ইমলামোফোবীয়া : মধ্যপ্রাচ্য ও কানাডার সৌজন্যে নিজের অস্ত্রে ঘায়েল মোদী সরকার

সাইফুল্লা লস্কর : ইসলামোফোবিয়া শব্দটি আমেরিকায় ৯ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসবাদী হামলার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলির ডানপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন ও সংবাদমাধ্যমের কাছে বহুল ব্যাবহৃত একটি শব্দ। তবে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লীলাভূমি বলে পরিচিত ভারতবর্ষে ২০১৪ এর নির্বাচনে মোদী সরকারের আগমনের আগে ইসলামোফোবিয়ার অস্তিত্ব খুব একটা প্রকট ছিলনা। গত ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে মোদী সরকার শুধু মাত্র ইসলাম ও মুসলিম বিরোধিতার উপর নির্ভর করে বিপুল জনসমর্থন লাভ করে, এর ফলে গত কয়েক বছর ভারতবর্ষে মুসলিম বিরোধিতায় সরব রয়েছে বেশ কিছু প্রথম সারির জাতীয় স্তরের  সংবাদমাধ্যম, যার চরমরূপ পরিলক্ষিত হয়েছে দিল্লির নিজামউদ্দিন মসজিদের তাবলিগি ইস্তেমার ঘটনা পরবর্তী সময়ে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ইসলাম বিরোধিতার একটা বড়ো অংশ প্রবাসী ভারতীয়দের সাহায্যে পরিচালিত হয়। কিন্তু গত কয়েক্ সপ্তাহ কিছু আমীরাতী ও কুয়েতি বিশিষ্ঠ ব্যাক্তিত্ব এই নগ্ম মুসলিম বিরোধিতার বিরুদ্ধে টুইটারে সরব হয়েছেন যাদের মধ্যে আছেন আমীরাতি রাজ পরিবারের সদস্যা প্রিন্সেস মেন্ড আল কাসিমী এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের পরিচালক মেজবেল সারিকা যিনি নিজস্ব উদ্যোগে এই বিষয়টিকে জেনভায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সভায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সঙ্গীত শিল্পী সনু নিগম,বিজেপি সাংসদ সদস্য তেজস্বী সূর্য,বিজেপির রাজ্যসভার সদস্য সুভ্রমনিয়াম স্বামীদের পুরনো মুসলিম বিরোধী টুইটগুলি তুলে ধরে মধ্য প্রাচ্যের টুইটার ব্যাবহারকারীরা ভারত সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন এই সব ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য। ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে অনেক ভারতীয়কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলাম এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অনেককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। শুধু মাত্র মধ্যপ্রাচ্যে নয় কানাডা থেকে কিছু সংঘের আদর্শের অনুসারী ঘৃণার প্রচারককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে একই কারণে।দেশের চরম এই অর্থনৈতিক সংকটের মুহূর্তে বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম রেমিট্যান্স বাজারে এমন অপ্রত্যাশিত গতিবিধি সাউথ ব্লকে নীতিনির্ধারকদের চিন্তায় ফেলবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

তাই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে টুইট করে সৌহার্দের বার্তা দিতে হয়েছে। ৫৭ সদস্যের সংগঠন ওআইসি ভারতে মুসলিমদের উপর এই আক্রমণের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যার জবাবে সংখ্যালঘু দপ্তরের মন্ত্রী মোক্তার আভাস নাকভী বিবৃতি দিয়ে ভারতকে মুসলিমদের জন্য স্বর্গ বলে ড্যামেজ কন্ট্রোলের বৃথা চেষ্টা করলেও মোদী সরকারের তৈরি এই সাম্প্রদায়িক ঘৃণার বাতাবরণ সবার সম্মুখে উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। বিশিষ্ঠ সাংবাদিক রানা আয়ুব বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যের থেকে চাপের ফলে সৌহার্দের বার্তা দিতে বাধ্য হয়েছেন।নিজের অস্ত্রে ঘায়েল মোদী সরকার এখন ঘরে বাইরে উভয় সংকটে পতিত হয়েছে। এখন সরকার কিভাবে এই পরিস্থিতি সামলায় ও ভারতবর্ষের এই নব ইসলামোফোবিয়া কোন দিকে মোড় নেয় তা এখন দেখার।

Back To Top