সাইফুল্লা লস্কর : সভ্যতার প্রাচীন লগ্ন থেকেই মানব জগতের স্বপ্ন ছিল পাখির মত বাতাসে ভেসে আকাশ পরিভ্রমণ করার কিন্তু বিজ্ঞান চর্চার বহুল উন্নতি সাধনের আগে পর্যন্ত এই স্বপ্ন অধরাই ছিল সবার কাছে। আমাদের কাছে জানা প্রথম মানুষ যারা যন্ত্রচালিত উড়োজাহাজ আবিষ্কারে সমর্থ হয়েছিলেন তারা হলো আমেরিকার রাইট ভাতৃদয় যারা ১৭ ই ডিসেম্বর ১৯০৩ সালে নিজেদের তৈরি যন্ত্রের সাহায্যে কিছু সেকেন্ডের জন্য হওয়ায় উড়তে সমর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু রাইট দের থেকে হাজার বছর আগে পাখির মতো হওয়ায় ওড়ার নজর সৃষ্টি করেছিলেন তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারক আব্বাস ইবন ফিরনাস।
উমাইয়াদ খিলাফতের জ্ঞান বিজ্ঞানের রাজধানী স্পেনের শহর কর্ডোভাতে বিজ্ঞান চর্চা করে জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটানো ইবন ফিরনাস নিজের বয়স ৬৫ থেকে ৭০ এর মাঝামাঝি সময়ে ইয়েমেনের জাবাল আল আরুস পাহাড়ের ওপর থেকে রেশম, কাঠ ও পাখির পালক দিয়ে তৈরি ডানায় ব্যাবহার করে গ্লাইডিং করে পাখির মত অন্তত ১০ মিনিট বাতাসে ভেসে থাকতে সফল হয়েছিলেন যা তৎকালীন বিশ্বে এক তাজ্জবকারি বৈজ্ঞানিক কীর্তি হিসেবে দেখা হতো এবং এখনও তাকেই আধুনিক বিমান আবিষ্কারের পথপ্রদর্শক হিসেবে দেখা হয়। তিনি যদিও সেই সময় তার যন্ত্রে অবতরণ করার বিষয়টিকে সঠিক গুরুত্ব না দেয়ায় তার যন্ত্রটি সহ তিনি ব্যর্থ অবতরণ করেন এবং আঘাত পেয়ে বাকি জীবনের বারো বছর পিঠের ব্যাথা নিয়ে কাটিয়েছিলেন।
তিনি জন্ম গ্রহণ করেন স্পেনের শহর রণ্ডাতে এবং তার এই বিমান আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা লাভ করেন তার ওস্তাদ আর্মেন ফারমানের কাছে থেকে। প্রকৃতিগতভাবে প্রকৃতি পর্যবেক্ষক ফরমান ঠিক একই রকম উপাদানের তৈরি ডানার সাহায্যে এক সুউচ্চ মসজিদের মিনার থেকে নিচে ঝাঁপ দিয়েছিলেন কিন্তু তা খুব একটা সফল হয়নী তবে নব আবিষ্কারের চিন্তায় বিভোর ফির্নাসের কাছে তা অনুপ্রেরণা লাভের জন্য যথেষ্ঠ ছিল। এই আবিষ্কারের পাশপাশি ফির্ণাসের বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের তালিকায় ছিল জলঘড়ি, বিবোর্ধক কাঁচ, প্লানেটেরিয়াম সহ আরো অনেক বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম যা এখনও তাকে ইতিহাসের পাতায় অমলিন করে রেখেছে তবে মুসলিম বিশ্ব তার এই আবিষ্কার সম্পর্কে আজ যথেষ্ঠ ওয়াকিবহাল নয় বলে তার আবিষ্কার অতটা পরিচিতি লাভ করেনি পশ্চিমাদের মাঝে এমনকি আমাদের মাঝেও।