নিয়তি – পর্ব ১

~আসমা আক্তার পিঙ্কি

— আমার দুটো বাচ্চা আছে জেনে ও আপনি আমাকে বিয়ে করলেন?
বিয়ের প্রথম রাতেই ইমাদের মুখ থেকে এমন কথা শুনে নাজিফা একটু শুকনো হেসে বললো —- হাসালেন আপনি আমাকে। আরে আমি নিজেই তো একজন ডিভোর্সি মহিলা, স্বামীর সাথে সংসার করতে- না করতেই দু বছরের মাথায় ও আমাকে ডিভোর্স দিলো। আমার আবার পছন্দ— অপছন্দ। পরিবারের কাছে এই ১ টা বছর বোঝার মতো ছিলাম, অবশেষে আপনার সাথে বিয়ে হওয়ায় একটু মুক্তি পেলাম। কিন্তু আপনি আমাকে কেন বিয়ে করলেন?

নাজিফার কথার উওর দিতে গিয়ে ইমাদের চোখ দুটো লাল হয়ে যায়, কিছুসময় নিশ্চুপ থেকে ইমাদ বললো — আমি তো আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি, ইনফ্যাক্ট এ বিয়েতে রাজি ও ছিলাম না, কিন্তু মা অনেক জোর করলো, আমাকে নিয়ে হাপিঁয়ে গেছে মানুষ টা, সেদিন আমার সামনে এসে মায়া ময় কন্ঠ বললো

— বাবা তুই কী আমাকে বেঁচে থেকে ও মরার লাশের মতো রাখবি।
সেদিন মায়ের কথাটি শুনে খুব কষ্ট হলো, আলতো করে মায়ের কোলে মাথা রেখে

বললাম— মা তুমি কেন এমন বলছো?
মা তখন দুহাত তুলে আমাকে বললো — দে না বাবা আমাকে একটা বউ, মানুষের জীবনে তো এমন সুখ– দুঃখ থাকেই, কিন্তু তাই বলে কী তুই নিয়তির সাথে রাগ করে জীবনকে থামিয়ে রাখবি??
সন্তান গুলোর কথা অন্তত ভাব, ওদের পুরো জীবনটা এখন ও পড়ে আছে। ওদের ও তো মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার আছে।

সেদিন কেন জানী মায়ের কথা গুলো খুব লাগলো , মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আপনাকে বিয়ে করতে বাধ্য হলাম।

ইমাদের কথা শুনে বিশাল ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে থাকা মেয়েটির চোখ দুটো অশ্রুতে ভিজে গেলে, কিন্তু ইমাদ সে খবর নিলো না, বরং তিক্ত কথা শুনাতে লাগলো — দেখুন আমি আপনাকে কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো কীনা জানীনা, তবে বন্ধু হিসেবে আপনাকে সবসময় সাহায্য করবো, আর হ্যা আপনার আগের স্বামী আপনাকে ছেড়ে দিয়েছে কেন, সেটা ও আমি জানীনা, তবে জানতে ও চাইনা, কারন আপনাকে নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই, তবে মায়ের থেকে যেটুকু শুনেছি আর এতোক্ষণে আপনাকে যেটুকু দেখেছি তাতে আমার মনে হচ্ছে আপনি খুবেই পরেহেজগার, আর সেই জন্যই হয়তো আমাদের বিয়েটাও মসজিদে হয়েছে, কিন্তু বুঝতে পারছিনা আপনি এতো পরেহেজগার হওয়া শর্তে ও আপনার হ্যাজবেন্ড আপনাকে ছেড়ে কেন চলে গেছে?????

আবার সেই প্রশ্নটার সম্মুখীন, এই ১ বছরে মেয়েটি এই প্রশ্নটি শুনতে– শুনতে প্রায় ক্লান্ত হয়ে যায়। ভেবেছে এবার একটু মুক্তি পাবে কিন্তু তাও হলোনা।

ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে থাকা মেয়েটি ইমাদের প্রশ্নের কোনোই উওর দিলোনা।
ইমাদ একটু সংকোচ করে তখন বললো।
আসলেই কী আপনি ভালো? নাকি ভালো হওয়ার অভিনয় করছেন।
নাজিফা তখন শান্ত কন্ঠে বললো —- হয়তো খারাপ তাই আজ অবধি কারো মনে জায়গায় পেলাম। না।
—- আপনি কী আমার কথায় রাগ করেছেন?
— এ মা কী বলছেন, রাগ কী সবার উপর করা যায় বলুন, রাগ করতে হলে মানুষটার উপর অধিকার থাকতে হয়।

ইমাদ আর কোনে জবাব দিলোনা, একটু নিচু করে মুখটাকে রেখে নাজিফাকে উদ্দেশ্য করে বললো — দেখুন আমি জানীনা আপনি দেখতে কেমন? আর আপনাকে দেখার ও আমার কোনো আগ্রহ নেই, তবে আপনাকে একটা কথা বলে রাখি আপনি প্লিজ আমার কাছে কখনো স্ত্রী র অধীকার চাইবেন না।

—- চাইবো না, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলাই আমার জন্য যথেষ্ট ।

নাজিফার কথা শেষ না হতেই দরজায় কেউ নক করতে লাগলো, ইমাদ একটু চিন্তিত হয়ে দরজার সামনে গিয়ে বললো………..!

 

দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

Back To Top