উত্তর দিনাজপুরে হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২

 

মৃত রাজেস সরকার

উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিট হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ বাড়ছিল গত কয়েকদিন ধরে। এই ক্ষোভ উগরিয়ে যায় গতকাল বৃহস্পতিবার যখন দুই শিক্ষক স্কুলে যোগ দেন। প্রথমে অবরোধ তার পরে লাঠি, ইট, পাথর এমনকি বোমা গুলিও চলে স্কুল চত্তরে। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২০ বছরের আইটিআই -এর ছাত্র রাজেশ সরকারের। এই ঘটনায় ৬ জন পুলিশ, ৪ জন শিক্ষক এবং ১০ জন ছাত্র জখম হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানর অভিযোগ উঠলে পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করে। পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেছেন “কেন এমন ঘটল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে”।

মৃত তাপস বর্মণ

এদিকে শুক্রবার ভোরে তাপস বর্মণ নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দুই। ইট, পাথর, বোমা ও গুলি চলাকালীন গুলি বিদ্ধ হয় তাপস। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় শিলিগুড়ি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তারিত করা হয়। শুক্রবার ভোরে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সৌরভ বর্মণ নামে আরও এক ছাত্রের পায়ে গুলি লাগে। সে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ছাত্রদের অভিযোগ, স্কুলে বর্তমানে বাংলা শিক্ষক কম রয়েছে, অথচ নিয়োগ করা হচ্ছে সংস্কৃত ও উর্দুর শিক্ষক। এই নিয়ে তারা গত কয়েক দীন ধরে ক্ষোভ জানাচ্ছিল। যখন তারা জানতে পারে সংস্কৃত ও উর্দুর শিক্ষক যোগ দিয়েছে তখন তারা এই ঘটনা ঘটায়। পুলিশের দাবি, তাদের পিছনে ছিল মদত ছিল স্থানীয় বাশিন্দাদের একাংশেরও। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা প্রথমে স্কুলের গেটে তালা লাগায়, দুপুর দেড়টা নাগাদ ইসলামপুর-গোয়ালপোখর সড়ক অবরোধ করে। দুঘণ্টা পরে পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে এবং স্কুলে ঢোকার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে। বাশিন্দাদের একাংশের অভিযোগ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গোয়ালপাড়া থেকে বহিরাগত দুষ্কৃতিরাও সামিল হয়ে যায়। ঘটনার প্রতিবাদে ২২ সেপ্টেম্বর রাজ্য জুড়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এসএফআই।

তাপস বর্মণের শোকাহত পরিবার

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাতে বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট ডিআই রবীন্দ্রকুমার মণ্ডল শিক্ষা দফতরকে অন্ধকারে রেখেই নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।’’ রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘স্কুলের আবেদন মেনেই শিক্ষক দেওয়া হয়েছিল।’’ প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডুর মোবাইল বন্ধ ছিল। পার্থবাবুর অভিযোগ, বিজেপি, আরএসএস অশান্তিতে ইন্ধন জুগিয়েছে। তারা মৃত্যুর রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে শুক্রবার ও শনিবার বন্‌ধ ব্যর্থ করতে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানাবে তৃণমূল, জানিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

তড়িঘড়ি শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইসলামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক কানাইয়ালাল অগ্রবাল। তিনি বলেন, ‘‘দু’দিন আগেই যখন ছাত্ররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল, তখন ওই শিক্ষকদের কেন যোগ দেওয়ানোর ব্যবস্থা করা হল, বুঝতে পারছি না।’’ প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করার দাবি জানান তিনি।

ঘটনার পর বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) দাবি করে, বৃহস্পতিবার মৃত রাজেশ সরকার তাঁদের সংগঠনের এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য। উত্তর দিনাজপুর জেলা জুড়ে আজ শুক্রবার ১২ ঘণ্টার বন্‌ধের ডাক দেয় বিজেপি। ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা করে এবিভিপি। বন্‌ধ ঘিরে সকাল থেকেই ইসলামপুর-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে অবরোধ বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রায়গঞ্জে সরকারি বাসে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিন ইসলামপুরে গিয়েছেন এবিভিপির রাজ্য সম্পাদক সপ্তর্ষী চৌধুরী।

Back To Top