এক যে ছিল ৫৬ ইঞ্চি

ভারত তার নামের জন্য না যতটা বিখ্যাত তার থেকে বেশি বিখ্যাত সেখানকার লোকেদের জন্য।

সেই ভারতে একজন লোক জন্মেছিল যার বুক নাকি চওড়া ছিল ৫৬ ইঞ্চি, অভিনয়ে সে সেই সময়ের বিখ্যাত লোকদেরকেও হার মানাত। যেমন শাহরুখ খান, আমির খান, অক্ষয় কুমার সলমান খান সহ অনেককেই, আরে সলমান খান কে  তো অনেকেই অভিনেতাই মানত না। তাদেরকেও পিছনে ফেলে দিয়েছিল এই অভিনেতা।

শুধু তাই নয়, এমনই ব্যক্তি যিনি নিজের অর্ধাঙ্গিনী কে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তিনিই আবার মুসলিম মেয়েদের অধিকার দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। মুসলিম মহিলাদের সব থেকে ভালো বিচ্ছেদের ব্যবস্থা সরিয়ে দিয়ে মুসলিম যুবকদের কে তিনি তার মত করে স্ত্রী দের বঞ্চিত করা শেখাতে চাইছেন হয়তো! যেখানে তালাক দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আর জেলেও যেতে হবে না, আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগও মিলতে পারে।

জন্মের দিক দিয়ে এই অভিনেতা ভারতের জনক মহাত্মা গান্ধির সমকক্ষ ছিল মানে গুজরাট নিবাসী ছিল এই ৫৬ ইঞ্চির মালিক।

সে এতটাই ক্ষমতাবান ছিল যে সে স্টেশনে চা বিক্রি করত কিন্তু সাধারণ মানুষ তার কাছ থেকে চা খাইনি বা তাকে চা বিক্রি করতে কখনো কেউ দেখেনি!

সে এতটাই গরিব ছিল যে চা বিক্রি করত অথচ তারপরে সে পড়তে দিল্লী চলে যায় এবং দিল্লী ইউনিভার্সিটি তে এন্টার পলিটিক্যাল সায়েস্ন বলে একটা কোর্স করেছে, সে এতটাই বিখ্যাত যে বিশেষভাবে এন্টার পলিটিক্যাল সায়েস্ন কোর্সটি তার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল।

শুধু তাই নয়, মহাত্মা গান্ধী কে হত্যা করা নাথুরাম গডসের সংগঠন আরএসএস নামে একটা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক ছিল। এরপর সে তার ৫৬ ইঞ্চি বুক নিয়ে গুজরাট নামক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হয় এবং তার আমলে গুজরাটে ৩০০০ মুসলমান কে হত্যা করা হয়েছিল, ইশরাত জাহান সহ আরো কয়েকজনের ভুয়ো এনকাউন্টার করা হয়েছিল।

এরপর অনেকদিন মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর উনার ইচ্ছা হল যে গুজরাট অনেক হল, এবার সারা ভারতের শাসক হব, সেই হিসেবে ২০১৪ সালের আগে থেকে সভায় সভায় গিয়ে বলতে থাকল মিত্রো আমাকে ভোট দাও, ১৫ লাখ টাকা করে তোমার ব্যাঙ্কের খাতায় জমা করে দেব।

এর আমরা তাকে ১৫ লাখ এর লোভে ভোট দিলাম, কিন্তু ১৫ লাখ তো পেলাম না, শেষে গাড়িতে পেট্রোল ভরতে গিয়ে যে ১৫ টাকা করে বেশি নিতে শুরু করল, ডাল কিনতে গিয়ে ৫০ টাকা করে নিতে লাগল।

অনেক কষ্ট করে ৪ টে ৫০০ টাকার নোট জমিয়ে রেখেছিলাম সেই ৪টে নোট নিয়ে একটা গোলাপী রঙের নোট দিল, সেটা একদিন কোন এক সাধু দোকানি ২০ টাকা বলে নিয়ে নিল!

আমি আর কি করব! ভাবলাম ১৫ লাখ সুইজারল্যান্ড থেকে আসছে, সেই আসায় থাকলাম, তারপর একদিন খবরে দেখলাম তিনি ১০ লাখ টাকা দামের কুর্তা পরেছেন! কিন্তু সে বলেছিল যে আমি তো ফকির, আমার আর কি আছে। ভাবলাম ১০ লাখী সুট আসল কিভাবে। আবার ধারণা হল আরে মনে ১৫ লাখ করে আসছে, সে তো ‘পোধানমুন্তিরি’ তাই আগে পেয়েছে, তাহলে এবার আমরাও পাব।

এর মধ্যে খাবারেও পড়ল কোপ, এতদিন দিনে যা আয় হত তাই দিয়েই চলে যেত, কিন্তু টাকার দাম গেল কমে, ফলে সেই ৮/১০ হাজার টাকা বেতনে মাস পেরোত সেটা আর পেরোল না। অতএব কিছু কমিয়ে দাও, কিছু সস্তায় প্রোটিন নিয়ে এসো। কিন্তু কিনতে গিয়ে দেখি সস্তায় প্রোটিন যাতে পাওয়া যেত সেটা আর খাওয়া যাবে না। ফলে বাড়িতে সয়াবিন কিনে নিয়ে এলাম, বাচ্চাকে এটাই মাংস বলে খাওয়ালাম। ছেলে বলল বাবা এটা কেমন মাংস? উত্তর দিলাম এটা আচ্ছে দিনের মাংস। কয়েকদিন আচ্ছে দিনের মাংস খাওয়ার পর ছেলে বলল বাবা আমি আর আচ্ছে দিনের মাংস খাব না, প্লিজ আর এনো না।

আবার পড়ল টান। এবার কি করা যায়??

হঠাৎ করে দেখলাম তিনি মসজিদে পৌঁছে গেছেন, এত কান্না করছেন কেন! ৩০০০ মুসলমান যে মারা গিয়েছিল তার জন্য ভুল স্বীকার করছেন বুঝি! পাশে একজন কে জিজ্ঞেস করলাম কি হচ্ছে ভাই এটা, সে বলল ২০১৯ নাকি আসছে, তাই আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মাঝে খবর আর দেখছিলাম না, ভাবলাম দেখি ২০১৯ টা কি! রিপাবলিক না কি একটা চ্যানেল চলছে, সেখানে কি গোরসামী না কি বলছে  তুমি দেশদ্রোহী, আমি তো আতকে উঠলাম, আমার বাবা তো কারগিলে শহীদ হয়ে গিয়েছে। এরপর আবার দেখলাম যারা ৫৬ ইঞ্চির বিরোধিতা করছে তারা দেশদ্রোহী! বুঝলাম এবার ৫৬ ইঞ্চির কান্না টা।

সকালে টাইমস অফ ইণ্ডিয়া খুললাম, প্রথম পাতাতেই ৫৬ ইঞ্চি, কাজের বয়ান দেখলাম,

  • পুরোনো টাকা নতুন করে দিয়েছি,
  • প্রোটিন খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি, তবুও যারা জোর খাচ্ছিল বা খেত তাদের কে কখনো প্রোটিন লাগবে না এমন ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যারা এই কাজটা করেছে তাদের কে জাতীয় পতাকা, চাকরি, মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি।
  • ২ মূর্তি বানাতে ৭০০০ কোটি টাকা খরচ করেছি।
  • অক্সিজেন সাপ্লাই না দিয়ে ভারতের জনসংখ্যা কমাতে সাহায্য করেছি।
  • সবাইকে আটার বদলে ডাটা খাইয়েছি।
  • আমার গরিব বন্ধুগুলিকে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা দিয়ে বিদেশ ঘুরতে পাঠিয়েছি।
  • আপনাদের গাড়ি কেনার খরচ বাচিয়ে দিয়েছি।

আরো কত কি, এত কাজের বয়াণ কি লেখা যায়। আমি এতদিনে বুঝতে পারলাম যে আমাদের জিনিসের দাম এত কেন বাড়ছে! মূর্তি তৈরি, গঙ্গা পরিস্কার হচ্ছে সেইজন্য না হয় আমরা একটু কষ্ট করছি!

অনেক হয়েছে!

আমার আচ্ছে দিনের স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে, এবার আমি “আচ্ছে দিনের” আগের দুঃখের দিনগুলো চাই।

লিখেছেনঃ শুভো

(মতামত লেখকের নিজস্ব। পুনঃপ্রকাশের জন্য যোগাযোগ করুন mydinkal@gmail.com)

 

Back To Top