ইন্তেকাল করেছেন বাংলাদেশের অন্যতম বড় আলেম আল্লামা শফী, চলুন দেখে নি এক নজরে তার জীবনি

বাংলাদেশের ইসলামি শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের একজন ছিলেন শাহ আহমদ শফী, তিনি আল্লামা শাহ আহমদ শফী বা আল্লামা শফী নামেও পরিচিত। ইসলামিক দল হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা এবং আমির হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণেই তিনি বেশি পরিচিতি লাভ করেন।

কওমি মাদরাসা শিক্ষায় তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। ইসলামি ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি বেশকিছু ধর্মীয় বইও লিখেছেন। একইসাথে তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ছিলেন। দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারীর মহাপরিচালক ছিলেন মৃত্যুর দুইদিন আগেও।

আল্লামা শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায় পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসা এবং হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার পর ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসাতেও চার বছর লেখাপড়া করেন। ১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন তিনি। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন।

আল্লামা শাফী ২০০৯ সালে আজিজুল হক ও অন্যান্য সিনিয়র ইসলামী ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করেন যেখানে, ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রমের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়।

২০১৭ সালে তার সঙ্গে বৈঠকের পর কওমির সনদের স্বীকৃতি এবং সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে কওমি মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন আহমদ শফী, যাদের কাছে তিনি ‘বড় হুজুর’ নামে পরিচিত। তিনি কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি ছিলেন।

গত বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আহমদ শফীর পদত্যাগ এবং তার ছেলে আনাস মাদানীকে মাদরাসা থেকে বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবি নিয়ে দারুল উলুম হাটহাজারীর ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। দুপুর থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়।

রাতে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয় এবং পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আল্লামা শফী চট্টগ্রামের হাটহাজারী বড় মাদরাসার মুহতামিম পদ (মহাপরিচালক) থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। পরে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের কারণ দেখিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাটহাজারী মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এর আগে ছাত্ররা সরকারের এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল।

সর্বশেষ শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে আল্লামা শফী বার্ধক্যজনিত কারণে রাজধানীর পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বাংলায় ১৩টি ও উর্দুতে নয়টি বইয়ের রচয়িতা তিনি। আল্লামা শফী রচিত উর্দু গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছে- ফয়জুল জারী (বুখারীর ব্যাখ্যা), আল-বায়ানুল ফাসিল বাইয়ানুল হক্ব ওয়াল বাতিল, ইসলাম ও ছিয়াছাত, ইজহারে হাকিকাত।

বাংলা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব, ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা, ইসলাম ও রাজনীতি, সত্যের দিকে করুন আহ্বান, সুন্নাত ও বিদ’আতের সঠিক পরিচয়।

Back To Top