মোদীর নতুন ভারতে সব সমস্যার একটাই সমাধান : মুসলিমদের ঘাড়ে দোষ চাপানো

সাইফুল্লা লস্কর : যেখান থেকে কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এন ডি এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারি ব্যর্থতা ঢাকতে মুসলিমদেরই ব্যাবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকতেও তাদের কাজে আসে মুসলিমরা। কোথাও কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটলেই সেব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কিন্তু তারা দিল্লি দাঙ্গার মতো সব ক্ষেত্রেই একই কাজ করে। কিছু মুসলিমদের গ্রেফতার করে দেখায় আমরা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করেছি আর মিডিয়ায় থাকা সরকারি তাবেদারগুলোও তার সঙ্গে উঠে পড়ে প্রমাণ করতে যে মুসলমানরা কতটা ঘৃণ্য জাতী যে প্রতিটা ক্ষেত্রেই তারাই অপরাধের পিছনে থাকে।

দিল্লি দাঙ্গার পিছনে মূল উস্কানি দাতা ছিল বিজেপির কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর এবং কিছু স্থানীয় বিজেপি নেতারা কিন্তু দাঙ্গার সময় নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা অথবা কোথাও কোথাও মুসলিমদের বিরুদ্ধে গেরুয়া বাহিনীকে সাহায্য করা দিল্লির পুলিশ বাহিনী মিডিয়ার দালালদের সাহায্যে প্রমাণ করে যে মুসলিমরাই এই দাঙ্গার মূল অপরাধী এবং মুসলিম নেতা নেত্রীরাই এই দাঙ্গা বাধিয়েছে। তারা গ্রেফতার করে কংগ্রেস কাউন্সিলার ইশরাত জাহান, সমাজ কর্মী খালিদ শাইফি সহ আরো মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের যারা। কোনো পদক্ষেপ নেয়নি গেরুয়া বাহিনীর সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে। দিল্লী দাঙ্গা বিষয়ে শুনানি চলাকালীন দিল্লির বিশেষ আদালতের বিচারক এই বিষয়ে ভর্ৎসনা করেছে দিল্লি পুলিশকে।

করোনার প্রভাব মোকাবিলায় যখন পুরো বিশ্বে প্রতিটি মিছিল তখন মার্চের মাঝামাঝি সময়ে মোদী ব্যাস্ত ছিল নমস্তে ট্রাম এবং কেনা বিধায়িক দিয়ে মধ্যপ্রদেশের নির্বাচিত সরকারের তখত ওল্টাতে। যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে লাগলো তখন সেই মুসলিমরাই থাকে এই বিপদ থেকে মোদী সরকারের পিঠ বাঁচাতে। মোদী অনুগামী মিডিয়া প্রচার চালায় লকডাউন ঘোষণার ১০ দিন আগে সংঘঠিত তাবলীগ জামাতের ইসতেমার ওপর। সর্বজনে স্বীকৃত হয় মুসলিমরাই প্রকৃত দোষী এক্ষেত্রে, করোনার মাঝেও চলে আরএসএস সদস্যদের এই ঘৃণা পরিবেশনের খেলা। মোদী সরকার খেলা শেষ করে তাবলিগের ২৬০০ জন বিদেশি সদস্যদের ওপর ১০ বছরের ভারতে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে।

কোথাও মন্দিরে পূজারীদের সংখ্যা কমে গিয়েছে ? সেইখানে প্রচার চলে যে মুসলিমরা সেখানে বিছের মতো বিষাক্ত পতঙ্গ ছেড়ে দিচ্ছে। এতে মুসলমানদের মুন্ডুপাত হয়, লাভ হয় মন্দির কর্তৃপক্ষের তেমন লাভ হয় দালাল মিডিয়া গুলোর।

কেরালার হাতি হত্যায় পুলিশ যখন কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি তখন মিথ্যা সাজানো গল্পে দোষারোপ করা হয় মুসলিমদের।এই ব্যাপারে ৯০ ভাগ মিডিয়া প্রচার করে মিথ্যা সংবাদ। ঘটনার স্থান পর্যন্ত বদলিয়ে দেয়া হয় এবং বলা হয় মালাপ্পুরামের নাম যা একটি মুসলিম অধ্যসিত জেলা। ফলে খুবসহজেই মুসলিমদের ঘাড়ে দোষ দেয়া যায়। কোনো গেরুয়া বাহিনীর মিডিয়া সেলের কর্মী প্রচার চালায় যে ঘটনায় দুই জন মুসলিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটির সত্যতা যাচাই না করে সার্বজনীন করা হয় সব জাতীয় স্তরের মিডিয়ার দ্বারা। আসলে ঘটনায় এক জন মাত্র গ্রেফতার হয়েছে এবং সে মুসলিম নয়।

কয়েকমাস আছে মার্চে এক শিশু পুকুরে ডুবে মারা যায় বিহারে। বেশ অনেক দিন কেটে গেলেও পুলিশ এই ব্যাপারে কিছুই করেনি কিন্তু হঠাৎ কোনো বিজেপি কর্মকর্তার তরফ থেকে দাবি করা হয় শিশুটিকে মুসলিমরা হত্যা করেছে তাদের ধর্মীয় উদ্দেশ্যে। পুলিশ নব উদ্যমে নেমে পড়ে তদন্তে। সমর্থন পায় ব্যাপক। কিন্তু অবশেষে ডিজিপি নিজে এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন যে ঘটনায় কোনো মুসলিম সংশ্লিষ্টতা ছিলনা।

আসলে এটা এখন একটা জাতীয় নীতির মতো হয়ে গিয়েছে। মুসলিমদের ঘাড়ে দোষ দেয়াটা সব থেকে সহজ এবং পবিত্র পন্থা তাদের কাছে। তাদের হাতে আছে জাতীয় পর্যায়ের প্রায় সব মিডিয়া গুলো যারা দিন রাত মুসলিম বিদ্বেষের কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যাস্ত আছে। তাদের আছে লাখ লাখ হিন্দুত্ববাদী সোশ্যাল মিডিয়া যোদ্ধা যারা দিবা নিশি পরিশ্রম করছে মুসলিম জাতিকে সর্ব দিক থেকে অপরাধী সাজিয়ে মুসলিম মুক্ত ভারত গঠনের জন্য সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে। ব্রিটিশদের তাবেদার স্বাধীনতা সংগ্রামের দুশমন সভারকারের অনুগামী মোদী সরকারের এই নীতির বাস্তবায়নে কাজে আসে সমস্ত রাষ্ট্রীয় যন্ত্র গুলো যেমন NIA, CBI, ED, SEBI ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভারতীয় সংবিধানের অবিভাবক বিচারব্যবস্থাও যে আজ সংঘের প্রভাবের বাইরে নেই তা বোঝা যায়। সাজানো ভ্রান্ত বিতর্কিত বাবরি মসজিদ রায়, সরকারের পিঠ বাঁচানোর জন্য সত্য গোপনে সাহায্য করা রাফায়েল মামলার রায়। এটার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে সদ্য অবসর নেয়া সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গোগোইয়ের বিজেপির তরফ থেকে রাজ্য সভায় মনোনয়নের ঘটনার মধ্য দিয়ে। প্রশ্ন উঠছে প্রকৃত সত্য উদঘাটন এখন কার দায়িত্ত্ব? সর্বক্ষেত্রেই ফ্যাসিবাদী শক্তি তার প্রভাব দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমন কি সাধারণ পর্যায়েও আপামর জনগণের মনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বীজ অনেক গভীরে প্রবেশ করেছে বিজেপি সরকারের এই স্বভাবগত নীতির ফলে।

Back To Top