স্বাধীন ভারতে কেমন আছে মুসলিমরা

~ফরিদ আলম

সাচার কমিটির রিপোর্ট

সারণি-১
চাকরিপদ মোট সংখ্যা মুসলমানদের সংখ্যা মুসলমানদের শতকরা হার
আই.এ.এস ৩৮৮৩ ১১৬ ২.৯৯
আই.পি.এস ১৭৫৩ ৫০ ২.৮৫
ইনকাম ট্যাক্স ৮৮১ ২৭ ৩.৬
রেলওয়ে ট্রাফিক ও অ্যাকাউন্ট ৪১৫ ১১ ২.৬৫
ব্যাঙ্ক অজানা ২৪৭৯ ২.১৮

এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে স্বাধীনতার পর থেকে মুসলিমদের সাথে শুধু শোষণ হয়েছে। তাদের অবস্থার একটুও উন্নতি হয়নি বরং মহা অবনতি হয়েছে। আরেকটা ব্যাপার বলি, মুসলিমদের আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে ইন্দিরা গান্ধী ১৯৮০ সালে গোপালকৃষ্ণ কমিশন নিয়োগ করেন। এই কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী মুসলিমরা শুধু বেকার নয়, কিছু কিছু এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ তাদের নাম নথিভুক্ত করতেও অস্বীকার করে। এই রিপোর্টে আরও বলা হয় আশির দশকে মুসলিম আইএএস অফিসারের হার ছিল মাত্র ৩.২৭ শতাংশ, আইপিএস অফিসারের হার মাত্র ২.৭ শতাংশ এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে তাদের হার মাত্র ১.৫৬ শতাংশ। এমনকি রাজ্য স্তরের চাকরিতেও মুসলিমদের হার মাত্র ৬.০১ শতাংশ। অথচ এই রিপোর্ট প্রকাশের ৩০ বছর পরেও মুসলিমদের অবস্থা একই রয়েগেছে। কোন উন্নতি হয়নি। সরকার কোন ব্যাবস্থা নেয়নি।

আরো কয়েকটি ব্যাপার জানুন, ১৯৭১ সালের তালুকদার কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারে ২৬৪ জন আইএএস অফিসারের মধ্যে মাত্র ২ জন মুসলিম। গোপালকৃষ্ণ রিপোর্ট অনুযায়ী, উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা বিশিষ্ট তিন রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও বিহারের ক্লাস ওয়ান সেক্টরের অফিসারের মধ্যে একজনও মুসলিম নেই। সর্বভারতীয় মোট ২২৩২ জন ক্লাস ওয়ান অফিসারের মধ্যেও মাত্র ৩৬ জন মুসলিম। এর ২২ জনই কেরালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। উল্লেখ্য, কেরালাতে অনেক মুসলিম আছে। ভারতের সবথেকে শিক্ষিত, স্বচ্ছল, ক্ষমতাশালী মুসলিম কেরালায় রয়েছে। রাজ্যগুলিতে মুসলিমদের জনসংখ্যা ও চাকরির হার সারণি ……

সারণি-২

রাজ্য মুসলিম জনসংখ্যা (শতাংশ) চাকরির হার (শতাংশ)
পশ্চিমবঙ্গ ২৫.৬২ ২.১
কেরালা ২৪.৭ ১০.৪
উত্তর প্রদেশ ১৮.৫ ৫-৫.১
বিহার ১৬.৫ ৭.৬
অসম ৩০.৯ ১১.২
ঝাড়খণ্ড ১৩.৮ ৬.৭
কর্ণাটক ১২.২ ৮.৫
দিল্লি ১১.৭ ৩.২
মহারাষ্ট্র ১০.৬ ৪.৪

 

পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে মুসলিমদের সংখ্যার অনুপাতে চাকরিতে তাদের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। বার বার কমিশন গঠন করা হয়েছে, কমিশন রিপোর্ট দিয়েছে। সুপারিশও করেছে। কিন্তু সরকার কোন রকমের উদ্যোগ নেয়নি। তাই মুসলিমদের অবস্থার উন্নতিও হয়নি। মুসলিমদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে, হচ্ছে, হয়ে চলেছে।

দরিদ্র ও ভূমিহীন মুসলিম

ভারতে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন ৩২ শতাংশ মানুষ। যাদের পরিবারের লোকেদের মাথা পিছু খরচ ২৬ টাকার কম তাদেরকে দারিদ্রসীমার নিচে বলে ধরা হয়। স্বাধীন হওয়ার ৬০ বছর পরেও একটি দেশের ৩২ শতাংশ মানুষের দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস নিঃসন্দেহে লজ্জাকর। কিন্তু তার থেকেও লজ্জার ব্যাপার হল সেই দেশের একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের ৪৯.৯ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। হ্যাঁ আমি মুসলমানদের কথা বলছি। সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের ৪৯.৯ শতাংশ মুসলিম দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। যা জাতীয় গড়ের থেকে অনেক বেশি। এটা একটা ধর্মনিরেপেক্ষ দেশের জন্য খুবই লজ্জার। প্রশ্ন ওঠে ভারতকি সত্যিই ধর্মনিরপেক্ষ দেশ?

দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মুসলিমদের বিপিএল অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি। অথচ সারা দেশে প্রায় ২৭ শতাংশ দরিদ্রদের সেই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা অতিরিক্ত রেশন, কমদামে খাদ্যদ্রব্য, বিনা খরচে বিদ্যুৎও পান না। গ্রামীণ মুসলিমদের ৬০ শতাংশ ভূমিহীন। ভিটেমাটি ছাড়া চাসবাস করার জন্য কোনও জমি নেই। অথচ ১৯৫০ সালের সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী জমিদারী প্রথা বিলোপ করা হয়েছিল এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সম্পত্তি ছেড়ে, অতিরিক্ত জমি সরকার গরিবদের মধ্যে বেটে দেয়। তাহলে মুসলমানরা কি এই জমি থেকে বঞ্চিত হয়েছিল? তাদের কোনও জমি দেওয়া হয়নি? কেন আজ ৬০ শতাংশ মুসলিম ভূমিহীন? সরকারের কাছে এইসব প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই। সারণি – ৩।

সারণি-৩

অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে দারিদ্র (শতাংশ হিসাবে)
সম্প্রদায় শহর গ্রাম
তপশিলি জাতি ৩৬.৪ ৩৪.৮
হিন্দু ৮.৩ ৯.০

দেখা যাচ্ছে তপশিলি বাদ দিলে সবাই সুখেই আছে। দারিদ্রের ছোবল থেকে বেঁচে আছে। অথচ মুসলিমরা দারিদ্রের দংশনে কাতরালেও চিকিৎসার কোনও ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি। অবাক করা ব্যাপার হল দেশের ৪০ শতাংশ মুসলমান প্রধান গ্রামে কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রও নেই। ফ্রিতে চিকিৎসা পাওয়াতো দুরের কথা।

বিচার বিভাগ, লোকসভা ও রাজ্যসভাতে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। এসব বিষয় নিয়েও লেখা যায়, কিছু তথ্য দেওয়া যায়। কিন্তু এগুলো ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই শিক্ষা, চাকরি এবং দারিদ্র্যতার কথাই শুধু লিখলাম। লিখতে গিয়ে বারবার মন খারাপ হয়েছে। মনে হচ্ছে ধুর ছাড়, এসব লিখে কি হবে? শুধু মনের কষ্টই বাড়বে।

 

(সাপ্তাহিক দুনিয়া বাংলা ও দিনকাল ডট ইন যৌথ প্রকাশনা)

Back To Top