পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সদা প্রস্তুত মোদী ব্রিগেড লাদাখে চিনা আগ্রাসনে নীরব কেনো??

এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে লাদাখের অন্তত পাঁচটি জায়গায় ভারতের সীমানার তিন থেকে পাঁচ কিমি ভিতরে প্রবেশ করে চিনা সেনাবাহিনী। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সদা যুদ্ধংদেহী মেজাজে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বা বিদেশমন্ত্রক থেকে এই ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নী। লিখছেন সাইফুল্লা লস্কর।

পাকিস্তানের এক সাধারণ ক্রীড়া ব্যাক্তিত্বের কাশ্মীরের ব্যাপারে মন্তব্যের নিন্দা করতে মিডিয়া থেকে ভারতীয় ক্রিকেট মহল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে তিন বাহিনীর প্রধান সবাইকে সামনের সারিতে দেখা গেলেও লাদাখ, সিকিম এবং উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় চিনা সেনার নজিরবিহীনভাবে জোরপূর্বক ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে বাঙ্কার নির্মাণ করে অবস্থান করলেও কাউকে এখনও প্রায় একমাস উত্তীর্ণ হতে চললেও এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি। ঘটনা প্রথম সামনে আসে যখন এক অস্ট্রেলিয় সামরিক বিশেষজ্ঞ এক উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করেন যাতে দেখা যায় ভারতীয় সীমানার আশেপাশে চিনা সেনাবাহিনী অনেক বাঙ্কার নির্মাণ করেছে সঙ্গে অনেক ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ট্রাক ওই এলাকায় নিয়ে এসেছে এবং ভারতীয় সীমানার খুব কাছে এক বিমানবন্দরে নিজেদের জে-১১ এবং জে-১৫ অত্যাধুনিক জঙ্গি বিমান মোতায়ন করেছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবর থেকে জানা গিয়েছে, পূর্ব লাদাখের পাঙ্গং হ্রদ এবং গালোয়ান উপত্যকা এলাকায় চিনা সেনাবাহিনী ভারতীয় ভূখণ্ডে অনেক ভিতরে প্রবেশ করে ভারতের টহলরত বাহিনীকে বাধা দেয় এবং ওই এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে। ১৯৬২ সালের ভারত ও চীনের মধ্যেকার যুদ্ধের পর থেকে লাদাখের এই সব অঞ্চলে কখনো চিনা অনুপ্রবেশ ঘটেনি, যদিও ভারতে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৪০০ টি চিনা অনুপ্রবেশ ঘটে। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ তাদের নিয়ন্ত্রণে এবং এর শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব তবে কখন তাদের সৈন্য তারা প্রত্যাহার করে নেবে বা কেনো তারা এই ভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে তার কোনো ব্যাখ্যা প্রদান করেননি।

ইন্ডিয়া টুডের খবর থেকে জানা যায় চিনা সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকায় ভারতের অনেক সেনাকে গ্রেফতার করে তাদের অস্ত্র কেড়ে নেয় পরে ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধের পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। আবার দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ভারতের প্রায় ৭২ জন জওয়ানের আহত হওয়ার খবর এসেছে।  এই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়েছে শীতল বরফে ঢাকা লাদাখ। এখন দুই দেশের সেনাবাহিনী লাদাখের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মুখোমুখি অবস্থান করছে। চিনা সেনাবাহিনী ভারতীয় ভূখণ্ডে পাঁচ হাজারের বেশী সৈন্য মোতায়ন করেছে এবং খুব দ্রুততার সঙ্গে পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধের মূল উপাদান আর্টিলারি সহ অনেক ভারী যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে এসেছে, যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে ভারতীয় সামরিক বিশেষজ্ঞদের।

চিনা সেনাবাহিনীর লাদাখে অনুপ্রবেশ এক নজিরবিহীন যা ১৯৬২ পর থেকে কখনো হয়নী। অন্য দিকে রাজধানী বেইজিং এ চিনা রাষ্ট্রপতি জি জিংপিং সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে চিনা সেনাবাহিনী কেনো এতো দিন পর এই ভাবে লাদাখে অনুপ্রবেশ করলো? এর পিছনে তাদের মূল অভিসন্ধি কি? চিন জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা প্রত্যাহার করাকে যে ভালো ভাবে নেয়নি তাও তারা সে সময়েই জানিয়ে দিয়েছিল। আবার এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় তিন হাজার কিমি সীমানা থাকলেও তার বেশিরভাগ অংশই সঠিক ভাবে সীমানা নির্ধারণ করা নেই যার ফলে চিনা বাহিনী প্রায়শই ভারতীয় সীমানার লঙ্ঘন করে থাকে। পূর্ব লাদাখে ভারতের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাস্তা নির্মাণ বেইজিংকে যে ক্ষুব্ধ করেছে তাও জানা গিয়েছে।

কয়েকদিন আগে তিন বাহিনীর প্রধান, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াট এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন নরেন্দ্র মোদী, তবে এই ঘটনায় তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড  ট্রাম্প এই ঘটনায় দুইপক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে প্রশ্ন উঠছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অতি সাধারণ বিষয় নিয়ে মিডিয়া গরম করা নেতা মন্ত্রীরা এখন সব নিরব কেনো? প্রতিদিন পাকিস্তানকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেয়ার হুমকি দেয়া ভারতীয় গণমাধ্যম কেনো এই ব্যাপারে প্রয়োজন অতিরিক্ত নিরবতা দেখাচ্ছে? কেন কোনো ক্রিকেটার বা বলিউড তারকা চীনের ভিতরে গিয়ে চীনকে শিক্ষা দেয়ার কথা বলছেনা? পাকিস্তানের দখলে থাকা কাশ্মীর ছিনিয়ে আনার স্বপ্নে বিভোর মোদী ব্রিগেড এখন কেন চিনকেও সেই ভাষায় হুমকী দিচ্ছেনা যখন তারা ভারতের হাতে থাকা ভূখণ্ডের ওপর জোরপূর্বক দাবি করে সেখানে স্থায়ী ভাবে অবস্থানের জন্য বাঙ্কার ও সেনা ছাউনি নির্মাণ করছে? তাহলে কি মোদী বাহিনীর দেশপ্রেম শুধু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে উদিত হয় আর উত্তরের চিনা সীমান্তে অস্ত যায়? দেশপ্রেম ছাড়া  পাকিস্তান বিরোধিতায় অন্য কারো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত নেই তো? যে দেশপ্রেম শুধু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে জাগরিত হয় আর চীনের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকে তা কি আদৌ দেশপ্রেম নাকি দেশপ্রেমের আড়ালে কোনো বিশেষ কারণে কোনো বিশেষ মতাদর্শের প্রচারিত ঘৃণার কর্মসূচি!!!!

Back To Top