কবিতাঃ পুরুষোত্তম….

লেখক অজানা!

একটা সন্তান চাই রাবণের মত,
যে মায়ের চোখ জল
পারবে না সহ্য করতে।

একটা ভাই চাই রাবণের মত,
যে বোনের সম্মান রক্ষায়
ঝাঁপিয়ে পরবে মুহূর্তে।

একটা ভক্ত চাই রাবণের মত,
যে ভক্তি করবে মনপ্রাণ দিয়ে।

একটা শাসক চাই রাবণের মত,
যে দেশকে সাজাবে সোনা দিয়ে।

একটা স্বামী চাই রাবণের মত,
যে স্ত্রী বিবাহপূর্বে
অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে জেনেও
তাকে রাখবে পাটরানী করে।

একটা পিতা চাই রাবণের মত,
যে সন্তানদের ভালোবাসবে
পাগলপারা হয়ে।

একটা পুরুষ চাই রাবণের মত,
যে অপহরণকারী হয়েও
দাম দেবে আমার মতামতের।
যার কাছে আমার মনুষ্য সত্ত্বাই গুরুত্বপূর্ণ,
কিন্তু দাম নেই শরীরের।
সে আমায় অপহরণ করুক,
কিন্তু সম্মান হানি করবে না আমার।
আমায় সে রাখুক বন্দী করে,
কিন্তু মিথ্যে পুরুষত্বের অহংকার
সে চাপাবে না আমার ওপর।

তোমরা তোমাদের রামকে রাখো,
এমন পুরুষ চাই না আমার।
শো অফের ভালোবাসায় ব্যস্ত সে,
কিন্তু সংজ্ঞা জানে না ভালোবাসার।
স্ত্রীকে রক্ষা করতে না পেরে যে
স্ত্রীর কাছেই চায় অগ্নিপরীক্ষা।
সে পুরুষকে কি আদৌ ভালোবাসা যায়?
করা কি যায় তার অপেক্ষা?

যে পুরুষটি তার অন্তঃসত্ত্বাকে স্ত্রীকে
বিনা কারণে পাঠায় বনবাসে,
সেই পুরুষটির প্রতি ভালোবাসা দূরে থাক,
সম্মানটাও কি কভু আসে?

যে পুরুষটি নিজের সন্তানকে
সন্দেহের বশে করে পরিত্যাগ,
সে পিতা কি আদৌ
পিতা হতে পারে?
সন্তানের প্রতি দেখাতে পারে অনুরাগ?

যে পুরুষটির সন্দেহের কাছে হেরে
স্ত্রী ঠাঁই নেয় ধরণী মাতার ক্রোড়ে,
হায় রে সমাজ সেই পুরুষটিকেই
পুজো করে এসেছে যুগ যুগ ধরে।

সেই পুরুষটি চির দাহ্য যে,
নারীর ইজ্জতকে দিল সম্মান,
জানি না এ কোন নিয়ম,
যেখানে পদে পদে হয়
মনুষ্যত্বের অপমান।

তোমরা তাই রামকেই রেখো,
রামকেই বসিও দেবতার আসনে।
আমায় বরং রাবণ দিও,
আমি আমার শ্রদ্ধা জানাব তারই চরণে।
আমার পূজার ফুল
আমি তার পায়েই দেব,
যার নারীর প্রতি রয়েছে সংবেদনশীলতা।
যার কাছে নারী ভোগ্য নয় কোনোভাবেই,
যার ব্যবহারে প্রকাশিত রুচিশীলতা।
প্রতারণায় সে হেরে যায় নি,
উঠে দাঁড়িয়েছে দৃঢ় সাহস নিয়ে,
তোমাদের চোখে সে হয়ত অহংকারী,
আমার মাথা নত হয় তার পায়ে গিয়ে।

জানি না সে অসুর কেন?
অসুরের কি গুণ আছে তার?
অসুর হয়েও সে অসুর হল না,
দেবতা হয়েই আত্মপ্রকাশ হল তার।

মন্দিরে তার স্থান হল না, হল না তার স্থান কারো
পুজোর সিংহাসনে,
তবুও সে এমন এক সত্ত্বা,
যে গেঁথে গেল সবার চিন্তনে মননে।

যুদ্ধে তাকে মারা হল ঠিকই,
বলা হল তার অহংকার দমিত হয়েছে।
লক্ষ্য করল না কেউ কখনো
আসলে তার চরিত্র গৌরবান্বিতই হয়েছে।

তার অহংকার তার চরিত্রে বিরাজে,
তার অহংকার তার সত্ত্বায়,
তার হুংকারে অহংকার তার,
তীব্র অহংকারের বহিঃপ্রকাশ রুচিশীলতায়।
পুরুষোত্তমের মর্যাদা পেল না কেন সে
বিতর্ক থাক না হয় আজ,
আমার কাছে সেরা পুরুষ রাবণই,
তাই তার মাথাতেই তব পুরুষত্বের তাজ৷

খলনায়ক হয়েও নায়ক সে,
অসুর হয়েও দেবতা।
রাবণ দহন ব্যর্থ তাই,
তার দহনেই লুকিয়ে তার সফলতা।

Back To Top