সফিউল ইসলাম জুয়েল
এক সাগর পরিমান রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন ভারতবর্ষ। আজ সারা বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম ভারত মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে। যার মূলে রয়েছে জাগ্রত ছাত্র সমাজের গৌরবদীপ্ত সংগ্রাম। এই ছাত্র সমাজই দেশ গঠনের সুকঠিন পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে পারে। এরাই হলো দেশের ভবিষ্যত। ছাত্র জীবন মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সময়, কারণ ছাত্র জীবনই ভবিষ্যত জীবনের ভিত রচনা করে। ইমারতের ভিত্তি সুগঠিত না হলে যেমন ইমারত শক্ত হয়না, তেমনই বাল্যকালে উপযুক্ত শিক্ষা লাভ না করলে মানুষের ভবিষ্যত জীবন সুগঠিত হয় না। একটি সমৃদ্ধ জাতি তথা সমাজগঠনের অন্যতম অলঙ্কার এই ছাত্র সমাজ।
তাই কবি সুকান্তের ভাষায়—
“এ বয়স যেন ভীরু কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায়না থেমে
এ বয়সে তাই নেই কোন সংশয়
এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।”
পথ চলতে এ বয়স যায়না থেমে
এ বয়সে তাই নেই কোন সংশয়
এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।”
আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যেখানে যত রকমের আন্দোলন হয়েছে এবং হয়ে আসছে তার পেছনে আমাদের এই ছাত্র সমাজের ভূমিকা অন্যতম। আজ আমরা যদি স্বাধীনতার পূর্বের ইতিহাসে চোখ রাখি তাহলে দেখা যাবে ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ করার জন্য ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনে এই ছাত্ররাই প্রথম সরব হয়েছিল। আমরা দেখেছি কিভাবে মাষ্টারদা সূর্য সেন ছাত্রজীবন থেকেই বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে যুগান্তর দলের মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলন করে গেছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য, কিভাবে শৈশব পেরিয়ে কৈশরে পা রেখেই প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং দেশের জন্য মহিলাদের মধ্যে তিনি প্রথম শহীদ হন। ইতিহাসের পাতায় নেতাজি সুভাষচন্দ্রের নাম স্বর্ণাক্ষরে খোদিত। বিনয়, বাদল, দীনেশ এর আত্মত্যাগ আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে তোলে। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে কিভাবে প্রফুল্ল চাকী ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ ভারতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যত আন্দোলন হয়েছে প্রত্যেক আন্দোলনের মূলে ছাত্রদের ভূমিকা অপরিমেয়। সমাজের বিকাশ ও পরিবর্তনের জন্য ছাত্র সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা জানি ১৯৪৭ সালের ভারত দুটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে, ভারত ও পাকিস্থান নামে। বহু জাতিসত্বা নিয়ে গঠিত পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা গঠন নিয়ে বিবাদ দেখা দেয়। পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা বাংলা অপরদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা উর্দু হওয়ায় রাষ্ট্রীয় ভাষা পছন্দ নিয়ে দেখা দেয় বিবাদ। একদিকে উর্দূ ভাষা অপর দিকে বাংলা, এরই প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দেবার জন্য ছাত্র সমাজ আন্দোলনে নামে এবং বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দেয়।ছাত্ররাই পারে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। শিক্ষিত সমাজ যদি এগিয়ে না আসে তাহলে সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়। আজ আমাদের সমাজ দুর্নীতির কালো ঝড়ে কলুষিত হয়ে পড়েছে। আমরা আজ নিজ নিজ স্বার্থের পেছনে বন্যপশুর মত হন্য হয়ে ছুটে চলেছি।“স্বার্থপরতা” নামের ভাইরাসে আজ আমাদের সমাজ সংক্রমিত হয়ে পড়েছে। আজ আমরা রাজনীতির নামে দুর্নীতির কবলে পড়ে নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলেছি। সমাজ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই আমরা যদি এগিয়ে না আসি তাহলে সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়। অতীতের মত ভবিষ্যতেও সমাজ কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ছাত্রসমাজকে। অথচ আজ যুব সমাজ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন! তাই সমস্ত ছাত্র তথা যুবসমাজের প্রতি আমার আহ্বান উঠে এসো ভাই, আর দেরী নয়, চলো সকলে মিলে সমাজকে করে তুলি কলুষতা মুক্ত। বাস্তবে রুপ দিই সুকান্তের সেই ইচ্ছাকে। বাসযোগ্য করে তুলি এই পৃথিবীকে।
লেখকঃ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এড পাঠরত।
(পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন ও কমেন্ট করে আমাদের উৎসাহিত করবেন।)
(পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন ও কমেন্ট করে আমাদের উৎসাহিত করবেন।)