চীন আমেরিকার সম্পর্ক আরো তলানিতে

সাইফুল্লা লস্কর : হোয়াইট হাউসে নিজের আগমনের পর থেকেই চিনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের পক্ষপাতী ছিলেন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার নির্বাচনী ইস্তাহারেও বলেছিলেন চীন বিশ্বে আমেরিকার স্বার্থের সব থেকে বড়ো দুশমন। বৈশ্বিক বানিজ্য বাজারে চীন আমেরিকার ক্ষতি করে যাচ্ছে এক দশকের বেশি সময় ধরে এবং পূর্ববর্তি সরকারগুলো তাদেরকে সেই সুযোগ উপলব্ধ করেছিল।

চিন আমেরিকার বানিজ্য ঘাটতি  :

চীনের সঙ্গে আমেরিকার বানিজ্য ঘাটতি ক্রমশ বৃদ্ধির পরিপেক্ষিতে ট্রাম্প কয়েক বছর পূর্বে চীন থেকে আমেরিকায় রপ্তানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়ে দেন। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে জি জিংপিং এর নেতৃত্বাধীন চিন, আমেরিকার পণ্যের ওপরও শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যা পারস্পরিক উত্তেজনা বাড়ায় এবং ভারত, জাপান সহ কিছু দেশের অর্থনীতির জন্য সুযোগ তৈরি করে।

করোনা ভাইরাসের বিস্তার এবং ‘হু’ এর সংশ্লিষ্টতা  :

চীন থেকে বিস্তার লাভ করা বৈশ্বিক মহামারীর আকার ধারণ করা  করোনা ভাইরাসকে চিনের ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করে আমেরিকা। ট্রাম্পের অভিযোগ, আমেরিকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র স্বরূপ ইচ্ছাকৃতভাবে এই ভাইরাসকে ছড়িয়েছে চীন সরকার। চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার অভিযোগ মতো কোনো ব্যাবস্থা না নেওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ ত্যাগ করে ট্রাম্পের আমেরিকা। গত মাস থেকে ‘হু’ কে আর্থিক অনুদান দেয়াও বন্ধ করে তারা।

হংকং প্রশ্ন  :

চীনের সংসদে হংকং এর জন্য তৈরি নতুন নিরাপত্তা আইন ক্ষুব্ধ করেছে আমেরিকাসহ অনেক পশ্চিমা দেশকে। এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের ওপর বলপ্রয়োগ করার কঠোর নিন্দা জানানো হয় হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে তারা হং কং এর ব্যাপারে চিনা নীতির নিন্দা জানায়। এটি চীনের ঘোষিত ‘এক দেশ দুই আইন’ নীতির পরিপন্থী।

দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ান প্রসঙ্গ  :

দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ানে চিনের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে। করোনায় ক্লান্ত এবং জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে উত্তাল আমেরিকা এখন তাইওয়ানকে সাহায্যের জন্য সেখানে মার্কিন রণতরী পাঠিয়েছে।

এই সব ঘটনা আমেরিকা এবং চীনের সম্পর্কের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলেছে। আমেরিকায় শিক্ষা অর্জনের জন্য যাওয়া প্রায় ৩ লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রীকে চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে শোনা যাচ্ছে। আমেরিকায় চীনের বিমান সংস্থা গুলোকে নিষিদ্ধ করবে বলে শোনা যায় হোয়াইট হাউস সূত্রে। অবশ্য পরে তারা এর থেকে পিছিয়ে এসে জানায় এমন পদক্ষেপ তারা এখনই গ্রহণ করছে না। অন্যদিকে আমেরিকার সিনেটে একটি বিল আনা হচ্ছে যাতে রাষ্ট্রপতিকে এককভাবে ক্ষমতা দেয়া হবে তিব্বত স্বশাসিত প্রদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার। এটি যদি হয় তাহলে ইতিমধ্যে শীতল বাতাসে কাবু চীন আমেরিকা সম্পর্কে যে বরফের আবির্ভাব হবে তা বলাইবাহুল্য।

Back To Top