নিজেদের স্বার্থে আঘাত লাগায় শহীদ নুরুল ইসলাম মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষকে তাড়াতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস

Shahid Nurul Islam College.jpg

নিজস্ব প্রতিনিধি, তেঁতুলিয়া: রাজ্যের অন্যান্য অংশের মত এবার তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব পড়লো উত্তর চব্বিশ পরগনার তেঁতুলিয়ার শহীদ নুরুল ইসলাম মহাবিদ্যালয়ে। এক গোষ্ঠী পরিচালিত কলেজ পরিচালন সমিতি দখলের উদ্দেশ্যে কলেজের অধ্যক্ষ আফসার আলিকে নিশানা করে তাকে কলেজ থেকে ‘ তাড়ানোর’ চেষ্টায় তৃণমূল কংগ্রেসের আরেক গোষ্ঠী। এই লক্ষ্যে তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত কুৎসা অপপ্রচার করে চলেছে ঐ গোষ্ঠী। অভিযোগ খোদ কলেজ কর্তৃপক্ষের।

কলেজ পরিচালন সমিতির বর্তমান সভাপতি স্বরূপনগরের বিধায়ক তথা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা সভাধিপতি বীনা মন্ডল। তাঁর পূর্বসুরিই এখন তার কট্টর বিরোধী। অধ্যক্ষ আফসার আলি জানান,” ২০১৮ সালের ৯ই আগস্ট আমি অধ্যক্ষ পদে এই কলেজে যোগদান করি। আমি আসার আগে এই কলেজে গত ১০ বছরে কোন অধ্যক্ষ ছিল না। কলেজ রীতিমত ক্লাব ঘর হয়ে উঠেছিল। অধ্যাপকরা যে যেমন খুশি সময়ে আসতেন, চলে যেতেন। ক্লাস ঠিকমত নেওয়া হত না, ছাত্র ছাত্রীরাও নিয়মিত ক্লাস করতো না। আমি এসে সবকিছু শৃঙ্খলাবদ্ধ করি। সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে পড়ুয়া, অধ্যাপক ও শিক্ষাকর্মীদের ঢোকা বাধ্যতামূলক করি। স্বচিত্র পরিচয়পত্র পরে আসা বাধ্যতামূলক করি। বহিরাগতদের ঢোকা নিষেধ করে দেওয়া হয়। আমি যোগদানের আগেই কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতির পদে আসেন বীনা মন্ডল। আমি যোগদান করার পর থেকেই দেখি আমার অনুপস্থিতিতে পরিচালন সমিতি দখল করার জন্য ৪ থেকে ৫ জন ক্যাজুয়াল শিক্ষাকর্মী উস্কানি দিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে লড়াই বাধিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে সঞ্জীব পাল বলে একজন শিক্ষাকর্মী যার বিরুদ্ধে খুনের মত অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তিনিই রীতিমত নেতৃত্ব দিয়ে এই কাজ করেছে। কলেজে ২০১৬ এর পর কোন ছাত্রভোট না হওয়ায়, আমি ছাত্র ইউনিয়ন ভেঙে দি। কিন্তু ঐ শিক্ষাকর্মী একটি রাজনৈতিক দলের প্যাডে পড়ুয়াদের জন্য বিভিন্ন দাবি লিখে আমার কাছে পেশ করে। নিজেকে ইউনিয়নের সদস্য বলে পরিচয় দেয়।”

Md Afsar Ali
অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আফসার আলি

উল্লেখ্য,কলেজে আফসার আলির সৌজন্যেই প্রথমবার চলতি বছরের মার্চ মাসে ন্যাক এসে কলেজকে বি গ্রেড দেয়। ন্যাকের থেকে কলেজের কিছু অর্থ পাওনা আছে। কিন্তু ন্যাকের থেকে ইতিমধ্যেই ৪ কোটি টাকা কলেজ অনুদান পেয়েছে বলে গুজব রটান বিরোধী গোষ্ঠী। এমনটাই অভিযোগ আফসার আলির। গত ১৬ই সেপ্টেম্বর তারই নেতৃত্বে একটি বড় ঘটনা ঘটলো। অধ্যক্ষ আফসার আলি বলেন, ” আমি গত ১৩ই সেপ্টেম্বর থেকে জ্বর হওয়ার জন্য আসতে পারিনি। গত ১৬ ই সেপ্টেম্বর সকালে সঞ্জীব পাল ৫০-৬০ জন বহিরাগতদের নিয়ে এসে কলেজের গেটের বাইরে কলেজের নামে, প্রশাসনের নামে, আমার নামে অপপ্রচার চালাতে থাকে। আমায় বহিষ্কারের দাবি জানায়। যে কলেজের পড়ুয়াদের অর্থে ওনার বেতন হয়, সেই কলেজ ও পড়ুয়াদের সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করতেও তার মুখে বাধলো না। বহিরাগতদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে তারা পড়ুয়াদের ঢুকতে পর্যন্ত বাধা দেয়। এই গোটা পর্ব সঞ্জীববাবু সোশ্যাল মিডিয়াতে পর্যন্ত আপলোড করেছেন।” এরপরই অভিভাবকদের ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের ৭৯ জন এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে বিক্ষোভকারীদের দাবির সত্যতা যাচাইয়ের ও কলেজে শান্তি-শৃঙ্খলা ও পঠন পাঠনের উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে ডেপুটেশন দেন। ছাত্রছাত্রীদের তরফেও অধ্যক্ষকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা যে ডেপুটেশন দিয়েছে তাতে উক্ত দাবিগুলোর পাশাপাশি কলেজের শৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্টকারীদের শাস্তির দাবিও করেছেন তারা।

Back To Top