আরএসএস পেছন থেকে ছুরি মেরেছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ ও নেতাজীর স্বাধীনতা যুদ্ধকে

~মলয় তেওয়ারী

আরএসএস পেছন থেকে ছুরি মেরেছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ ও নেতাজীর স্বাধীনতা যুদ্ধকে। ১৯৪১ সালে সাভারকার সরাসরি বলেন যে যুদ্ধ যখন দোরগোড়ায় এসে হাজির হয়েছে তখন হিন্দুদের তাকে সুযোগ হিসেবে নিতে হবে, ব্রিটিশ বাহিনীতে সব উইংএই ব্যাপকভাবে নাম লেখাতে হবে। শুধু ভাষণ নয়, কাজেও ঝাঁপিয়ে পড়েন সাভারকার। পরবর্তী কয়েক বছর ধরে রীতিমত রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্প সংগঠিত করে ব্রিটিশ বাহিনীতে ‘হিন্দু’-দের নিয়োগ করতে থাকেন যারা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ধরে এগিয়ে আসা আজাদ হিন্দ বাহিনীকে আটকাবে। এই রিক্রুটমেন্টের জন্য এমনকি একটি কেন্দ্রীয় বোর্ডও গঠন করে ফেলে হিন্দু মহাসভা ও আরএসএস, যে বোর্ড ব্রিটিশ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে কাজ করবে। সাভারকারের এই উদ্যোগ আজাদ হিন্দ বাহিনীকে বিধ্বস্ত করতে ব্রিটিশদের অত্যন্ত সহায়ক হয় এবং সাভারকারের রিক্রুট করা ‘হিন্দু’ সেবকরা উত্তর পূর্বাঞ্চলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর বহু সেনাকে হত্যা করে।

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের প্রতিষ্ঠিত আজাদ হিন্দ বাহিনী যে কেবল ভারতের হিন্দু-মুসলমান-শিখ সহ সমস্ত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তাবাদের মূর্ত প্রতীক হয়ে দেশের মানুষের সামনে হাজির হচ্ছিল তাই নয়, সেই বাহিনীতে লক্ষ্মী শেহগালের নেতৃত্বে চালিত সম্পূর্ণত মহিলা যোদ্ধা ও মহিলা অফিসারদের ‘ঝাঁসির রাণী ব্যাটেলিয়ন’ ছিল নারী-পুরুষ সম-মর্যাদায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকার। বলা বাহুল্য জাত-ধর্ম-লিঙ্গ নির্বিশেষে সম মর্যাদায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এই জাতীয় মুখচ্ছবিটি আরএসএসের সবর্ণ-হিন্দুত্ববাদী-পৌরুষের সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধ মেরুর। আরএসএস নিযুক্ত সেনাদের তাই আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া সহজ ছিল। উত্তর পূর্বাঞ্চলে পরাজিত আজাদ হিন্দ বাহিনীর যোদ্ধাদের অনেককে তারা হত্যা করেছিল।

একথা ঠিক যে নেতাজীর সশস্ত্র স্বাধীনতা উদ্যোগকে কংগ্রেস মেনে নেয়নি এবং স্বাধীনতার পরও নেতাজীকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়নি। নেতাজীর মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্যও কখনও প্রকাশ্যে আনেনি কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেস পার্টির সেই অন্যায় ও ব্যর্থতার ফাঁক গলে আজ আরএসএস প্রচারক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজাদ হিন্দ ফৌজের স্মরণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে আর নেতাজীর গলায় মালা দিয়ে আরএসএসের বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাসকে আড়াল করতে চাইছে। আরএসএসের হাতে যে আজাদ হিন্দ ফৌজের রক্ত লেগে আছে তা ভুলিয়ে দিতে চাইছে। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের কথা ভেবে জনতাকে ধোঁকা দেয়ার জন্য সাধু সাজছে মোদি, আজাদ হিন্দ ফৌজের ঐক্য ও ভালোবাসার আদর্শকে ধ্বংস করে বিভাজন ও বিদ্বেষের রাজনীতি কায়েম করাই আরএসএস-বিজেপির আসল লক্ষ্য।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এখানে

Back To Top