একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজে

একটা জাতির উন্নতির জন্য যে বস্তুটির সব থেকে বেশি প্রয়োজন তার নাম শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি বধির, অন্ধ। যে জাতির শিক্ষা নেই সে জাতি কোনদিনই উন্নতি লাভ করতে পারেনি। আজকে আমরা সভ্যতার চরম অগ্রগতির যুগে বাস করলেও এখনও একটা জাতি আছে যারা একসময়ে সেই সময়ের চরম উন্নতির শিখরে থাকলেও আজকে তারা সব থেকে পিছনের সারিতে। সেই জাতি বা পিছনের সারির জাতির নাম মুর্শিদাবাদবাসী!

একদা অবিভক্ত বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদ আজকে সারা ভারতের লেবার সাপ্লাই কারখানাই পরিণত হয়েছে। ১৪ এর গন্ডি পার করে মুর্শিদাবাদের কিশোররা কেরালার উদ্দেশ্যে হাওড়া, শালিমার বা সাঁতরাগাছি রেলওয়ে স্টেশনে সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রওয়ানা দেয় চালু বঘিতে চেপে। কেরালায় সরকারিভাবে ঘোষিত ৩৫ লাখের মত শ্রমিক পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার এবং ঝাড়খন্ড থেকে কাজ করে, তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি একদা বিশাল সাম্রাজ্যের রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে।

ঘনবসতির দিক দিয়ে সারা ভারতে নবমস্থানের অধিকারী বিশাল লম্বা এই জেলায় প্রায় ৮০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। মুর্শিদাবাদের অধিকাংশ মানুষই বিড়ি শ্রমিক, তারপরেই রয়েছে দৈনিক মজুরিপ্রাপ্ত শ্রমিক, কৃষিকাজ এবং দেশের অন্যান্য

রাজ্যে কর্মরত শ্রমিক। মুর্শিদাবাদ জেলায় কোন শিল্প না থাকায় জেলাবাসীদের কাজের সন্ধানে পাড়ি দিতে হয় ভিনরাজ্যে।

 ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া নামে একটি ছাত্র সংগঠনের
বিশ্বাবিদ্যালয়ের দাবীতে জেলা সদর শহর বহরমপুরে মিছিল।

৩০ বছর কংগ্রেস, ৩৪ বছর সিপিএম এবং ৬ বছর থেকে তৃণমূল কংগ্রেস কেউই কোনদিনই ভাবেনি মুর্শিদাবাদবাসীর কথা, যেখানে প্রায় প্রত্যেকটি জেলাতেই বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এমনকি এর ৫ ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যা হলেও কিন্তু তবুও ৮০ লাখ জনবাসীর ভাগ্যে আজ পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় জোটেনি। আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকাই এমনিতেই শিক্ষার হাল খারাপ এরপরেও যারা অতি কষ্টে একবেলা খেটে একবেলা খেয়ে লেখাপড়া করে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তাদের উচ্চশিক্ষার ইচ্ছে থাকলেও উপায় হয়ে ওঠে না। গ্রাম্য মানুষের জন্য কলকাতা তো অনেক দুরের কথা, উচ্চশিক্ষার জন্য জেলা সদর বহরমপুরেই আসতে পারে না অধিকাংশ ছাত্র, কার্যত তাদের পড়াশোনা শিকেয় উঠে যায়, পেটের দায়ে হাওড়া, সাঁতরাগাছি, শালিমার থেকে ট্রেনের চালু টিকিট রুটির জোগাড়ে যাত্রা করে এক অজানা সফরে। যেখানে পাওনা ছিল একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ সেখানে তারা আজ লেবারের কাজ করতে রওনা দেয় দক্ষিণ ভারতে।

দীর্ঘদিন থেকে ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (CFI) এবং SIO নামে দুটি ছাত্র সংগঠন বিশ্ব বিদ্যালয়ের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করলেও এখন পর্যন্ত সফলতা লাভ করেনি। জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে মাঝে মাঝেই জেলার সদর শহর বহরমপুর সহ বিভিন্ন জায়গাতে মিটিং করে থাকেন। কিছুদিন আগে  ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া বহরমপুর শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে মিছিল করে।  ৮০ লাখ জনবাসীর এই অবহেলিত জাতি কবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় কবে পাবে সেটা একটা বড় বিষয় অবশ্যই সেই সঙ্গে কিভাবে একটা শাসক তার ৮০ লাখ জনগণের জন্য উদাস থাকতে পারে সেটা একটা বড় বিষয়। তিনি আগে থেকেই যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেখানে আবার আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দিচ্ছেন কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় মুর্শিদাবাদে কোনরকম বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও মুর্শিদাবাদবাসীর কপাল খুলছে না।

মুর্শিদাবাদবাসী একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালের অপেক্ষায়।

লেখক

নিজাম পারভেজ,

সম্পাদক

ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া,

পশ্চিমবঙ্গ

(পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন ও কমেন্ট করে আমাদের উৎসাহিত করবেন।)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top