বাংলাদেশের নির্বাচন, কিছু কথা কিছু প্রশ্ন

অর্ণব চৌধুরী, দিনকাল ডেস্কঃ সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন পর্ব সমাপ্ত হয়েছে। প্রত্যাশা মতো আওয়ামীলীগ নির্বাচনে জাতীয় সংসদে বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করেছে যা শুধু বাংলাদেশেই নয়, উপমহাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় আসবে আর কে আসবেনা, সেটা ঠিক করবে সে দেশে জনগণ কিংবা সেদেশের ভোটাররা ঠিক করবে। কিন্তু মনের মধ্যে কতকগুলি প্রশ্ন উঁকি মারে। কতকগুলি প্রশ্ন চিহ্নর মুখে আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয়। ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন সকাল ৯টায় হোয়াটসঅ্যাপ আর ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে জানতে পারলাম বাংলাদেশে ভোট-পর্ব শেষ। আরও অভিযোগ বেশির ভাগ মানুষ জানালেন তারা তাদের নিজের ভোটটি দিতে পারেননি। এক-একজন কম ৫০-৬০টি করে দিয়েছে। আবার কোথাও কোথাও এসেছে ব্যালট ভর্তি ব্যালট বক্স। নির্বাচনের ফলাফল দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচনে ৩০০ আসনের আওয়ামীলীগ মোট ২৮৮, বাকী বিএনপি জোট ও অন্যান্যরা মিলে ১২। সে দেশে প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনার আসনে বিরোধী প্রার্থী ভোট পাচ্ছেন মাত্র ১২৩। এই রকম অনেক আসনেই কিন্তু এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ভোটের এই ফলাফল কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে? এটাকে প্রহসন বলে মনে করতে পারে অতি বড় মূর্খও।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন ছিল বিএনপি জোট। সে সময় সেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। আন্দোলনের নামে তাণ্ডব চালিয়েছে। রাতারাতি ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর সেখ হাসিনা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তত্বাবধায়ক সরকারের মৃত্যু ঘণ্টা বাজানো হল কেন? কেন নির্বাচন কমিশনকে ভারতের মতো স্বশাসিত করা হল না । ভারত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করলে সমর্থন করেন। আর ভারতের গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিকে অনুসরণ করা হয় না? ভারতের গণতান্ত্রিক নিয়ম কানুনকে পদদলিত করা হয় কেন?

ইতিহাসটা বড় নির্মম । ইতিহাস কিন্তু কাউকে ছেড়ে দেয় না। সেনাবাহিনী-পুলিস – বিচার ব্যবস্থাকে বস করে নির্বাচনকে প্রহসন করে ক্ষমতায় আসা যায় ঠিক কথা, মানুষের ভিতরের তুষের আগুনটা নেভানো যাবে কি? সেখ মুজিব রক্ষী বাহিনী গড়েও রেহাই পাননি। আগামী দিনে বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু তুষের আগুনের মতো কিন্তু দাউদাউ করে জ্বলে উঠবে। সেখ- কামাল- জামাল- মনি সেরনিরাবতের ঠ্যাঙরে বাহিনী অত্যাচার, এরশাদের স্বৈরশাসন, পাকিস্তানিদের অত্যাচার সহ্য করেনি বাংলাদেশের মানুষ। সেখ হাসিনার প্রহসনমূলক গণতন্ত্রকে বাংলাদেশের মানুষ ধূলায় নিক্ষেপ করবে।

বাংলাদেশের মানুষ সেখ মুজিবরকে ‘বঙ্গবন্ধু’ বানিয়েছিল। পাকিস্তানিরা তার নক্ষত্র স্পর্শ করতে পারেনি। স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ তাকে নৃশংসভাবে খুন করেছিল। এটা কি শুধু কতিপয় জুনিয়র সেনা অফিসারের অভ্যুত্থান ? না, আওয়ামীলীগের একাংশ যুক্ত ছিল। ২০১৮-এর শেষ সপ্তাহের প্রহসনমূলক নির্বাচন বাংলাদেশের আমজনতা মানছে কি? না তারা ফুঁসছে গোপনে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কি গৃহযুদ্ধের পথে? হয়তো সময়ই সে কথার যথার্থ জবাব দেবে। শুধু একটু অপেক্ষা। আমরা তো দেখেছি, স্বৈরশাসক এরশাদের কী হয়েছিল সে দেশের অভ্যুত্থা্নের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর রক্ষী বাহিনী তাকে রক্ষা করতে পারেনি। সেনাবাহিনী বাঁচাতে পারেনি স্বৈরশাসক এরশাদকে।

Back To Top