চল্লিশ বছরের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সেতুতে পারাপার: ব্রিজ নির্মাণে বেনিয়মের অভিযোগ।

এই বাশের ব্রিজেই পারাপার কয়েকহাজার মানুষের

সানওয়ার হোসেন, হিঙ্গলগঞ্জঃ চল্লিশ বছর ধরেই এক ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে পারাপারকে নিয়তি হিসেবে মেনে নেওয়া গ্রামবাসীদের কাছে প্রকৃত অর্থেই যখন গোমতী নদীর ব্রিজটি অত‍্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঠিক তখনই নানা টালবাহানাতে এই ব্রিজের কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যা নিয়ে প্রশাসনের গদাই লস্করি মনোভাবের কারণে এই নির্মাণ ঘিরে গড়ে উঠেছে ব‍্যাপক অনিশ্চিয়তা, যা নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ দুটোই ছিল দেখার মতো।

গত ৬ ই এপ্রিল উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের হেমনগর পারঘুন্টী সংযোগকারী গোমতী নদীর ব্রিজটি সম্পর্কে উঠে এলো স্থানীয় মানুষের একরাশ অভাব অভিযোগ। প্রায় দেড়শো ফুট লম্বা প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মাণের বরাত দেওয়া হয় হাই রাইস নামক একটি ঠিকাদারি সংস্থাকে। যারা আবার সাব টেন্ডার নিয়ে কাজ শুরু করে তাপস পাঠক কন্সট্রাকশন নামক সংস্থা। ২০১৫ সালে এই কাজ শুরু হয়ে আঠারো মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল, যারই পিছনে ব‍্যায়বরাদ্দ ধরা হয়েছে চার কোটি টাকা। কিন্তু প্রথম প্রথম কাজ নির্বিঘ্নে এগোলেও পরবর্তীতে প্রকৃত কন্ট্রাক্টরের অসৎ উদ্দেশ্যের কারণে বারবার কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। যেখানে বরাত প্রাপ্ত সংস্থার বিরুদ্ধে এই ব্রিজ নির্মাণে নিম্ন মানের কাঁচামাল ব্যবহারের অভিযোগ উঠতে শুরু করে, শুধু তাই নয় ব্রিজটির ফাউন্ডেশনের জন্য যে গভীরতায় পিলার স্থাপন করে কাজ করার কথা এক্ষেত্রে সেটাও মানা হয়নি বলে অভিযোগ। নির্মাণে ব‍্যাবহার সিমেন্ট রড সবই নিম্ন মানের কাঁচামাল ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে খোদ নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে। যারই বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস‍্যা, যোগেশচন্দ্র চন্দ্র গ্রামের প্রধান বলেন আমরা এই ব্রিজটি নির্মাণ করা নিয়ে প্রথম থেকেই অভিযোগ পেয়েছি যার দরুন এর নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

বর্তমানে মিথকন নামক সংস্থার টেস্টিং রিপোর্টেও উঠে আসে বেনিয়মের অভিযোগ। যদিও এই কাজ শীঘ্রই শুরু হবে এমনটাই যোগেশচন্দ্র গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান নগেন্দ্রনাথ বৈদ‍্য জানান। যা নিয়ে কালিনগর পঞ্চায়েতের সদস‍্যার বক্তব্য হলো, ভালো ভাবে ব্রিজটি নির্মাণ করা হোক যাতে ভবিষ্যতে এটি ভেঙে না পড়ে। যদিও এই নির্মানের অচলাবস্থার জন্য স্থানীয় মানুষদের একাংশ শাসক দলের নেতাদেরই দায়ী করলেন। যেখানে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অনেক টাকার দাবি করাতেই নাকি কন্ট্রাকর কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। যা নিয়ে পরক্ষে স্থানীয় বিধায়কের বিরুদ্ধেও উঠলো একরাশ অভিযোগ। এদিনে প্রস্তাবিত ব্রিজটির সামনে যেতেই দেখা গেল প্রাণ হাতে নিয়ে কিভাবে একফালি বাঁশের সাঁকো পেরিয়েই মানুষ নদী পারাপার করছেন। যাদের সবার কথায় প্রায় চল্লিশ বছর ধরেই এরকম ভাবে তাদের জীবনের ঝুকি নিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে, যেখানে স্হানীয় হেমনগর স্কুলের বহু পড়ুয়ার কাছে একমাত্র স্কুলে যাওয়ার ভরসা ঐ ভয়ানক মারন ফাঁদ বাঁশের সাঁকোটি। এটা দিয়েই আপাতত স্কুল যাওয়া থেকে কাঁধে সাইকেল নিয়ে পার হতে দেখা গেল অনেককেই। যাই ক্ষোভ হয়ে ভোট বাক্সে শাসকদলের বিরুদ্ধে এখন ঝড়ে পড়বার অপেক্ষায়। যা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে এই স্কাসবি থেকে সুন্দর বন উন্নয়ন দপ্তরে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও। তাদেরই অসীম দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার জন্য নাকাল হতে হচ্ছে হেমনগর পারঘুন্টী এলাকার হাজার হাজার মানুষদের।

Back To Top