করোনাঃ ভারত শোধরাল নাকি বিগড়াল?

এ র সা দ মি র্জা

রাজধানীতে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়, ঘরে ফেরার অপেক্ষায়

মাস ছয়েক আগে যা মানুষের দূর কল্পনাতেও ছিল না এখন তা একেবারে ঘটমান বর্তমান। দেশ বিদেশের অলিগলি থেকে রাজপথগুলো সবেতেই এক বিচিত্র স্তব্ধতা বিরাজ করছে। জ্ঞান বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তি শক্তিতে বলীয়ান রাষ্ট্রশাসকের দাম্ভিক ও রক্তপিপাষু হাত আজ নিবৃত্ত হত্যালীলা থেকে। সিরিয়া ক্ষান্ত নিরীহ মানুষের উপর রোমহর্ষক ও অমানুষিক বোমাবর্ষণ থেকে। ইজরাইল বিরত বিধিবিরূদ্ধ ফিলিস্তিন হানা থেকে। ইরান নিরস্ত যাবতীয় কলহ থেকে। আমেরিকা ব্যস্ত নিজেকে বাঁচাতে। চীন ব্যাপৃত নিজেকে গোছাতে। আর ইংল্যান্ড তো ভুলতে বসেছে পূর্ব-রাষ্ট্র-শাসনের ইতিহাস। আইএসআই লুকিয়ে গেছে, বাকি সন্ত্রাসীরাও পিছিয়ে গেছে দুনিয়া কাঁপানোর নীতি থেকে। শাসন নয় শোষণও নয়; এখন তোষণনীতিতে সকলে মিলিয়েছে সুর। কেউ কারো উপরেও নয়; সবার হাত প্রসারিত একে অপরের দিকে। মানুষ বদলেছে, শাসনও বদলেছে আর বদলেছে পৃথিবীর রূপ। পৃথিবী নিস্তব্ধ হয়ে গেছে, হয়ে গেছে কল্পনাতীত শান্তও। পৃথিবী শিক্ষা নিয়েছে। জীবনমুখি হয়েছে মানুষ। এ মহা বিচিত্র পৃথিবীর রূপ আগে কখনো দেখা যায়নি। করোনা ভাইরাস নিরবে নিভৃতে এমন এক বিচিত্র পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করিয়েছে বিশ্বমানবতাকে।

করোনা-র থাবা পড়তেই সকলে শিক্ষা নিয়েছে; বদলে ফেলেছে নিজের চিরাচরিত রণকৌশল। কিন্তু, বিশ্ব-মাতার ‘দুষ্টু-সন্তান’ভারত কি কোনো শিক্ষা নিয়েছে? বদলেছে নিজ নীতি? ভেবেছে কোনো কার্যক্ষম ভাবনা? নিয়েছে কোনো মানবতাপন্থী উদ্যোগ? হয়েছে প্রায়শ্চিত্তে আগ্রহী? নাকি এখনও নিজ জাত চেনাতে ব্যস্ত?

না। বিশ্বমানবতা কেঁপে ওঠলেও, প্রযুক্তি-পরমাণু শক্তিতে বলীয়ান রাষ্ট্রসমুহ পিছে হটলেও, রক্তপিপাষুরা ক্ষান্ত হলেও হতে পারে কিন্তু, ভারতের কেঁপে ওঠা, পিছু হটা ও ক্ষান্ত হবার প্রশ্নই ওঠেনা। যারা কেঁপে ওঠেছে, পিছু হটেছে বা ক্ষান্ত হয়েছে তারা তো দিশেহারা, তারা তো ব্যর্থ দুঃসময়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে। প্রকৃতপক্ষে, তারা ভয় পেয়ে গেছে; মৃত্যুর ভয়। কিন্তু ভারত? সে তো সেরা। কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সে অদ্বিতীয়। একের পর এক তার ‘নোংরা ঝলক’ সে পেশ করেও চলেছে। আর মৃত্যু-ভয়! সেটা আবার কি? যে দেশ সাম্প্রদায়িক-বৈষম্য, চৌর্যকার্য, নারীর সতীত্বনাশ ও নোংরা রাজনীতির মতো ‘রক্ষাকবচ’- এর অধিপতি তার আবার মৃত্যুর ভয় কিসের?

হ্যাঁ, ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য যে, এই মহামারির সময়েও ভারত তার জাত চেনাতে এক কদম পিছপা নয়। করোনা-র থাবা তাকে শোধরাতে পারেনি বরং করোনা-কেই এখন সে হাতিয়ার বানিয়েছে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াতে, চৌর্যকার্য ও নারীর সতীত্ব হরণে উৎসাহ দানে এবং মানুষের জীবন নিয়ে নোংরা রাজনীতি খেলতে।

এবার এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক, এই কঠিন মহামারির সময়েও ভারত কিভাবে তার নোংরা মিশনে অটল রয়েছে-

১• সাম্প্রদায়িক-বৈষম্য:

মহারাষ্ট্রের পালঘরে মোব লিঞ্চিং এর স্বীকার দুই সাধু

ভারতীয় সংবিধানে সকল ভারতবাসীর মধ্যে ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের নিশ্চয়তা প্রদান করা হলেও আদতে তার সঠিক বাস্তবায়ন কখনো হয়নি। ন্যায় ও সমতার ক্ষেত্রে অহরহ যেমন দ্বন্দ্ব-কলহ দেখা গেছে ঠিক তেমনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় ভিড়ের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে অসংখ্য ভারত মায়ের সন্তানকে। সংবিধানের পাতায়‘ধর্মনিরপেক্ষ’বড় স্থান লাভ করলেও বাস্তবে, প্রতিনিয়ত পদপিষ্টে তার রক্তক্ষরণ করা হয়েছে। ধুলোয় বিলীন করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। শ্বাসরোধ করার প্রয়াস করা হয়েছে।

সাম্প্রদায়িকতার আবহে দেশ সর্বদা উত্তপ্ত রয়েছে, যার ব্যতিক্রম এই মহামারির সময়েও ঘটেনি। সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত বীজ উচ্চ থেকে নিম্ন সর্ব স্তরের জনমানসে প্রবেশ করানোর। দেশের আকাশে বাতাসে ধুলিকণার ন্যায় ছড়িয়ে পড়েছে এখন সে বিষ।

পুরো বিশ্বের ন্যায় সকলে হাতে হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে সচেষ্ট হয়েছিল ভারত। কিন্তু, এটা বোধ হয় তার নৈতিকতার চরম বিরোধী, আর হবেই না বা কেন? নিজ ব্যর্থতা সবার নজর আকৃষ্ট করেছিল যে; তাই এহেন গুরুতর পরিস্থিতিতেও সাম্প্রদায়িকতার বিষ উগলাতে দ্বিধা করল না। কামড় কাকে দেওয়া যায় ভাবতেও সময় নষ্ট হল না, পরিকল্পনা আগেই কষা ছিল; নিদারুণভাবে ঘরের পাশে অসহায় আটকে পড়া মুসলিম ‘তাবলীগ জামাত’শিকার হল।

ক্ষুধার্ত হায়েনার দল (মিডিয়া) ছো পেতে ছিল অসৎ সুযোগের, সরকারী টোপ পেতেই; মুহুর্তে দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিল ‘করোনা জিহাদ’হ্যাশট্যাগ দিয়ে। সোজা তির- ‘ভারতে করোনা প্রসারণ মুসলিমদের সৌজন্যে’।

পারফেক্ট শট! সরকার কি করছে করোনা মোকাবিলায়? শুধু লকডাউন? মানুষের জন্য বরাদ্দ কি? পরিযায়ী শ্রমিকদের কি হবে? স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কি হাল? প্রতিষেধক কিটের পর্যাপ্ততার কি খবর? প্রভৃতি ভারতবাসীর মনে দানা বাঁধা নানান প্রশ্ন নিমেষে গতিমুখ বদল করল, ফিকে পড়ে গেল; মুসলিম দেহে তির লাগতেই।

উলঙ্গ রাজার দেশ! ঘটনার সত্যতা সবার কাছে আয়নার মতো পরিষ্কার কিন্তু, ‘বাপের ছোড়া তির’লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও তালি তো বানতা হ্যায়।১৩-১৫ ই মার্চ তাবলীগ জামাতের সভা চলাকালীন দেশের স্বাস্থ্য দপ্তর সাফ জানাই- ভারত সঙ্কটময় পরিস্থিতি মুক্ত। বিদেশীরা উক্ত সভায় তাই তো উপস্থিত হবার ছাড়পত্র পাই খোদ ভারত সরকার দ্বারাই। আর যাদের দিকে আঙুল তোলা হয়েছিল করোনা আক্রান্ত বলে, পরক্ষণে তাদের নেগেটিভ বলেই ছাড় দেয় খোদ দেশেরই হাসপাতাল।

আটকে পড়া মানুষদের বারংবার উদ্ধারের ফরিয়াদ সেদিন উপেক্ষিত হয়েছে, উল্টে ‘লুকিয়ে থাকার’অপবাদ গায়ে মেখে দেশের চোখে তারা অপরাধী। পরিযায়ী শ্রমিক ঘরে ফেরার তাড়নায় যারা জমায়েত হল বান্দ্রায়, হায়েনার দল সেটাকেও ‘মসজিদে মোল্লা’হ্যাশট্যাগ দিয়ে ছড়িয়ে ফেলল।কিন্তু, জয়রাম-দের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন লোকেরা শত শত মানুষের ভিড় জমিয়ে মহানন্দে জন্মদিন পালন করে বেমালুম ছাড় পেয়ে যায়, কারণ সে ‘বাপের’দলের প্রতিনিধি। সিদ্ধালিঙ্গেশ্বর মেলায় দিনদুপুরে হাজারো মানুষ, এই কঠিন সময়েও, ভিড় জমিয়ে খবরে আসেনা, হায়েনাদের চোখে পড়ে না; কারণ তারা নিজেদের অবুঝ বালক!

সাম্প্রদায়িকতাই হাতিয়ার, একে আঁকড়ে এগিয়ে যেতে হবে। পরিকল্পনা বদল করতে হবে, নতুন ফন্দি আঁটতে হবে। ব্যাস, মুসলিম সেজে পুলিশের গায়ে থুতু। কিন্তু কে জানে, মহেশ, অভিষেক ও শ্রীনিবাস সকলকে অবাক করে খোলস ছাড়বে!

ববিতা ও রঙ্গোলীরা তো আমাদের হয়ে বলছে। ওরা সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াবে কেন? কিন্তু, এজাজ খান, “সব কিছুতে মুসলিমদের দায়ী করার জন্য‘দায়ী ’কে?”বলার সাহস পাই কি করে? উস্কানিমূলক বক্তব্য এ কঠিন পরিস্থিতিতে বরদাস্ত করা হবে না। গারদের পিছনে!

ব্যাস, এবার ক্ষান্ত? এখনি কোথায়। এ মহা সুযোগ কাজে তো এখনো লাগেনি। হাত ছাড়া করা চলবে না। মনুবাদ বিরোধী সব মুখ বন্ধ চাই। গণ আন্দোলন, ধর্না ও বিক্ষোভ ছাড়াই। আর করোনা যেন আশীর্বাদস্বরূপ, সব আশা পূরণ করতে এসেছে। অধ্যাপক আনন্দ তেলতুম্বডেকে, গৌতম নওলাখা, গবেষক মীরন হায়দার ও সফুরা জারগর যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে, CAA, NRC ও NPR এর বিরুদ্ধে, সংবিধান বাঁচাতে ও মানুষের অধিকার আদায়ে আওয়াজ উঠিয়েছে সব ধীরে ধীরে গারদের পিছে।

২• চৌর্যকার্য:

যানবাহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে বাড়ির দিকে রওনা শ্রমিকদের

চৌর্যকার্য ভারতের ইতিহাসে নতুন ও আশ্চর্যের কিছু নয়। এটা পুরোনো গৌরব। ভারত যে সব সংস্কৃতির কেন্দ্র, এটা তার একটা।

হ্যাঁ, চৌর্যকার্য ভারতের অতি পুরোনো সংস্কৃতি। ভারতের সংস্কৃতি নিয়ে কথা হবে আর চৌর্যকার্যের উল্লেখ হবে না, এটা হয় না। আহমাদ আমীন সেই কবে ভারতের সংস্কৃতি নিয়ে বলতে গিয়ে যথার্থই উল্লেখ করেন, চোর ডাকাতের আখড়া এ দেশ।চৌর্যকার্য আদি ভারতের নেশা।

এই মহামারির সময়েও ভারত তার ছাপ ফেলে চলেছে। তালাবন্দি পুরো দেশ। গৃহবন্দি মানুষ। বন্ধ অফিস আদালত থেকে শুরু করে সব ধরনের কল কারখানা। বন্ধ কাজ। বন্ধ শ্রমিকের আয়ের পথ। বন্ধ হাজারো ঘরের উনুন। শুধু দেশ নয়, লক্ষ লক্ষ মানুষের পেটও এখন নিদারুণভাবে তালাবন্দি!

দেখার ছিল এই কঠিন সময়ে সরকার কি করে। জীবন-মরণের উত্তাল সাগরে টলমল যাত্রী বোঝায় নৌকার শক্ত হাতে হাল ধরে তরী পার করে নাকি অসহায় যাত্রীর মৃত্যু কামনা করে। মহামারির বিরুদ্ধে লড়ে জীবনযুদ্ধে সফল হবে কি তাদের জানা নেই, কিন্তু ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়ে নিশ্চিত যে হার হবে। তাই, দু’বেলা দুমুঠো খাবার চাই; এটুকুই বাসনা।

সরকারী তহবিল নয়, কোটি কোটি টাকা দেশের মানুষের অনুদান সত্ত্বেও কাজ হারা মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছাতে পারেনি। মাসিক কিছু বরাদ্দও হয়নি আর ভবিষ্যৎ কোনো আশ্বাসও দেওয়া হয়নি। তবে বিরাট বিরাট অনুদানের প্রয়োগ হচ্ছে কোথায়? যৎসামান্য রেশনিং ব্যবস্থা যা করা হয়েছে তার অর্ধেক তো আবার বড় বাবুদের উদরে যায়। আখের গোছার এটাও মহা সুযোগ, ভারত বিশ্বকে শেখাল!

৩• নারীর সতীত্ব হরণ:

ভারতের খবরে চোখ রাখবে আর শ্লীলতাহানি ও সতীত্বহরণের সংবাদ পাবে না, এ হতে পারে না। তাই তো, দিন দিন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে ভারত পশুসূলভ আচরণে শীর্ষে ধাবন করছে।

করোনা-র থাবা পড়তেই বিশ্ব সংযত করেছে নিজেকে যাবতীয় অন্যায়-অপরাধ থেকে। সচেষ্ট হয়েছে মনুষ্যত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে। ব্যাপৃত নিজেকে শুধরাতে, পাপ মোচন করতে, নতুন ভবিষ্যৎ গড়তে।

কিন্তু ভারত? অন্যায়-অপরাধ, বেইমানি-রাহাজানি ও সতীত্বনাশের আস্তানা ভারতের কি খবর? পেরেছে কি নিজেকে সংযত করতে? ছেড়েছে কি হরণ ক্রিয়া? তৈরী কি মনুষ্যত্বের পোষাক গায়ে চড়াতে? আগ্রহী কি নিজেকে শুধরাতে? নাকি অটল থাকবে নিজের অভিশপ্ত জাত চেনাতে?

না। ভারতের জন্য এসব প্রশ্ন করা বেকুবি। যা প্যাশন, যার জুনুন রক্তে রক্তে; তা ত্যাগ করা সমীচীন নহে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজ অবস্থান ধরে রাখাটাই অনন্যতা।

হ্যাঁ, বোধ হয় এ কারণেই, এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও ভোপালের পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যাংক কর্মকর্তা ও বিহারের নাবালিকার মতো অসংখ্য মা-বোনেদের মানুষরূপি পশুদের লালসার অহরহ শিকার হতে হচ্ছে।

৪• ভোটের রাজনীতি:

মানুষের ভোটে প্রতিনিধি চয়ন হবে, তাঁরা নীতি নির্ধারণ করবেন, আর তার ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হবে। গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতি বলতে এটাই বোঝায়। আব্রাহাম লিঙ্কন যথার্থই বলেছেন- Democracy is of the people, by the people, and for the people.

এ মহান রাজনীতির সিঁড়ি ধরে সমাজের বহু নগন্য ব্যাক্তির দেশ পরিচালনার মতো উচ্চ আসনে আসীন হওয়ার তো সৌভাগ্য হয়েছে, জীবনধারা পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু যাদের আঙুলের ছাপ তাদের তকদির বদলে দিল তাদের জীবন কখনও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি, নিরাপত্তা পায়নি, সহায়তা পায়নি।

এই করোনা-অতিমারিরর সময়েও কি সাধারণ মানুষ জীবন-নিরাপত্তা পেয়েছে? সহায়তা লাভ করেছে?

মহামারির ছবলে বিশ্ব উদ্বিগ্ন জনগণের জীবন-নিরাপত্তা বিষয়ে। কোমর কষেছে তাদের জান-মালের স্বার্থে। কিন্তু ভারত? ভোটের হিসেব কষতে ব্যস্ত।

দেশ জুড়ে ত্রাহি ত্রাহি রব কিন্তু সরকার মানুষের জীবন নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নয়। উপরন্তু, মহারাষ্ট্রের সরকার ফেলার নীল নকশা, মধ্যপ্রদেশে সরকার গড়ার ফন্দি ও আখের গোছানোর ধ্যানে মগ্ন।

হোক না সে, দিল্লির রাস্তায় স্ত্রী-পুত্র-কন্যার হাত ধরে সারা দিন সারা রাত পথ চলতে থাকা শ্রমিক। হোক না সে, বান্দ্রা স্টেশনে ভিড় জমানো দিশাহারা মানুষ। হোক না সে, ভিড়ের হাতে প্রাণ হারানো সন্ন্যাসী। হোক না সে, বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশি তান্ডবের শিকার। হোক, যা হবার হোক তাদের সাথে। আমি হাত গুটিয়েই বসে থাকব। কে ওরা? ওরা তো আমার ধর্মের না। আমার রাজ্যের না। আমার জাতের না। আমার ভোটার না। আমার কিছু যায় আসেও না!

হ্যাঁ। এই আমার বর্তমান দেশ, ভারত। এই কঠিন মহামারিতে বিশ্ব থমকে গেলেও সে থেমে নেই, ভোটের হিসেব মাথায় রেখে; সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত বীজ বপন করা হতে, নারীর সতীত্বনাশ করা হতে, জনগণের অধিকার খর্ব করা হতে ও মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হতে। করোনা বিশ্ব দরবারে প্রভাব ফেললেও ভারতের উপর পারেনি। বিশ্ব শুধরালেও ভারত শুধরায়নি বরং আরো বিগড়েছে।

Back To Top