গ্রেফতার মানবাধিকার কর্মী এবং ছাত্রনেতাদের মুক্তি দিতে বলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের চিঠি অমিত শাহকে

সাইফুল্লা লস্কর : আমেরিকার মানবাধিকার সংস্থার পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার কমিটিও মোদী সরকারের মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে কঠোর ভাষায় চিঠি লিখে গ্রেফতার মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, লেখক এবং ছাত্র নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে বলেছে।
ভারতে মোদী সরকারের আগমনের পর থেকেই সরকার বিরোধী এবং সরকারের নীতির সমালোচনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তি, সংস্থা এবং দলকে সর্বক্ষেত্রে পর্যুদস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে মোদী সরকার। প্রথমে তাদের বিরুদ্ধে পোষা মিডিয়ার মাধ্যমে মিথ্যাচার করে তাদের নামে সাধারণ জনগণের মনে ঘৃণার বীজ বপন করা হয়, তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় হিন্দুত্ববাদী যোদ্ধারাও এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের বিরুদ্ধে মিডিয়া ক্যাম্পেইন চালানোর পর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে দিনের পর দিন রাখা হয় অন্ধকার কারাকক্ষে।

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরষ্ঠতার অহংকারে পরিপুষ্ট এই সরকার দেশের মধ্যে বিরোধী সব আওয়াজকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে ফ্যাসিবাদী এক মহল তৈরি করেছে। ভারতের মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে, এমনকি বিচারব্যবস্থাকেও তারা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের মতের বিরুদ্ধে রায় দেয়া বিচারক কোনো না কোনোভাবে হেনস্থা হয় সরকারের হাতে। তার অনেক উদাহরণ সামনে আছে। আছে জাস্টিস লোয়ার উদাহরণ যাকে সংবিধানের রাজ কায়েম করতে সত্য উদঘাটনের প্রচেষ্টার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। তার মৃত্যুর পিছনে যত প্রমাণ পাওয়া যায় তার প্রত্যেকটি জুড়ে আছে বিজেপি এবং বর্তমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে।

তিনি বলেন , ” এটা বিশেষভাবে বিপদজনক যে মানবাধিকার কর্মীরা হেনস্থা না হয়ে সমাজের দরিদ্র এবং প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষের পক্ষে কথা বলতে পারছেনা, তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য করানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ এর মতো আইনের ব্যাবহার করা হচ্ছে এমনকি সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হচ্ছে।”

এমনকি সাধারণ পর্যায় থেকে আসা মানবাধিকার কর্মী বা ছাত্র নেতাদেরও একই রকম পরিণতির সম্মুখীন হতে হয় সরকারের নীতির সমালোচনা বা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেয়ার জন্য। এবার সরকারের এই স্বৈরাচারী দমন পীড়ন মূলক নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অমিত শাহকে চিঠি লিখল ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটি। আনন্দ তেলতুম্বে, গৌতম নভালখার মতো অনেক মানবাধিকার কর্মীকে মুক্তি দিতে বলেছে তারা এই চিঠিতে। তারা এনআরসি এবং সিএএ এর মতো অসাংবিধানিক এবং বৈষম্যমূলক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কারণে যেসব ছাত্র নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরও মুক্তি চেয়েছে।

চিঠিতে ২০১৪ সাল থেকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য এবং তাদের পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির অধ্যক্ষা মেরি অ্যারোনা সরকারের একান্ত অনুগত এনআইএ এর মতো সংস্থা গুলোর কার্যপ্রণালির ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন সরকারের সমালোচনা করার জন্য অনেকের বিরুদ্ধে ইউপিএ এর মতো আইনের অপব্যাবহার করছে তারা। সাফুরা জারগার, শার্জিল ইমাম, আসিফ ইকবাল, খালিদ সাইফি, ডা. কফিল খান প্রমুখ ছাত্রনেতাদের গ্রেফতারের কোথাও উল্লেখ করেছেন তার বার্তায়। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রসঙ্ঘও এই ধরনের বন্দীদের মুক্তি দিতে বলেছে।

সরকারি বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে ‘বেআইনি কার্যক্রম’ এবং ‘সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সদস্য’ ইত্যাদি মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ আনা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তিনি আরো লেখেন, সরকারের বিরুদ্ধাচরণকে এখন অপরাধের সামিল করে দেয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে কাজ করা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই সংস্থা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তা খুব গুরত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।মোদী সরকারের চানক্য অমিত শাহের এই স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে যে বিশ্বব্যাপী আওয়াজ উঠছে তা ভারতের আন্তর্জাতিক সুনামের ওপর প্রভাব ফেলতে যে শুরু করেছে তা এখন প্রকাশ্য। এমন অনেক মানবাধিকার সংস্থার আন্তর্জাতিক রিপোর্টকে উড়িয়ে দেয়া মোদী সরকার এখন কি পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার।

Back To Top