ফিলিস্তিনের অধিকার রয়েছে নিজেদের রক্ষা করার

~গ্রেগ সুপক

ইসরাইলের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট পশ্চিমা বিশ্ব নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের আত্মরক্ষার প্রশ্নে নিরব কেন?

সোমবার জারি করা এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস গাজা থেকে ইসরাইলে রকেট হামলার “কড়া ভাষায়” নিন্দা জানিয়েছেন। “উভয় পক্ষে উত্তেজনা প্রশমনের” আহ্বান জানিয়ে, প্রাইস “ইসরাইলের আত্মরক্ষার, নিজের জনগন এবং ভূখণ্ড রক্ষার বৈধ অধিকারের” স্বীকৃতি প্রদান করেন।

আল-কুদস পত্রিকার ওয়াশিংটন ব্যুরো প্রধান যখন জিজ্ঞাসা করেন যে ফিলিস্তিনিদের ও আত্মরক্ষার অধিকার আছে কি না, তখন প্রাইসের প্রতিক্রিয়া ছিল, অবশ্যই “আত্মরক্ষার ধারণাটি” যে কোনও রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রযুক্ত হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রহীন ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরাইল প্রেমী যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এই জাতীয় কোনও অধিকারের স্বীকৃতি দেয় না।

আত্মরক্ষার ব্যাপারে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের প্রতি এই আচরন পশ্চিমা গণতন্ত্রগুলো, কর্পোরেট মিডিয়াগুলো এবং রাজনীতিবিদদের চরম দ্বিচারতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। মিডিয়া একগ্রিগেটর ফ্যাকটিভা এর অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে পাঁচটি মার্কিন সংবাদপত্র সর্বাধিক প্রচলনযুক্ত – ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইউএসএ টুডে, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস “ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার”, “ইসরাইলের অস্তিত্ব রক্ষার অধিকার রয়েছে”, বা “ইসরাইলের নিজের আত্ম রক্ষার অধিকার রয়েছে” – এই শতাব্দীতে এই শব্দরাশি সহ মোট ৩৪৩ টি আর্টিকেল প্রকাশ করেছ।

“ফিলিস্তিনিদের আত্মরক্ষার অধিকার” এর ব্যাপারে এই শীর্ষ স্থানীয় মার্কিন দৈনিকগুলোতে খোঁজ করলে একই সময়ে মাত্র দুটো নিবন্ধের দেখা মেলে।

পশ্চিমা দ্বিচারিতার ধারণা এবং নীতি অনুসারে ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজের হত্যা, হামলা এবং বিতাড়ন নিরবে স্বীকার করবে এবং ইসরাইলি বর্বরতা ও দখলদারিত্বের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করবে। বর্তমানে, এর অর্থ জেরুজালেমের অদূরে অবস্থিত শেখ জারারাহের ছয়টি ফিলিস্তিনি পরিবারকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ করাকে ও স্বাগত জানাবে। এর অর্থ হ’ল যে ফিলিস্তিনিরা ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ আল-আকসা প্রাঙ্গণে ইসলামী ক্যালেন্ডারের পবিত্রতম মাস রমজানে রবার মেটাল বুলেট, গ্রেনেড এবং টিয়ার গ্যাস দ্বারা কাপুরুষোচিত ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করবে না।

রবিবার অবধি, জেরুজালেমের প্যালেস্তাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ৫৪১ ফিলিস্তিনিকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে যাদের ইসরাইলের অবৈধ বাহিনী রাবার দ্বারা আবৃত ধাতব বুলেট, টিয়ার গ্যাসের ক্যানিটার ব্যবহার করে আহত করেছে। এছাড়াও বিপুল সংখ্যক পুলিশের সাহায্যে অমানবিক মারধর করা হয়েছে নামাজরত মুসুল্লিদের। এমনকি জিয়নবাদিরা আহতদের চিকিৎসার জন্য সেখানে উপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মীদের পৌঁছতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। যেতে দেয়নি কোনো অ্যাম্বুলেন্সকে। ফিলিস্তিনিদের আত্মরক্ষার অধিকারকে অস্বীকার করার পাশাপাশি, ইস্রায়েল নাবলুস, বেথলেহম, ক্যালকিল্যা এবং হিব্রোনের মতো শহরগুলিতে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের নিশানা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এর মধ্যে শতাধিক বিক্ষোভকারীদের চিকিত্সা সহায়তার প্রয়োজন হয়।

২০০৮ সাল থেকে ইস্রায়েল প্রায় ৬০০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বেসামরিক – ১,২৫০ শিশু ছিল। তুলনা করে, একই সময়ে ২৫১ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ইসরাইলি দখলদারিত্বের কবলে পড়ে ১১,৪০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে পূর্ব জেরুজালেমে ২,৬০০ এরও বেশি। প্রায় ৬২০,০০০ ইসরাইলিরা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পূর্ব জেরুজালেম সহ পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনের জমিতে অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে।

ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে গাজার ৬৮.৫% ফিলিস্তিনি খাদ্য নিরাপত্তায় ভুগছে এবং ৫৩% দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছে, যখন “সমস্ত উৎপাদনশীল ক্ষেত্র, মৌলিক সামাজিক পরিষেবা এবং অবকাঠামোগুলি” ধ্বংস হয়ে গেছে। কারণ, “গাজার আর্থ-সামাজিক কাঠামোগুলি ভেঙে পড়ছে সমুদ্র, স্থল ও বায়ুপথে ১২ বছর ব্যাপী ইসরাইলের অবৈধ অবরোধের ক্রমবর্ধমান প্রভাব।” অবরোধটি গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে এবং রোগের বিস্তারকে মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতে ও অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল গাজা বাসীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। তাদেরকে ভ্যাকসিন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে।

ফিলিস্তিনিদের আত্মরক্ষার অধিকার ইসরাইল, ইসরাইল প্রেমী রাষ্ট্রগুলো বা গণমাধ্যম দ্বারা স্বীকৃত নাও হতে পারে, তবে এটি আন্তর্জাতিক আইনে এটি স্বীকৃত। ১৯৮২ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সশস্ত্র সংগ্রামসহ সকল উপলব্ধ উপায়ে ঔপনিবেশিক ও বৈদেশিক আধিপত্য এবং বিদেশী দখল থেকে জনগণের সংগ্রামের স্বাধীনতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, জাতীয় ঐক্য ও মুক্তির সংগ্রামের বৈধতা দিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করে। প্রস্তাবটিতে ১১ বার ফিলিস্তিনিদের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। তাদেরকে স্পষ্টভাবে “বিদেশী ও ঔপনিবেশিক আধিপত্যের অধীন জাতি” হিসাবে বর্ণনা করে।

গ্রেগ সুপক কানাডার গালেফ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া স্টাডিজ এর অধ্যাপক এবং দ্য রং স্টোরিঃ ফিলিস্তিন, ইজরায়েল এবং মিডিয়া গ্রন্থের প্রণেতা। (OR BOOKS)

এই লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে জ্যাকোবিন অনলাইনে, মূল লেখাটি এখানে ক্লিক করে পড়তে পারেন। দিনকাল ডট ইন এর জন্য অনুবাদ করেছেন সাইফুল্লাহ লস্কর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top