মদ চাই না দুধ চাই, মদ মুক্ত বাংলা চাই

~নিজাম পারভেজ

অ্যালকোহল বা মদ, বর্তমান সময়ের সব থেকে বড় Social Evil বা সমাজের সব থেকে বড় শত্রু। কোনরকম দ্বিধা ছাড়াইমদকে সমস্ত দুষ্কর্মের জননী বলা যায়! আমরা জানি মদ এমন একটি পানীয় যা গ্রহন করলে মানুষ তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, হারিয়ে ফেলে তার বোধশক্তি, সে ভুলে যায় আসলে সে কে নিজে! তার অস্তিত্ব সে নিজেই হারিয়ে ফেলে সভ্য সমাজ থেকে। কোনরকম জ্ঞান অবশিষ্ট থাকে না তার মধ্যে। বর্তমান সময়ে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতিসহ নানান ধরণের সামাজিক অপরাধের বহর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে, অথচ এটা আস্তে আস্তে কমে যাওয়া উচিত ছিল। আমাদের এটা একটা দুর্ভাগ্যের বিষয় যে এটা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানিসহ নানারকম অপরাধের কিনারা করতে গিয়ে প্রকাশ হয়েছে যে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে অপরাধকারীরা অপরাধের সময় তাদের নিজেদের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না, মানে তারা মাতাল অবস্থায় ছিল এবং মাতাল অবস্থায় তারা সেই অপরাধগুলি সংগঠিত করেছিল।

মদ এবং একটি পরিসংখ্যানঃ

মদ খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরে নানান ধরণের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। লিভার, ব্রেন, নার্ভ, যৌন সমস্যা, স্থুলতা, স্মৃতি লোপ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক সহ মুখ ও গলার ক্যান্সার পর্যন্ত হয় মদপানে। মদ এমন একটা জিনিস যা নিজের গাটের টাকা খরচ করে আমরা নিজেরাই এগুলো আমাদের শরীরে নিয়ে আসছি!এছাড়াও মদ পানের কারণে তাৎক্ষনিক মৃত্যুও হয়ে থাকে। ২০১১ সালের ডায়মন্ডহারবারের ঘটনা আমাদের কারোরই অজানা নেই, বিষয়টা খুবই দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি যে সেই ঘটনায় ১৫৬ জন দিন আনা দিন খাওয়া লোকের মৃত্যু হয়েছিল বিষ মদের কারণে। সেদিন মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে ১৫৬ টি পরিবার অভিভাবকহীন হয়ে গিয়েছিল। অনাথ হয়ে গেছে কয়েকশো শিশু। অন্ধকারহয়ে গেছে তাদের ভবিষ্যৎ ।

আমি নিচে একটি পরিসংখ্যান দেওয়ার চেষ্টা করছি, মদজনিত মৃত্যুর  একটি তালিকা, ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত

সর্বভারতীয় নিউজ সংস্থা জি নিউজ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মদ জনিত মৃত্যুঃ-

 

উপরে দেওয়া টেবল থেকে দেখা যাচ্ছে যে ২০০৮ সালে অ্যালকোহল জনিত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৩০৮ জন, ২০০৯ সালে ৪৪৮৩ জন, ২০১০ সালে ৪৮৮৬ জন, ২০১১ সালে ৪৫৪৭ জন এবং ২০১২ সালে ৫৪৭৮ জন। ভাবলেও অবাক হতে হয় যে মাত্র ৫ বছরে শুধুমাত্র অ্যালকোহল জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছে ২৩৭০২ জন। সংখ্যাটা মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

মদ নয় দুধ চাই, মদের বিকল্প হিসেবে দুধঃ             

দুধ একটি অতি প্রয়োজনীয় একটি সুষম খাদ্য। সেই জন্মের পর থেকেই আমাদের দুধ খাওয়া শুরু, এবং সেটা চলতেই আছে। প্রথাগত দুধ খাওয়া ছাড়লেও চা, কফি, পনির, দই, রসগোল্লা সহ নানান রকম দুধের তৈরি পদ ছাড়া আমদের দিন চলে না। দুধের গুনাগুণ বর্ণনা করে কখনোই শেষ করা সম্ভব নয়। দুধ ছাড়া আমাদের জীবন একেবারেই অচল। তাই মদের বিকল্প হিসেবে দুধের কোন বিকল্প নেই। মদ যেমন মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়, দুধ ঠিক তার বিপরীত। দুধ মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করে। মানুষের ক্ষুধা নিবারণে সহায়তা করে এমনকি যাদের অনিদ্রাজনিত রোগ আছে তাদের জন্য দুধ দারুণ উপকারী। তাই সব দিক থেকে শুধুমাত্র দুধই মদের সর্বশ্রেষ্ঠ বিকল্প।

মদ-বিরোধী আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তাঃ

বর্তমান সময়ে মদ নিয়ে ব্যবসা একটি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনকি মদ ব্যবসায়ীরা মদ বিরোধীদের কণ্ঠরোধের জন্য গুন্ডা বাহিনীও পুষে রেখেছে। রাজধানী দিল্লির নির্ভয়া কান্ড থেকে সদ্য রায় ঘোষিত হওয়া কামদুনি ধর্ষণ কান্ড সব ক্ষেত্রেই দোষীরা মদ্যপ অবস্থায় ছিল। ভারতবর্ষের সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ দায়ী মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো বা (Drunk while Driving)। সমাজের প্রত্যেক স্তরে মদের ব্যবহার এতটা বেড়ে গেছে যে, সমাজের সমস্ত অপরাধের অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে এই মদ। অনেক জায়গায় মদ বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠলেও সেগুলোকে দমন করা হয়েছে সরকারী মদতে। এখানে সামশেরগঞ্জের শহীদ হাজি আক্তার হোসেনের নাম না করলেই নয়। তিনি সামশেরগঞ্জ এলাকায় মদ বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন, এবং আন্দোলনের প্রভাব এতটাইবিস্তার করেছিল যে আন্দোলন দমন করতে তাকে হত্যা করা হয় এবং তাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে আন্দোলনের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল।

দিন দিন সরকার মদের লাইসেন্স অকাতরে বিলিয়ে যাচ্ছেন। অলিতে গলিতে গড়ে উঠছে মদের দোকান। এমনকী রাজ্য সরকারের একটি দপ্তর রয়েছে, যার প্রাতিষ্ঠানিক নাম আবগারী দপ্তর। এই দপ্তরের মাধ্যমে সরকারীভাবে মদকে রাজ্যের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। নষ্ট করা হচ্ছে আগামীর প্রজন্মকে। মদ নষ্ট করে চলেছে সুস্থ সমাজের পারিবারিক ঐতিহ্যকে। আমরাই যেহেতু এই সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সেই হিসেবে একটি সুস্থ সামাজিক জীবন আমাদের সবার কাম্য, এবং সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে গেলে মদ বিরোধী আন্দোলন একটি অতি জরুরি কাজ। তাই সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে গেলে সমাজের সকল স্তরের মানুষের জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এগিয়ে এসে এই আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত।

মদ একটি জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড, মদ একটি সমাজকে চিরতরে বিনষ্ট করে দিতে পারে। পঙ্গু হয়ে যেতে পারে একটি সমাজ। মদ নষ্ট করে চলেছে সমাজের মানবিকতাকে। বাধা সৃষ্টি করে চলেছে সমাজের সর্বাঙ্গীণ উন্নতিকে। মাতাল পিতাকে দেখে শিশু কখনো ভালো কিছু শিখতে পারে না। মদ মানুষের চরিত্র হননকারী, নৈতিক চরিত্র বিনষ্টকারী শয়তান। তাই “মদ নয় দুধ চাই, মদ মুক্ত বাংলা চাই” এই আন্দোলন একটি প্রয়োজনীয় আন্দোলন। সমাজের সর্বস্তরে এই আন্দোলনের ধারা ছড়িয়ে পড়ুক এই আশা রেখে শেষ করছি।

52 thoughts on “মদ চাই না দুধ চাই, মদ মুক্ত বাংলা চাই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top