লকডাউনঃতীব্র খাদ্য সংকটে দিশাহারা ঘুটিয়ারী শরীফে আটকে পড়া কুড়ি হাজার মানুষ

লিটন রাকিব : লকডাউন এর ফলে এই মুহূর্তে জনজীবন প্রায় স্তব্ধ। এরইমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে মানুষকে বাজারে বেরোতেই হচ্ছে। অন্যদিকে দোকানদার ভ্যানচালক ভাইয়েরা এই দুর্দিনে ঝুঁকি নিয়েও কাজে নেমেছেন তাদের অনেকের পক্ষেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধিটুকুও মেনে চলা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এটা সত্যিই প্রান্তিক মানুষদের, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের পক্ষে মাক্স, স্যানিটাইজার কিনে ব্যবহারের ক্ষমতা টুকুও নেই।

একদিকে শহরের মানুষজন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে জমা করছেন আর অন্যদিকে গরীব অসহায় মানুষরা কালোবাজারির শিকার হচ্ছেন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং সংলগ্ন ঘুটিয়ারী শরীফ অঞ্চলে ভিনরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের প্রায় ২০,০০০ জন সদস্য, যার মধ্যে মহিলা ও বাচ্ছারাও আছেন। আজ এই লকডাউন পরিস্থিতির কবলে চূড়ান্ত খাদ্যের অভাবে ধুঁকছে! চাল-ডাল পেলেও তারা যে ফুটিয়ে খেতে পারবে, সেই জ্বালানিটুকুও নেই ওই সব দিন-আনা-দিন-খাওয়া শ্রমিক পরিবারের! এই বিপন্ন সময়ে, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এবং সংস্থার কাছে আমার আন্তরিকভাবে আবেদন ওইসব ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষগুলির পাশে যথাসাধ্য সাহায্য নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য, যাতে করে এই করোনা-আক্রান্ত সময়ে অন্তত মানুষগুলির কেউ অনাহারে মারা না যায়!

দীর্ঘ লকডাউন এর ফলে এবার মানুষের ভাঁড়ারে টান পড়েছে। দিন -আনা -দিন- খাওয়া মানুষেরা অবর্ণনীয় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকদের যন্ত্রণার কথা নতুন কিছু নয়! আমাদের সামনে এসেছে দিল্লির এবং সম্প্রতি মুম্বাইয়ের ঘটনা। তাঁরা বাড়ি ফিরতে চান কিন্তু কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি আজও। শত শত মাইল পায়ে হেঁটে ঘরে ফেরার চেষ্টা করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। সর্বত্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জিবনতলা থানার ঘুটিয়ারি শরিফ এলাকায় কুড়ি হাজার মানুষ আটকে রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক, ঠিকাদার,বাবুর বাড়িতে কাজ করা মহিলারা, পথচারী ভিক্ষুক, অন্ধ মানুষজন অত্যন্ত স্বল্প ভাড়ায় থাকেন এই সব এলাকায়। কারণ এখান থেকে স্বল্প সময়ে কলকাতায় পৌঁছে যাওয়া যায় এবং এখানে থাকার খরচ অত্যন্ত কম হওয়ায় এইসব এলাকাকেই প্রান্তিক মানুষজন বেছে নেন।

এছাড়াও এখানে ঐতিহ্যশালী সৈয়দ গাজী মোবারক শাহ এর মাজার শরীফ থাকার ফলে হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে আসেন। সেই উপলক্ষে শত শত মানুষের কর্মসংস্থানও হয়ে থাকে। প্রচুর গরীব অসহায় মানুষের খাওয়া-পরা নির্ভর করে এই জনসমাগমের উপর কিন্তু আজ সব বন্ধ ও স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছেন সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন কয়েক হাজার প্রান্তিক মানুষ যাদের কাছে রেশন কার্ডটুকুও নেই। অনেকের রেশন কার্ড থাকলে এখান থেকে রেশন সংগ্রহ করা তাদের পক্ষেও অসম্ভব!

ওইসব খেটে খাওয়া দিন আনা দিন খাওয়া মানুষেরা দীর্ঘদিন এই অঞ্চলের বাস করছেন বছরের-পর-বছর। এখন এরা দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এইসব মানুষেরা কেউ মাছ ধরে, কেউ ইটভাটায় কাজ করে, কেউবা জুটমিলে কাজ করে, কেউ কেউ শুধু কাগজ কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। যেসব মুদি দোকান থেকে এরা বাজার করত আজকেউ এদের চেনেনা; সব চেনা মুখ কেমন যেন অচেনা হয়ে গেছে রাতারাতি। এ তো গেলো ভিনরাজ্যের শ্রমিকের কথা।

আমাদের রাজ্যের গোসাবা, বাসন্তী, লক্ষীকান্তপুর এবং হিঙ্গলগঞ্জের বহুমানুষ আটকে পড়েছেন ঘুটিয়ারি শরিফ, গৌড়দহ এলাকায়।এরাও চরম সমস্যার মধ্যে রয়েছে।

এরা সমাজের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী প্রান্তিক মানুষজন। এদের মজুত খাদ্যদ্রব্য বলতে কিছুই নেই; থাকেও না । এদের হাতে চাল-ডাল তুলে দিলেও রান্না করার মতো পরিস্থিতি এদের নেই সে কারণে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই সব মানুষদের মুখে দু’বেলা অন্ন তুলে দিতে এগিয়ে এসেছেন, সাংবাদিক হাসিবুর রহমানের নেতৃত্বে বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন। কয়েক হাজার মানুষের রান্না করে দিনে দুবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে কুপনের মাধ্যমে যদিও এই প্রয়াস প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য।

এগিয়ে এসেছেন অনেক সহৃদয় ব্যক্তি বর্গও।নতুন করে লকডাউন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩মে পর্যন্ত আর এখানেই মাথায় হাত উদ্যোক্তাদের! এতো মানুষের খাওয়ানোর ব্যাবস্থা কিভাবে এরা দিনের পর দিন চালিয়ে যেতে পারবেন! দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে ক্রমশ ক্ষুধার লাইন। দুমুঠো খাওয়ার জন্য মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ সমস্ত লজ্জা বিসর্জন দিয়ে আজ লাইনে দাঁড়িয়ে দুমুঠো ভাতের আশায়। কবে লগডাউন উঠবে আমরা কেউই জানিনা। কিভাবে চলবে এদের? কবে স্বাভাবিক হবে জনজীবন?

সারাদেশ জুড়ে লাখ লাখ শ্রমিকদের অসহায় বিধ্বস্ত মুখগুলো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে অপব্যাবস্থা। হাজার হাজার শ্রমিক জড়ো হয়েছে দিল্লির বাসট্যান্ড বা মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় বাচ্চাকে ঘাড়ে নিয়ে, সন্তানসম্ভাবা স্ত্রীর হাত ধরে বোঁচকাবুচকি সমেত রাস্তায়।

সন্তানের মুখে অনেকেই এইসময় দুধ পর্যন্তও তুলে দিতে পারছেন না । ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছে। এরইমধ্যে উত্তর প্রদেশে এক মা তার বেশ কয়েকজন সন্তানকে গঙ্গায় ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে এখন প্রশ্ন হলো দেশে কতজন করোনায় মারা যাবে জানিনা তবে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ক্ষুধায় মারা যাবে না তো?

খুব শীঘ্রই সরকার এদের জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এখানেই শুরু হয়ে যাবে অনাহারে বুভুক্ষের মৃত্যু-মিছিল

উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের সম্পাদক ফারুক আহমেদ সকল মানবিক মানুষের কাছে আবেদন করছেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসুন সবাই। আমাদেরকে দেখতেই হবে প্রতিবেশী কেউ যেন অনাহারে না থাকেন। যার যেমন সামর্থ্য আছে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এলে অসহায় মানুষ বাঁচতে সাহস পাবে এবং কেউ না খেতে পেয়ে মরবে না।

Back To Top