গ্রন্থ পর্যালোচনাঃ দুই বঙ্গের স্মরণীয় মুসলমান

 

অবিভক্ত বঙ্গের মুসলিম ব্যক্তিত্বদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা গ্রন্থ

বইঃ দুই বঙ্গের স্মরণীয় মুসলমান

লেখকঃ মোহাম্মদ সাদউদ্দিন

শিখা প্রকাশনী, ৩৮/২ক, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০, বাংলাদেশ

প্রথম প্রকাশঃ কলকাতা বাংলাদেশ বইমেলা,

নভেম্বর ২০১৮, মূল্যঃ ২৭৫

 

সারা পৃথিবীতে ইসলাম-মুসলমান-সন্ত্রাস যেন একটি সমার্থক ভাবনায় অবস্থান করছে। ‘Islam in danger’ নামক তত্ত্বটি সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের দোসররা চাউর করছে বেশি। এখনও সেই অপ্প্রচার চলে আসছে। ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে একশ্রেণীর সংবাদ মাধ্যম বহাল তবিয়তে মুসলিমদের সম্পর্কে নেতিবাচক অপ্প্রচার করে আসছে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার বর্ধমান শহরের খাগড়াগড়ে সুবিখ্যাত জিটি রোডের ধারে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় একশ্রেণীর মিডিয়া পশ্চিমবাংলার সমগ্র মুসলিম সমাজকে কাঠগড়ায় তুলেছিল। জেহাদি প্রশিক্ষণের গল্প ফেঁদেছিল। সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ, হায়দ্রাবাদের মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণ, অক্ষরধাম মন্দির বিস্ফোরন ইত্যাদি ঘটনাগুলিতে আজ দিনের আলোর মত প্রমাণিত হয়েছে যে, সংঘ পরিবার বা আর এস এস বিজেপির দোসররাই ওই সব ঘটনার জন্য দায়ী।

বাংলার মাটিতে বিশেষ করে দুই বাংলার মাটিতে প্রায় ৮০০ বছরের বেশি সময় ধরে বাঙালী বসবাস করছে। সুদীর্ঘকাল সুলতানী ও নবাবী শাসন ছিল এই বাংলায়। তাদেরও যে গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। তাঁদের মধ্যেও যে রামমোহন বিদ্যাসাগর কিংবা বঙ্কিম-নেতাজীর মতো ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁদের মধ্যেও যে সাহিত্যিক – রাজনীতিক – সমাজসেবী, ইতিহাসবিদ ছিলেন। সে ইতিহাস মৃত প্রায়। আর সেই মৃত ইতিহাসগুলিকে উদ্ধার করে সাংবাদিক – গবেষক – কবি মোহাম্মদ সাদউদ্দিনের গ্রন্থ ‘দুই বঙ্গের স্মরণীয় মুসলমান’। ঢাকার শিখা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির মধ্যে হাজী মহম্মদ মহসীন থেকে (১৭৩২) থেকে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান (১৯২০) পর্যন্ত ৪৫ জন ব্যক্তিত্ব এসেছেন। এই ফাঁকে আর যারা এসেছেন তাঁরা হলেন প্রথম বিলাতযাত্রী মির্জা ইহতেসামউদ্দিন, নবাব আব্দুল লতিফ, ওবাইদুল্লাহ আল ওবাইদি সোহরাওয়ারদি, (মুসলিম সমাজের বিদ্যাসাগর), নবাব আব্দুল জব্বার, আদালত খান, দেলওয়ার হোসেন আহমেদ (প্রথম মুসলিম গ্রাজুয়েট) সৈয়দ আমীর আলী, সৈয়দ শামসুল হুদা, আব্দুল ওয়ালি, স্যার আব্দুর রহিম, খান বাহাদুর আব্দুল আজিজ, সাহিত্যিক সেখ আব্দুর রহিম, তিতুমীর, বাংলার তিন প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক, নাজিমউদ্দিন ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদি, মওলানা আকরাম খাঁ, সৈয়দ নওশোর আলী, বাদ যাননি নবাব সলিমুল্লাহ, মওলানা আবুল কাসেম, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, সৈয়দ বদরুদ্দোজা, হুমায়ুন কবীর প্রমুখরা এসেছে। মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, স্যার আজিজুল হক, হাসান সোহরাওয়ার্দি, কুদরত-ই-খোদা, কিংবা ভাষাতত্ত্ববিদ ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও ধ্বনিতত্ববিদ মুহম্মদ আব্দুল হাই-দের মতো ব্যক্তিত্বরা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছিলেন। লেখক তাদের নতুন করে দুই বাংলার পাঠক সমাজের কাছে তুলে এনেছেন। একটা দেশ কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ভাগ করা যেতে পারে।

কিন্তু একই ভাষাভাষী মানুষের ইতিহাসকে ভাগ করা যায়না। মোহাম্মদ সাদউদ্দিন বাঙালি মুসলমানদের লুপ্ত ইতিহাসের একটি অংশকে আবার জীবন্ত করে তুলে এনেছেন। বইটি ইতিমধ্যে কলকাতায় ‘বাংলাদেশ বইমেলা ২০১৮’ তে বেস্ট সেলের মর্যাদা পেয়েছে। বইটি পাঠকের কাছে নতুন খোরাক তা বলাই বাহুল্য। সংক্ষিপ্ত, নাতিদীর্ঘ কিংবা ছোট-বড় আকারে এইসব ব্যক্তিত্বদের ইতিহাসকে তুলে এনেছেন লেখক। এই পুস্তকের মাধ্যমে অ-মুসলিমদের মুসলিমদের সম্পর্কে যে ধারণা তা অনেকটা কেটে যাবে পাঠকের হাতে পৌঁছালে। কলকাতায় ইতিমধ্যে অমুসলিম পাঠকের মধ্যে বইটি সাড়া ফেলেছে। কলকাতার কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ায় বইটি এখন পাঠকের মুখেমুখে। ঢাকায় বা বাংলাদেশের পাঠকরাও ঋদ্ধ হবেন। ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় একুশের বইমেলাই শিখা প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাবে। ঢাকায় একুশের বইমেলা পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হবে।

বইটির সমালোচনা করেছেন ~নিজাম পারভেজ শুভো

 

(আপনি কি চান আপনার বই এর সমালোচনা? তাহলে দেরী না করে আজকেই যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে, বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।)

Back To Top