঋতিকা ঘোষ প্রশংসনীয়। নাটকের রূপসজ্জায় তনিমা মুখার্জী ও মহুয়া সরকার। নাটকে ব্যবহৃত ক্যানভাসের চিত্রকর পীযূষ গায়েন। মঞ্চসজ্জা ও আনুষাঙ্গিক সহায়তায় তন্ময় মণ্ডল, রেণু দাস ও গৌরব শর্মা।

বাগুইআটি সহজিয়া নাট্যসংস্হা প্রযোজিত এই নাটকটি আরো আরো বেশি মঞ্চস্থ হোক, আরো আরো বেশি করে আঘাত হানুক অভিভাবকদের অনর্থক প্রতিদ্বনদিতামূলক চেতনায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top