স্বাধীনতা সাত দশকেরও অধিক সময় অতিক্রান্ত অথচ প্রান্তকায়িত অপর হয়ে থেকে গেছে একটি বিশেষ বিশাল জনসমাজ!

দীর্ঘ উদাসীনতা শুধু নয় অন্ধকারময় বিচ্ছিন্নতাও কাজ করেছে অহরহ।প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত আর রক্তাক্ত হতে হয়েছে প্রতিবেশী মানুষগুলোকে।
বাঙালি মুসলমান মানষ অনুধাবনে প্রধান অন্তরায় মুসলমান জনজীবন সম্পর্কে অনান্যদের ধারনা সীমিত কারন অবশ্য রয়েছে করে তে। দূরত্বের হীমশিতলতা ছাড়াও রয়েছে অজ্ঞতা আর স্বল্পজানা।
ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কারনে মানুষ হিসাবে কতভাবে ব্যাবহৃত ও ব্যাথিত হয়ে আসছে মুসলমান সমাজ!

বিস্ময় আর বেদনাবোধের যাবতীয় সূচনা ঠিক এই জায়গা থেকেই।দীর্ঘ উদাসীনতা শুধু নয় অন্ধকারময় বিচ্ছিন্নতাও কাজ করেছে অহরহ।প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত আর রক্তাক্ত হতে হয়েছে প্রতিবেশী মানুষগুলোকে।

ফলত আমাদের এই নিবেদিত প্রচেষ্টা মুসলিম মনন ও ঐতিহ্য। Association of Bengali Professonls এর উদ্যোগে বিস্মৃত সময়ের অন্ধকার আর ধুলো-মলিন আস্তরণ সরিয়ে, হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে বহুকৌনিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিশ্লেষণের এবং একে অপরকে জানার সময় এসেছে নতুন করে।তাদের আশা- নিরাশা, উদারতা, দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পরিসরকে আলোকপাত করা।

শুধু তাই নয়, আমাদের এই প্রচেষ্টায় থাকবে বাঙালি মুসলমান মানসের বৈচিত্র্য ও ঐশ্বর্যময় আকাশ। মিলবে প্রতিবেশী মানুষটির মন ও মননের হদিশ।

প্রচুর সাড়া মিলেছে সমাজের সর্বস্তর থেকেই, সেকারনে আমরা লেখা জমা দেওয়ার তারিখ বাড়িয়ে ১৫ই নভেম্বর ২০২০ করলাম।

সময়কে ছুঁতে চাওয়া, কোন দেশ- কাল সীমানা কেউই বেঁধে দিতে পারে না, সময় এবং ইতিহাস যাদের আবির্ভাবে ধন্য। আমাদের সচেতন অবহেলাই আমাদের ভবিষ্যৎ সুরঙ্গ তৈরি করে চলেছে। আনুষ্ঠানিকতার প্রতিশ্রুতিতে ইতিহাস রচিত হয় না, হয়ওনি। বাস্তবের ধারাপাতেই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সফরসঙ্গী অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলি প্রফেশনালস। অর্থ নয়, কদর্যতা নয়, চাপিয়ে দেওয়াও নয় আমাদের নিজস্ব আকাশ, নিজস্ব ভাবনারা ডানা মেলবে ইতিহাসের আলোকে সম্পর্কের শৈল্পিক উত্তরনে।

আমরা বিশ্বাস করি মানুষ শুধু সম্পর্ক তৈরি করে না ; সম্পর্কও মানুষ তৈরি করে। জোর করে ভুলিয়ে রাখা ঐতিহ্য, জমিয়ে রাখা বিস্তৃতির ধূসর পান্ডুলিপি ক্ষতবিক্ষত মনের বেদনা জীবনের সব অপ্রাপ্তিকেও ক্ষমা করে দিতে জানে। শুধুমাত্র আমাদের ঐতিহ্যকে পুনরাবিষ্কার করে একটি ঘুমিয়ে পড়া সমাজকে নতুনকরে জাগিয়ে তোলা মাত্র। নিজস্ব বৈভবেই নিজস্ব একটা পরিসর তৈরি করে দেওয়া।

বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম, ফকির লালন শাহ, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, কাজি নজরুল ইসলাম, কাজী আবদুল ওদুদ, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, আবদুল আজিজ আল আমান প্রমুখের প্রচেষ্ঠাকে পাথেয় করে এগিয়ে চলা।

বাঙালি কে? এই প্রশ্ন বহুদিনের। কখনও বলা হয় বাংলার আদি দেবী কালী মা। এই জন্যই হিন্দুদের সাথে প্রচুর মুসলমান কবি শ্যামাসঙ্গীত লিখে গেছেন। বাংলা শক্তির পূজা করে, প্রকৃতির পূজা করে, এইজন্যই এখানে যেমন আদি কালী মা এসেছেন, দেবী মনসা এসেছেন, বন্দনা হয়েছে সরস্বতীর, আবার দুর্গার। বাংলায় বিবিধ দর্শনের সূত্রপাত এবং প্রচার হয়েছে। সাংখ্য দর্শন যেমন বাংলার অতীত, তেমনই লোকায়ত দর্শন এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। যেমন আদি কালী মার পুজো হয়েছে, তেমনি হয়েছে শ্রী কৃষ্ণের। বৈষ্ণব পদাবলী লেখা হয়েছে বাংলায়, তেমনি অদ্বৈত দর্শনের প্রসার হয়েছে রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দের সুবাদে। কিন্তু বাংলাকে যে দর্শন অন্য সংস্কৃতি থেকে পৃথক করে সেটা কি? বাঙালির সত্তা কাকে বলবো। এটা জানতে হলে আমাদের রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হবে। রবীন্দ্র সঙ্গীত আমাদের বাউল সংস্কৃতিকে নতুনভাবে ভালোবাসতে শেখায়। বাউল হলো বাংলা সংস্কৃতির প্রাণ। ” খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়” লালন ফকিরের এই গান শোনার পর সবকিছু তুচ্ছ মনে হয়। বাউল হলো সুফি, অদ্বৈত এবং শাক্ত দর্শনের সুমিশ্রণে তৈরী একটা সুন্দর, গভীর দর্শন। এতে যেমন হিন্দুরা অংশগ্রহণ করতে পারেন, পারেন তেমনই মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা। বাংলা যেমন বস্তুবাদের পুজো করে, তেমনই পুজো করে বস্তুবিহীন প্রকৃতি সত্তাকে। বাঙালিরা যেমন একেশ্বরে বিশ্বাস করে, তেমনই পুজো করে নানা দেব দেবীর। আল্লাহ যেমন বাঙালির প্রিয়, তেমনি আদি কালী মা। বাংলা হলো “বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান।” বৈচিত্র, একতা, উদারতা, প্রকৃতি, শক্তির বন্দনা, একেশ্বরের আরাধনা – সবটাই বাঙালি। সত্যের সাথে সৌন্দর্যের মিলনই হলো বাংলার ভবিষ্যত, প্রকৃতির সাথে বস্তুর সামঞ্জস্য হলো বাংলার দর্শন। বাউল, অতি সাধারণ জীবনযাত্রা হলো বাংলার পল্লী সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। আবার জ্ঞান বিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠত্ব হলো বাংলার সাধনা। সব বাঙালি এক সাথে হোক, তাদের মিলনে গড়ে উঠুক এক সুন্দর ঐক্যবদ্ধ বাংলা সংস্কৃতি।

এই সব মনের ভিতর জমিয়ে রাখা আখ্যানকেই প্রকাশ করার সময় সুযোগ করে দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলি প্রফেশনাল। তাই সেই সব আখ্যানকে নৈঃশব্দের বলয় ভেঙে মুক্ত করতে হবে আমাদেরকেই।

পরিক্ষী- নিরীক্ষা, পথনির্মাণ বিদ্রোহের- যৌবনের, প্রতিষ্ঠান-শাস্ত্র, নির্মাণ-বিনির্মাণ আর ঐতিহ্যের পরম্পরা হয়ে উঠুক আমাদের সকলের সানুগ্রহ যোগদানে।

Back To Top