দেলওয়ার হোসেন আহমেদঃ প্রথম মুসলিম গ্রাজ্যুয়েট

~মোহাম্মদ সাদউদ্দিন 

১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বি.এ ক্লাসের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। তাদের একজন মুসলিম ছাত্র ও ছিলেন যার নাম নবাব আব্দুল জব্বার। তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। গ্রাজ্যুয়েট হওয়ার আগে ১৮৫৯ সালেই বি.এ ক্লাসের ফাইনালের ছাত্র থাকাকালীন ব্রিটিশ সরকার তাকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট করেন। যাইহোক, মুসলিম সমাজে গ্রাজ্যুয়েটের জন্য আরও দু বছর অপেক্ষা করতে হয়। ১৮৬১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে যে মুসলিম ছাত্রটি বি.এ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে পাশ করেন তার নাম দেলওয়ার হোসেন আহমদ। আমরা তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। হুগলী জেলার দাদপুর থানা বাবনান গ্রাম। আর ওই গ্রামেই ১৮৪০ সালে  দেলওয়ার হোসেন আহমদ জন্ম গ্রহণ করেন। পূর্ব রেলের হাওড়া বর্ধমান কাউ লাইনের জেলার নবগ্রাম ষ্টেশনে নেমে খুব কাছেই বাবনান গ্রাম।এই গ্রামেই দেলওয়ারের পিতৃভূমি তাঁর প্রকৃত নাম ছিল আহমদ। তাঁর পুরো নাম দেলওয়ার হোসেন আহমদ। কলকাতা মাদ্রাসা কলেজ থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে ১৮৫৮ সালে সিনিয়র স্কলারশিপ পান। ১৮৬১ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে বি.এ পাশ করেন। তারপর হন আলিপুর কোর্টের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। পরে ১৮৯৫ সালে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব সাবরেজিস্ট্রেশন পদে উন্নীত হন। সে যুগে একজন বাঙালি মুসলমানের পক্ষে এটিই ছিল সর্বোচ্চ পদ। ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খানবাহাদুর’ উপাধি দেন। ১৯০০ সালে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এই ফাঁকে সরকারই-বেসরকারী সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৮৮০ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য হন দেলওয়ার। ১৮৯৭ সালে সেন্ট্রাল টেক্সট বুক কমিটির-রও সদস্য হন। কলকাতা মহামেডান ইউনিয়নের সহ সভাপতি হন ১৯০৩ সালে। একই বছরে সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মহামেডান অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি হন। দেলওয়ার বাংলার ব্যবস্থাপক সভারও সদস্য হন ১৮৯৯ সালে।

একজন বড় মাপের ইংরেজি ভাষার পন্ডিত ছিলেন তিনি । ইংরেজি প্রবন্ধকার হিসাবে তাঁর যথেষ্ট সুনাম ছিল সেযুগে। প্রবন্ধকার হিসাবে তিনি যে মুক্ত মনের ও প্রসতিশীল চিন্তার অধিকারী চিলেন তা তাঁর প্রবন্ধ পড়লে পাঠক সমাজ সহজেই বুঝতে পারেন। একদিকে চিন্তাবীদ , অন্যদিকে সমাজকর্মী ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন তিনি। সেকালে পত্র-পত্রিকায় উচ্চমানের ইংরেজি প্রবন্ধ লিখে খুবই সাড়া ফেলে দেন। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের সংস্কারের পক্ষে ছিলেন। এর জন্য অনেক সময় তাকে বিতর্কের মধ্যে পড়তে হয়। রক্ষণশীলদের কাছে তিনি কিছুটা খারাপ হলেও সে যুগের সুশীল সমাজের কাছে তিনি যথেষ্ট সমাদৃত ছিলেন। ব্রিটিশ লেখক উইলফ্রেড কয়েন বলাট তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইন্ডিয়া আন্ডার বিরপন’ প্রাইভেট ডাইরী (১৯০৯) গ্রন্থে তাকে ‘সেন্সিবল ম্যান’ বলে অভিহিত করেন। ব্লান্ট ১৮৮০- ৮১ সালে কলকাতায় ছিলেন আর তখনই দেলওয়ার হোসেন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল । সে সময় দেলওয়ার ব্লান্টের কাছে বাংলার মুসলিমদের দারিদ্রের তুলে ধরেন । মোট কথা দেলওয়ার ছিলেন উচ্চ বোধশক্তি সম্পন্ন ওয়ালা গভীর জ্ঞানের অধিকারী। তিনি ছিলেন প্রকৃতই জ্ঞান সাধক। ১৯১২ সালে এই মহাজ্ঞানীর মৃত্যু হয়।

 

(মোহাম্মদ সাদউদ্দিন একাধারে সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিকm, কবি, জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেছেন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করে। এই লেখাটি তার সদ্য প্রকাশিত ‘দুই বঙ্গের স্মরণীয় মুসলমান’ বই থেকে অনুমতি সহকারে এখানে প্রকাশ করা হল। বইটি এখন কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা তে শিখা প্রকাশনী তে পাওয়া যাচ্ছে। বইমেলা হচ্ছে মোহরকুঞ্জ (রবীন্দ্রসদনের উল্টোদিকে)। ইচ্ছুক ব্যক্তিরা সংগ্রহ করতে পারেন।) 

Back To Top