এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশকে শেষ বলে হারিয়ে নিজেদের আবার চাম্পিয়ান রয়ে গেল ভারত

এশিয়া কাপের ফাইনালে আজ একটা সময় মনে হচ্ছিল রোহিত শর্মাদের হয়তো খালি হাতে দেশে ফিরতে হবে। মহেন্দ্র সিং ধোনির খারাপ সময়ে আউট, কেদার যাদবের চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া।  কিন্তু না, চ্যাম্পিয়ন দলের সবচেয়ে বড় শক্তি হয় লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটিং। এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন ভারত ঠিক সেটাই করে দেখাল। শেষের দিকে কেদার যাদবের ক্য়ামিও, সপ্তম উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজা-ভুবনেশ্বর কুমারের 45 রানের পার্টনারশিপ ভারতকে এশিয়া কাপে সপ্তমবার চ্যাম্পিয়ন করল। ধোনি ধীরগতির ইনিংস খেলে আউট হওয়ার সময় ভারতের স্কোর ছিল 5 উইকেটে 160 রান। মুস্তাফিজুরের বলে 67 বল খেলে 36 রান করে আউট হন। অন্যপ্রান্তে তখন খোড়াচ্ছেন কেদার যাদব। ধোনির আউটের পর কেদার যাদব যন্ত্রণা নিয়ে মাঠ ছাড়েন। ভারত তখন জয় থেকে 55 রান দূরে, হাতে পাঁচ উইকেট। যার মধ্যে কেদার যাদবের ফের ব্য়াট করতে নামা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। ভুবি, জাদেজার মধ্যে একজনকে আউট করতে পারলেই প্রথমবার এশিয়া কাপ জিততে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু সেখান থেকে জাদেডাকে সঙ্গে নিয়ে ভুবনেশ্বর কুমার ফারাক গড়া একটা ইনিংস খেলে গেলেন। ভুবি দলের জয় নিশ্চিত করে 21 রান করে আউট হন। তার আগে জাদেজা আউট হন 23 রান। জাদেজার  আউটের সময় ভারতকে করতে হত 11 রান। জাদেজার আউটের পর ফের নামেন কেদার যাদব। ভুবির আউটের পর ভারত কিছুটা চাপে পড়ে। শেষ অবধি শেষ বলেই ফয়সালা হয় এশিয়া কাপের । ভারতকে জিততে হলে শেষ ওভারে করতে হত 6 রান, হাতে ছিল তিন উইকেট। ক্রিজে দুই যাদব। কেদার-কুলদীপ।

জয়ের জন্য 223 রান তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মা- শিখর ধাওয়ান ভালই শুরু করেছিলেন। কিন্তু 4.4 ওভারে 35 রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ করে ধাওয়ান (15) আউট হন নাজমুল ইসলামের বলে। তিনে নেমে রায়াডু (2) ব্যর্থ হন। হাফ সেঞ্চুরির মুখে আউট হন অধিনায়ক রোহিত শর্মা (48)। রোহিতের আউটের পর ধোনি- দীনেশ কার্তিক ভালই খেলছিলেন, কিন্তু যখন মনে হচ্ছিল ম্যাচ ভারতের থেকে ঢলিয়ে পড়ছে তখনই কার্তিক (37) আউট। অন্য প্রান্তে তখন ধোনি ঠুকঠুক করে চলেছেন। কেদার যাদব নামার পর ভারতের রা

নের গতি আসে, কিন্তু ধোনি যখন সবে খোলস ছেড়ে বেরোচ্ছেন তখনই আউট। এরপর কেদারের চোট। বাকিটা নাটকীয় এক ম্যাচ। শেষ অবধি ভারতের জয়। টুর্নামেন্টের সেরা দল হয়েই চ্যাম্পিয়ন ভারত। বারবার তিনবার রানার্স হয়ে মোতার্জা-মুশফিকুরা আফশোস করতে পারেন..ইস একটুর জন্য।

এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দারুণ সেঞ্চুরি করেন লিটন দাস। তবে লিটন ছাড়া বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটসম্যান দাঁড়াতে পারেননি। বাংলাদেশের 222 রানের মধ্যে লিটন একাই করেন 121 রান। ভারতের হয়ে দারুণ বল করেন দুই যাদব। কেদার যাদব, কুলদীপ যাদব। কুলদীপ তিনটি ও কেদার দুটি উইকেট নেন। দুই যাদব পার্টনারশিপটা আজ দারুণ ক্লিক করল। বোলিংয়েও আবার শেষ ওভারের ব্যাটিংয়েও।

ধনির ৮০০ তম শিকার মাসরাফি মুর্তজা

শুক্রবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে বড় নডির গড়লেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। প্রথমে ব্যাট করে লিটন দাসের অনবদ্য সেঞ্চুরির পরেও বাংলাদেশ মাত্র 222 রানে গুটিয়ে যাওয়ার পছনে ধোনির বড় অবদান থাকল। বাংলাদেশের ইনিংসের পাঁচটা উইকেট যায় রান আউট ও স্ট্যাম্পিংয়ে। কুলদীপ যাদবের বলে ধোনি দুটি স্ট্যাম্পিং করেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনটি ফর্ম্যাট মিলিয়ে ধোনির 800টি শিকার (ক্যাচ+স্ট্যাম্পিং)  হয়ে গেল। ধোনির আগে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন উইকেটকিপার মার্ক বাউচার (998) ও অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি কিপার অ্য়াডাম গিলক্রিস্ট (905)। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি শিকার করে বিশ্বের সর্বকালের তালিকায় ধোনি তিন নম্বরে। এশিয়ার মধ্যে সবার আগে। ধোনির 800তম শিকার হন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি মোতার্জা।  এর আগে আজকের ম্যাচে কুলদীপ যাদবের বলে লিটন দাসকে (132) স্ট্যাম্পিং করেন ধোনি।

এশিয়া কাপের ফাইনালে জোড়া স্ট্যাম্পিংয়ের সুবাদে ধোনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি স্ট্যাম্পিং করা উইকেটকিপারের তালিকায় শীর্ষস্থানটা আরও মজবুত করলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনির 184টি স্ট্যাম্পিং হয়েে গেল। ধোনির ঠিক পিছনে যারা আছেন তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থেকে অবসর নিয়ে নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশ স্ট্যাম্পিংয়ের বিষয়ে ধোনির পিছনে আছেন শ্রীলঙ্কার দুই প্রাক্তন উইকেটকিপার কুমারা সাঙ্গাকারা (139) ও রমেশ কালুবিতারানা (101)।

বাংলাদেশের ইনিংসটা ঠিক যেন ধুমকেতুর মত হল। জ্বলে, নিভল। ওপেনিং জুটিতে 120 রান তোলার পর, বাংলাদেশের ব্য়াটিং ধস নামে। তারপর 31 রানের মধ্যে বাংলাদেশ হারায় 5 উইকেট। সেখানেই পদ্মাপাড়ের দেশের দুরন্ত শুরুটায় জল পড়ে গেল। লিটন দাসের অনবদ্য 117 বলে 121 রানের ইনিংসের পরেও বাংলাদেশ 222 রানে গুঁটিয়ে গেল। সপ্তমবার এশিয়া কাপ জিততে ভারতের চাই 223 রান। শেষের দিকে সৌম্য সরকারের 33 রানের ইনিংসটা বাংলাদেশকে 200 রানে টপকালো। কুলদীপ যাদব ইনিংসের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট পান। উইকেটের জন্য প্রথম কুড়িটা ওভার মাথাকুটে মরে যাওয়া ভারতীয় দলকে প্রথম উইকেটটা এনে দেন কেদার যাদব। কেদার ফেরান ওপেনার হিসেবে নামা মিরাজকে। তারপর চলতি এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুরকে আউট করেন। কুলদীপ যাদব 45 রান দিয়ে নিলেন 3টি উইকেট। চাহাল, বুমরা একটি করে উইকেট নেন। ভারতীয় ফিল্ডিং দারুণ হয়। ধোনি উইকেটের পিছনে দারুণ ভূমিকা নেন। ধোনি দুটি স্ট্যাম্পিং করেন, এবং একটি রান আউটের পিছনে বড় ভূমিকা নেন। বাংলাদেশের পাঁচজন ব্যাটসম্যান রান আউট ও স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য আউট হন। কুলদীপের বলে বাংলাদেশের দুজন ব্যাটসম্যান স্ট্যাম্পিং হন আর তিনজন রান আউট হন।

খবর- সংবাদ সংস্থা…

Back To Top