তিন তালাকে বিচ্ছেদ শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধঃ অর্ডিন্যান্স জারি কেন্দ্রীয় সরকারের

তিন তালাকে বিচ্ছেদ বা তাৎক্ষনিক তিনতালাক শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ বলে অর্ডিন্যান্স জারি করল গতকাল বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার বৈঠক। কেন্দ্রের মোদী সরকার তিনতালাক নিষিদ্ধ করে আইন করে, তা সংসদে পাশ করার জন্য পেশ করে। লোকসভায় তা যথারীতি পাশ হলেও রাজ্যসভায় আটকে দেন বিরোধী দলের সংসদেরা। সদ্য শেষ হওয়া বাদল অধিবেশনেও তা পাশ করানো যায়নি। তাই আবার ১০ মাস অপেক্ষের পর কেন্দ্রীয় সরকার তার ক্ষমতার ব্যবহার করে অর্ডিন্যান্স জারি করল। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিসঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছেন ইতিমধ্যেই সুপ্রিমকোর্ট তিন তালাক বা তালাক-এ-বিদ্দাতকে বেআইনি বলে রায় দেওয়ার পর থেকে তিনতালাকের বিরুদ্ধে ২০১ টি মামলা সুপ্রিমকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলাকারী মহিলাদের সুবিচার পেতে সাহায্য করতে এই অর্ডিন্যান্স জারি জরুরি ছিল। তিন তালাক দিলে ৩ বছরের জেল এবং জরিমানার বিধান, খেয়ালখুশিমতো তিন তালাক ঘোষণা করা আটকাবে বলে সরকার মনে করে। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদিপ সিং সুরজেওয়ালা বলেছেন, সংখ্যালঘু সমাজে বিভাজন এনে ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতেই এই অর্ডিন্যান্স জারী। তিন তালাককে রাজনৈতিক ফুটবল হিসাবে ব্যবহার করে মোদী সরকার ভোট বাড়াতে সচেষ্ট। বরং এই সরকার মুসলিমদের প্রকৃত উন্নয়নে উদ্যোগী হলে কাজের কাজ হত। মন্ত্রী রবিসঙ্কর প্রসাদ পাল্টা বলেছেন ‘কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধীরা ভোট ব্যাঙ্ক এর রাজনীতি করতেই এই বিল আটকে রেখেছে। প্রায় সমস্ত প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির সিলমোহরের পর অর্ডিন্যান্সের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। তার পরেই এই আইন কার্যকর হবে। কিন্তু এই আইনে আগের তিন তালাকের শাস্তি হবেনা।

 

এদিকে এই অর্ডিন্যান্স জারি নিয়ে বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মতামত পেস করা হয়েছে। অল ইন্ডিয়া সুন্নত আল জামাত এর সাধারন সম্পাদক মুফতি আব্দুল মতীন বলেছেন ‘তাৎক্ষনিক তালাক নিয়ে অর্ডিন্যান্স জারি আসলে একটা শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। ইসলামে যে তালাক ব্যাবস্থা তা যথেষ্ট ভাল ছিল। এরা যেটা করছে এতে আরো মেয়েদেরকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা। এজন্য যেমন নারীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলন করছে তেমন গোটা দেশে নারী পুরুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন হওয়া উচিৎ।

 

 

 

 

জামায়াতে ইসলামি হিন্দ- এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি মুহাম্মদ নুরুদ্দিন বলেছেন “তালাক নিয়ে কেন্দ্রীয় মোদী সরকারের মন্ত্রীসভা যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছে তা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও সংবিধান বিরোধী। শুধু তাই নয় এই অর্ডিন্যান্স ভারতীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ বিরোধীও। কারন তালাক নিয়ে যত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তাতে সংখ্যালঘুরা তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এটা তাদের ধর্মীয় মৌলিক অধিকার। তালাকের অপব্যবহার নিয়ে সমাজে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে সে নিয়েও ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তালাক নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে খেলা খেলছে তা প্রকৃত পক্ষে ‘রাজনৈতিক খেলা’। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের মধ্য দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করা, সংখ্যালঘুদের নিষ্পেষণ করার লক্ষ্যেই এই অর্ডিন্যান্স জারি”।

 

 

যেগুলি পরিবর্তন করা হয়েছে

১. তাৎক্ষনিক তিন তালাক দিলে শুধু স্ত্রী, তাঁর রক্তের সম্পর্ক বা শ্বশুরবাড়ির কেও অভিযোগ করতে পারবেন। এর আগে ছিল, যে কেউ পারবেন।

২. রফা শুধু স্ত্রীর আর্জিতেই হতে পারে। দুই পক্ষের কথা শুনে মাজিস্ট্রেট মামলা তুলে নিতে পারেন। এর আগের বিলে এই ব্যবস্থা ছিল না।

৩. তিন তালাক জামিন-অযোগ্য হলেও স্ত্রীর অনুরোধে ম্যাজিস্ট্রেট জামিন দিতে পারেন। এর আগের বিলে এটা ছিল না।

 

যেগুলি অপরিবর্তিত রয়েছে

১. তাৎক্ষনিক তিনতালাক ( মোবাইলে, মৌখিক বা অন্য কোন ভাবে) জামিন অযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ।

২. তিন বছর পর্যন্ত জেল, জরিমা।

৩. নিজের ও সন্তানের জন্য খোরপোশ চাইতে পারেন স্ত্রী।

৪. খোরপোশের অঙ্ক ম্যাজিস্ট্রেট ঠিক করবেন।

৫. সন্তান মায়ের কাছে থাকবে।

Back To Top