সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে ভারত ও চিন, এক নজরে দুই দেশের সমর সম্ভার

সাইফুল্লা লস্কর : লাদাখ সীমান্তে সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে দন্ডায়মান বিবাদমান দুই দেশের সেনাবাহিনী। সম্ভাব্য কোনো সামরিক সংঘাতের ক্ষেত্রে কোন দেশের সেনাবাহিনী সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে তা দেখে নেয়া যাক এক নজরে। মূলত আন্তর্জাতিক সমরাস্ত্র বিষয়ক ওয়েব সাইট গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের দেয়া তথ্যমতে এই তুলনামূলক আলোচনা করা হলো।

ভারতের আয়তন প্রায় ৩৩ লাখ বর্গ কিমি যেখানে চীনের মোট আয়তন প্রায় ৯৬ লাখ বর্গ কিমি। ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৩৭ কোটি যেখানে চীনের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। ভারত ও চীনের বৈদেশিক সীমান্তের দৈর্ঘ্য যথাক্রমে প্রায় ১৩,৮৮৮ কিমি এবং ২২,৪৫৭ কিমি। এখন দুই দেশের সেনাবাহিনীর শক্তি দেখে নেয়া যাক :

‌ সক্রিয় সংখ্যা : ভারত এবং চীনের যথাক্রমে ১৪ লাখ এবং ২২ লাখ।

সংরক্ষিত সৈনসংখ্যা : ভারতের ২২ লাখ এবং ৮০ লাখ

যুদ্ধ ট্যাংক : ভারতের ৪০০০ টির বেশী এবং চীনের ৭০০০ টির কিছু বেশি।

আর্মড ফাইটিং ভেহিকেল : ভারতের ৮,৬০০ টি এবং ৩৩০০০ টি।

সেল্ফ প্রপেলড আর্টিলারি : ভারতের আছে ২৩৫ টি এবং চীনের আছে ৩৮০০ টি।

রকেট প্রজেক্টর : ভারতের ২৬৬ টি এবং চীনের ২৬৫০ টি।

মোট যুদ্ধ বিমান : ভারতের ২১০০ টি এবং চীনের ৩২০০ টি।

মোট সামরিক হেলিকপ্টার : ভারতের ৭২২ টি এবং চীনের ৯১১ টি

অ্যাটাক হেলিকপ্টার : ভারতের আছে ২৩ টি যেখানে চীনের আছে ২২৩ টি।

নৌবাহিনীর জাহাজ সংখ্যা : ভারতের ২৮৫ টি এবং চীনের ৭৭৭ টি।

বিমানবাহী রণতরী : ভারতের আছে ১ টি এবং চীনের আছে ২ টি

ডুবোজাহাজ : ভারতের আছে ১৬ টি এবং চীনের আছে ৭৪ টি

সামরিক বাজেট : ভারতের ৪৮ বিলিয়ন ডলার এবং চীনের ২৮০ বিলিয়ান ডলার

এই হলো দুইদেশের তিন বাহিনীর সক্ষমতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তবে সংখ্যার বাইরেও পরিস্থিতি অনেকটাই প্রতিকূল ভারতের জন্য কারন ২০১৯ সালের ক্যাগ রিপোর্ট অনুসারে ভারতের ৬৮% যুদ্ধাস্ত্র বর্তমানে ব্যাবহারের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভারতের বেশিরভাগ যুদ্ধ বিমান নিজেদের কার্যকালের মেয়াদ পার করেছে তাই তাদের ওপর আস্থা রাখা যায়না। ভারতের হাতে পঞ্চম প্রজন্মের কোনো যুদ্ধ বিমান নেই কিন্তু চীনের হাতে নিজেদের তৈরি জে-২০ যুদ্ধ বিমান আছে। চীন রাশিয়ার থেকে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ অর্জন করেছে এবং নিজেদের দেশে তৈরি এইচ কিউ-৯ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যাবহার করছে কিন্তু ভারত এখনও এস-৪০০ পায়নি রাশিয়ার থেকে এবং দেশে তৈরি এমন কোনো ব্যাবস্থা ও নেই। ভারতের হাতে কোনো আর্মড ড্রোন নেই যা চীনের কাছে অতিরিক্ত সংখ্যায় আছে।

এর বাইরে আছে দুই দেশের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির ভান্ডার যা আধুনিক যেকোনো যুদ্ধের নির্ণায়ক শক্তি বলে বিবেচিত হয়। ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতায় চীনের স্থান রাশিয়ার ঠিক পরেই যার প্রমাণ পাওয়া যায় কয়েক বছর আগে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকার প্রাক্তন কমান্ডার জন হারিসের কথা থেকে। তিনি ওয়াশিংটনে গত বছর সাংবাদিকদের বলেন ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতায় চীনারা আমাদের ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে এছাড়াও বর্তমানে তিনটি যুদ্ধ ক্ষেত্র আছে যেকোনো সামরিক সংঘাতের ক্ষেত্রে। সাইবার, মহাকাশ এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার। সাইবার যুদ্ধের সাহায্য কোনো দেশকে আক্রমণ না করেই সেই দেশকে পঙ্গু এবং অচল করে দেয়া যায় কিন্তু এই ক্ষেত্রেও চিন এখন ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে এবং আমেরিকার সমতুল্য শক্তি রাখে। মহাকাশ যুদ্ধে ভারত কয়েক বছর আগে পা রেখেছে তবে চিন এই ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই নিজেদের আধিপত্য কায়েম করেছে।

পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার যেকোনো যুদ্ধের শেষ উপায় হিসেবে দেখা হয় তবে ভারত কোনো দেশের বিরুদ্ধে এই অস্ত্র প্রথম ব্যাবহার করতে পারবেনা নিজেদের নো ফার্স্ট ইউজ পলিসির জন্য। সিপ্রির রিপোর্ট অনুসারে চীনের হাতে বর্তমানে প্রায় ২০০ টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে এবং ভারতের হাতে রয়েছে প্রায় ১৩০ টি। এছাড়াও চীনের হতে অতিশক্তিশালি হাইড্রোজেন বোমা, ক্যাডমিয়াম বোমা এবং নিউট্রন বোমা যা ভারতের হাতে নেই। বর্তমানে ভারত অর্থনৈতিকভাবেও চীনের থেকে বহু যোজন পিছিয়ে তাই দুই দেশের সামরিক সংঘাত দুই দেশের জন্যই ক্ষতিকর হলেও ভারতের ক্ষেত্রে তা বেশি মাত্রায় ব্যাপক হবে বলে মত সমর বিশেষজ্ঞদের এবং এমন ব্যাপক যুদ্ধে শুধু এই দুই দেশই ক্ষতিগ্রস্থ হবেনা বিভিন্ন ভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হবে পুরো বিশ্ব। তবে দুইপক্ষ থেকে বর্তমানে সমঝোতা এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ওপর জোর দেয়ায় পরিস্থিতি উন্নতির দিকে ধাবমান বলেই মনে হচ্ছে।

Back To Top