করোনা ত্রান প্যাকেজ : মোদী বনাম ইমরান

সাইফুল্লা লস্কর : যেমন কোনো পরিবারের কর্তার পরিচালন দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় পাওয়া যায় তার পরিবারের সব থেকে কঠিন সময়ে ঠিক তেমনি কোনো রাষ্ট্রনেতার নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা ও সক্ষমতার সঠিক পরিচয় পাওয়া যায় তার নিজের দেশ যখন গভীরতম সংকটে পতিত হয়। ভারত এবং পাকিস্তান দুটোই তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ এবং করোনা সংক্রমনের প্রাথমিক পর্যায়ে দুটো দেশই লকডাউন ঘোষণার পর থেকে দুটি দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা শোচনীয় এবং সরকারের সাহায্যের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিভাবে এই দুই জননেতা নিজের বিপন্ন জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে সেটা এখন আলোচনার বিষয়।

আমরা ভারতীয়রা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ বলে গর্ববোধ করে থাকি অপর দিকে দুর্বল অর্থনীতির পাকিস্তানকে ভিখারী দেশ বলতেও ভালবাসে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মানুষ। ভারতের বর্তমান জিডিপি প্রায় ২.৭৩ ট্রিলিয়ান ডলার যেখানে পাকিস্তানের জিডিপি মাত্র ৩০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। করোনা সংক্রমনের সময় পাকিস্তানের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার ছিল প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার  যেখানে ভারতের কাছে ছিল প্রায় ৪৭৫ বিলিয়ান ডলার। দুটো দেশই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক,বিশ্ব ব্যাংক, আমিরিকা সহ অনেক দেশ ও সংস্থা থেকে কম বেশি আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করেছে।

লকডাউন ঘোষণার পর মোদী সরকার সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার একটা প্যাকেজ ঘোষণা করে, যার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা সাধারণের আর্থিক সাহায্যে জন্য বরাদ্দ করা হয়। প্রত্যেক উজ্জ্বলা যোজনার সুবিধাভোগীর জন্য বিনামূল্যে গ্যাস দেয়ার ব্যাবস্থা করা হয় এবং প্রত্যেক জন ধন একাউন্টে তিন মাসের ব্যবধানে ৫০০ করে ১৫০০ টাকা দেয়ার ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে ইমরান খানও সাধারণ মানুষের পাশে সঠিক সময়ে দাঁড়াতে পিছপা হননি। এহসাস ক্যাশ প্রোগ্রামের আওতায় প্রত্যেক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের একাউন্টে এককালীন ১২০০০ টাকা দেয়ার ব্যাবস্থা করেন।এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩১ লাখ ফ্যামিলি এই প্রকল্প থেকে আর্থিক সাহায্য পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় ৪৯ বিলিয়ান টাকা।

সাধারণ মানুষ যদি বৃহৎ অর্থনীতির কোনো সুফল না পায় তাহলে কিভাবে সেই অর্থনীতি আমাদের গৌরবের কারণ হয়? কোটি কোটি মানুষ যখন খাদ্যের অভাবে হাহাকার করছে ঠিক সেই সময় ২০ লাখ কোটির প্যাকেজ ঘোষণা সবার কাছে স্বস্তির বাতাস বহন করে আনলেও পরে জানা গেলো এই টাকা মূলত দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বরাদ্দ করা হবে, বাজারে টাকার যোগান বাড়ানো হবে, কাউকে কোনো আর্থিক অনুদান দেয়া হবেনা, দেয়া হবে শুধু লোন। দেশের সরকার যখন সাধারণ মানুষের কথা ভুলে শুধুমাত্র শিল্পপতিদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার কথা ভাবে তাকে জনদরদী সরকার বলা যায়না বরং যে সরকার নিজের সর্বোচ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাকেই জনদরদী সরকার বলে। যে দেশের দেশের বেশিরভাগ মানুষ ২০ লাখ কোটিতে কত গুলো শূন্য আছে তার খবর রাখেনা তারা তাই এই শিল্প দরদী প্যাকেজের মূল্য বুঝবে না এটাই স্বাভাবিক, তাদের গণনার জন্যে তো আছে শুধু শূন্য আর এটাই এখন তাদের প্রাপ্তি, এটাই গৌরব।

Back To Top