সাম্প্রদায়িকতা ভারতের নব পরিচয় : মুসলিমদের ওপর অত্যাচার মোদীর রাজ্যের পুলিশের

সাইফুল্লা লস্কর : সমগ্র বিশ্ব যখন করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সংগ্রাম করছে সেই সময় বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষের নতুন পরিচয় হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িকতা। নিজামউদ্দিন ঘটনার পর থেকে দেশের এক শ্রেণীর মিডিয়া এবং এক বিশেষ মতাদর্শের মানুষ সোশাল মিডিয়ায় নগ্ন মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে চলেছেন। তবে এবার কোনো মিডিয়া বা সাধারণ মানুষ নয় মুসলিম বিদ্বেষের পরিচয় দিল ২০০২ গুজরাট গণহত্যার জন্য কুখ্যাত মোদীর রাজ্য গুজরাটের পুলিশ। রমজানে মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের খবর এসেছে গুজরাটের মুসলিম ঐতিহ্যের পরিচয়বাহী ঐতিহাসিক আহমেদাবাদ শহরের এক মুসলিম প্রধান এলাকা শাহপুর থেকে।

মুসলিমপ্রধান ওই এলাকাটি কন্টেনমেন্ট জনে হিসেবে চিহ্নিত যেখানে মোদীর পুলিশ গত ৮ ই মে থেকে স্থানীয় দের যখন তখন উপস্থিত হয়ে হেনস্থা করছে এবং মারধর করছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাইকে, বাদ যাচ্ছেন না অসুস্থ বা মহিলারাও। এই ঘটনার পিছনে ভয়াবহ মুসলিম বিদ্বেষ লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যদিও পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে স্থানীয়রা লকডাউন মানছেনা এবং ৮ ই মে বাড়ীর বাইরে বসে থাকা দুই স্থানীয় যুবককে পুলিশ ভিতরে যেতে বললে জনতা উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে আক্রমণ করে যার ফলে পুলিশ লাঠি চার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ব্যাবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন বর্ণনা পাওয়া গিয়েছে গ্রামবাসীদের মুখ থেকে।

শাহ পুরের বাসিন্দা জুনাইদ জানিয়েছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে তল্লাশি করছে পুলিশ এবং নির্বিচারে মারধর করছে সবাইকে। মহিলারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ ভিত সন্ত্রস্থ হয়ে আছে। পুলিশ স্থানীয় করিম মিয়ার ছেলেকে মারধর করে লকডাউন ভাঙ্গ করার অপরাধে কিন্তু তার পায়ে খুব সাম্প্রতিক সময়ে সার্জারি করে প্লেট লাগানো আছে, সে ভালো করে হাঁটতে পারেনা তাহলে কিভাবে সে লকডাউন ভাঙলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি অমানবিকতার পরিচয় দিয়ে তার অসুস্থতার কথা শুনে পুলিশ তাকে আরো বেশি পেটায় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

স্থানীয় ফারজানা বানু বলেন, মাগরিবের সময়ে ৭-৮ জন পুলিশ দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে তাদের তৈরি ইফতার সামগ্রী লাথি মারে ছড়িয়ে দেয়  এবং নামাজরত অবস্থায় এক হাফেজ সন্তান সহ তার দুই ছেলে ও স্বামীকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। আরো একজন স্থানীয় মহিলা রাজিয়া বানু বলেন, পুলিশ তাদেরকে ইফতার করতে দেয়নি, এমনকি এক গ্লাস পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়নি কাউকে। সারাদিন রোজা রাখা রোজাদারদের কাউকে মাগরিবের নামাজের পর বিশ্রামও নিতে দেয়নি পুলিশ। পুলিশ ভিয় দেখিয়ে এবং শাঁশিয়ে এক বাড়ি বছর বয়সের বালককে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ব্যাবহারের চেষ্টা করে। নিজেদের কুকর্ম ঢাকতে ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

উপরোক্ত বর্ণনা থেকে এটা পরিষ্কার যে এটি কুখ্যাত গুজরাট পুলিশের চরম মুসলিম বিদ্বেষের আরো একটি উদাহরণ ছাড়া আর কিছু নয়। প্রশ্ন উঠছে সংখ্যালঘুদের মন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নাকভির কাছে এই যদি মুসলমানদের স্বর্গ হয় তাহলে বহলে নরক কেমন? প্রশ্ন আরো উঠছে এই চরম মুসলিম বিদ্বেষের শেষ কোথায়? দেশের সমস্ত পর্যায়ে মুসলিম বিদ্বেষ এখন স্বগৌরবে বাসা বেঁধেছে। সংসদ থেকে আদালত, মিডিয়া থেকে পুলিশ সাম্প্রদায়িকতার বাইরে নেই কেউ। এটাই কি গান্ধী নেহেরু আজাদের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক ভারত নাকি জিন্নাহর কথা সত্য প্রমাণ করা বর্তমান ভারত সাভারকার, গোলওয়ালকার, দিন দয়াল, মালব্য দের স্বপ্নভূমি????

Back To Top