এতো জাত বিচার নয়, রীতিমত টানা হেঁচড়া চলছে হনুমান-কে নিয়ে

এমনই অবস্থা, যে যখন পারছে প্লেটে নিয়ে খেয়ে নিচ্ছে। আজ এর প্লেটে তো কাল অন্নের প্লেটে। আর এটা হচ্ছে স্বয়ং “হনুমান”-কে নিয়ে। ঠিক শুনেছেন, এই রকমই অবস্থা বর্তমানে “হনুমান”-এর। নিজের সুবিধার্থে যে যখন পারছে তার দলে টানছে হনুমানের জাত বিচারের মাধ্যমে। আর এই প্রথা শুরু করেছিলেন বিজেপি-র গেরুয়া মুখ, নাম পরিবর্তনের মহারাজা, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর নামের পিছনে যতই উপসর্গ লাগাই তা সবই ক্ষুদ্র। তারপর একের পর এক বিজেপি মন্ত্রীরা হনুমানের জাত বিচারে উঠেপড়ে লেগে পড়েছেন। পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের আগে এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন তিনি, বলেছিলেন “হনুমান নিজে ছিলেন একজন দলিত”। তারপর বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুক্কাল নবাব হনুমান-কে বানিয়েছেন মুসলিম। যুক্তি দেখিয়েছেন “মুসলমানের যেমন নাম হয় রহমান, রমজান, ফরমান, তেমনই হয়েছে ‘হনুমান’। অতএব তিনি একজন মুসলিম”। আর তার পরে এই লাইনে যোগদান করে যোগীর ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী লক্ষ্মী নারায়ণ চৌধুরী। তিনি বানিয়েছেন ‘জাঠ’। কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন জাঠেরা ঠিক তেমন ভাবেই অন্যায় দেখলে ঝাপিয়ে পড়েন, সীতাহরণের পর হনুমান যেভাবে লঙ্কাপুরী জ্বালিয়ে ছারখার করিছেলেন। এই জাতবিচার কাণ্ড রীতিমত প্ররোচনাদায়ক এবং বিভ্রান্তিকর তা বলা বাহুল্য। নির্বাচনের পরও তার একটু শান্তি নেই হনুমানজির। এই জাত বিচার সম্পর্কে সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেছেন “প্রমাণ তো হল হনুমান সকলের”। আবার এই সব দেখে কংগ্রেসের কেউ কেউ বলেছেন তাদের মাথা খারাপের ব্যামো হয়েছে, চিকিৎসার জন্য পথ দেখিয়েদিন। তবে এই কথা না মানলে অত্যন্ত অন্যায় হবে যে, এই সব ব্যামো এমনি এমনি নয় পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফল।

এদিকে বিজেপি থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত সাংসদ কীর্তি আজাদ আবার বলেছেন “আমি তো শুনলাম, চিনা’রাও বলছেন হনুমান তাঁদের। চ্যাং-হ্যানের মতো দেখতে হনুমান”। কেউ কেউ বলছেন “বড়দিন আসছে। কেউ একজন বললেই হল, হনুমান ‘সান্তা ক্লজ’ও ছিলেন। সেটা আর বাকি থাকে কেন?”

এই সবই হচ্ছে ভোটের যাদুকাঠি। যদি একটু কাজ করে যায়। তাহলেই ব্যাস। এখানকার বক্তব্য বা আসল উদ্দেশ্য রামের জাত বিচার নয়, আসল উদ্দেশ্য নিজের মূর্খতার পরিচয় দেওয়া। ‘হনুমান’-কে যদি আমরা কাজের মাধ্যমে বিচার করি তাহলে তাহার কাজের বিভিন্ন দিকগুলি আলোচনা প্রয়োজন। যেমন – (১) তিনি ছিলেন দায়িত্ববান, (২) তিনি ছিলেন ভগবান রামের আনুগত্যশিল, (৩) তিনি ছিলেন নারীকে সম্মানকারী, (৪) কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান, তাইতো তিনি পাহাড় সমেত উঠিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। ইত্যাদি আরও অনেককিছু আছে যা মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য। মানুষের চরিত্রে সেগুলিকে প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন। তাহলেই হনুমান মুসলিম, খ্রিস্টান, দলিত, হিন্দু সবার হতে পারবে।

আসলে প্রয়োজন কাজের বিচার ‘মানবধর্ম’-এর মাধ্যমে। তাহলেই আপনি হনুমানকে যেদিকে নিয়ে যাবেন যেতে পারেন। আমার মনে হয় তাতে হনুমানজিরও কোনও আপত্তি থাকবে না। বন্ধ করতে হবে আমাদের তাহাকে নিয়ে ব্যবহার। তাহলেই উন্নতি হবে মানবধর্মের। পরিশেষে বলা যায় হনুমান মানবধর্মের জন্য এক নিদর্শন। গ্রহণ করুন জাত বিচার না করে।

Back To Top