টুইন টাওয়ার হামলার ১৭ বছর

    

আজকের সেই ভয়াবহ দিন যা আমেরিকা ধংসস্তুপে পরিণত করেছিল এবং গোটা বিশ্বকে কম্পিত করে তুলেছিল। হ্যাঁ আজকের দিন ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র হামলা ও পেন্টাগন হামলার ১৭ বছর পূর্ণ হল। আজকের এই ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে ঐ ভয়াবহ হামলা হয় যা আমেরিকার মোট ২৯৯৬ জনের তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। একই সঙ্গে কত পরিবারের সম্বল কেড়ে নিয়েছিল। ২৬৫ জন চারটি বিমানে, ২৬০৬ জন বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে এবং ১২৫ পেন্টাগনে ইউনাইটেড স্টেটের প্রতিরক্ষা বিভাগের কেন্দ্রীয় অফিসে। মোট আহত হয় ৬০০০ এরও বেশি মানুষ। ১০০০ কোটি মার্কিন ডলার এর মত পরিকাঠামো এবং সম্পত্তি বিনষ্ট হয়। গোটা বিশ্বের ৯০ টি দেশ ক্ষতি বোধ করে। এখনও সেখানে সেই হামলার কারনে মানুষ বিভিন্ন রকম রোগ প্রতিবন্ধকতাই ভুগছে।

সেইদিন অ্যামেরিকার সকাল কে অন্ধকার করে দিয়ে চারটি যাত্রীবাহী বিমান এর দ্বারা ধারাবাহিক ভাবে হামলা চালায় ১৯ জন সন্ত্রাসী।

চারটি বিমানের মধ্যে প্রথম বিমানটি (American Airlines Flight 11: a Boeing 767 aircraft) সকাল ৭ টা ৫৯ মিনিটে লোগান বিমানবন্দর থেকে ১১ জন বিমান বাহক ও ৭৬ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা আরম্ভ করে সকাল ৮ টা ৪৬ মিনিটে বাণিজ্য কেন্দ্রের উত্তরের টাউয়ারে আঘাত হানে।

দ্বিতীয় বিমান (American Airlines Flight 77: a Boeing 757 aircraft) সকাল ৮ টা ১৪ মিনিটে লোগান বিমান বন্দর থেকে ৯ জন বিমান বাহক সহ ৫১ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা আরম্ভ করে সকাল ৯ টা ০৩ মিনিটে বাণিজ্য কেন্দ্রের দক্ষিণের টাউয়ারে আঘাত করে।

তৃতীয় বিমান (American Airlines Flight 77: a Boeing 757 aircraft) সকাল ৮ টা ২০ মিনিটে ৬ জন বিমান বাহক সহ ৫৩ জন যাত্রী নিয়ে ওয়াশিংটন বিমান বন্দর থেকে যাত্রা আরম্ভ করে পেন্টাগনে ইউনাইটেড স্টেটের প্রতিরক্ষা বিভাগের কেন্দ্রীয় অফিসে সকাল ৯ টা ৩৭ মিনিটে আঘাত করে।

চতুর্থ বিমান (United Airlines Flight 93: a Boeing 757 aircraft) সকাল ৮ টা ৪২ মিনিটে ৭ জন বিমান বাহক সহ ৩৩ জন যাত্রী নিয়ে নিউওয়ার্ক আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে যাত্রা আরম্ভ করে। কিন্তু মাঝপথে যাত্রীরা অপহরণকারীদের বাধা দেওয়ার ফলে যাত্রী সহ শাঙ্কসভিল ও পেনসিলভানিয়ার কাছা কাছি এক জায়গায় ভূপতিত হয় সকাল ১০ টা ০৩ মিনিটে। (সুত্র – Wikipedia)

এই হামলার জন্য দায়ী করা হয়েছিল “মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়দা” কে। এর উপর ভিত্তি করে তখনকার অ্যামেরিকার জর্জ ডাবলু বুসের সরকার সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য গোটা বিশ্ব ব্যাপী যুদ্ধের ডাক দেয়। নাম করণ করা হয় “Global War on Terrorism বা “সন্ত্রাস দমনের যুদ্ধ” এবং বলা হয় এই যুদ্ধের বিরোধিতা যে বা যারা করবে তাদের পরিনতি ভয়াবহ হবে। এই যুদ্ধের ফল স্বরূপ ইরাক ও আফগানিস্থান কে ধংসস্তূপে পরিণত করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হয়। এতে আফগানিস্থান ও ইরাক মিলে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এখনও সেখানে অ্যামেরিকা সরকার সন্ত্রাস দমনের নামে হামলা চালিয়ে যায়। কিন্তু এখনও সোনা যায় যে এই টুইন টাউয়ার হামলা ছিল কর্তৃপক্ষের পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক এবং অ্যামেরিকা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন যে বিমান আঘাত হানার পূর্বেই বোমা পেতে রাখা হয়েছিল সেখানে, এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে সেই বোমার বিস্ফোরণের ফলে ধংস হয়েছিল টুইন টাউয়ার। এর আগেও একজন প্রাক্তন কর্মী বলেছিলেন যে “টুইন টাউয়ারে পরিকল্পনা অনুযায়ী আঘাত হানা হয়”। তবে এই তথ্য যদি কোনদিন সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে আফগানিস্থানে যেসব নির্দোষ সাধারণ মানুষকে সন্ত্রাস দমনের নামে হত্যা করা হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ কোথা থেকে হবে। (সংবাদ সংস্থা)

হামলার একবছরের মধ্যে পেন্টাগনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে পুনর্নির্মাণ করা হয়, সপ্তম বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রকে ২০০৬ সালে নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়, মূল বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রকে পুনর্নির্মাণ সম্পন্ন করা হয় ৩ নভেম্বর ২০১৪ সালে।আজ ১৭ বছর পর সেখানকার একটি স্টেশনকে চালু করা হয়।

সংক্ষিপ্ত তথ্যঃ-

টুইন টাওয়ার্স এর দুটোই ছিল ১১০ তলার পরিকাঠামো, এর মধ্যে ১০ মিলিয়ন স্কোয়ার ফুট অফিসের জায়গা ছিল ৩৫০০০ মানুষ ও ৪৩০ টি কোম্পানির জন্য। বিশ্বের সর্বোচ্চ বিল্ডিং ছিল এই দুটি। এখানে প্রতিদিন ৭০০০০ পর্যটক ও যাত্রীদের আগমন ঘটত। উত্তরের উচ্চতা ছিল ১৩৬৮ ফিট থেকে ১৭৩০ ফুট পর্যন্ত। দক্ষিণের টাওয়ারের উচ্চতা ছিল ১৩৬২ ফুট, এর ওজনছিল ২,৫০,০০০ টন, এতে ছিল ৯৯ টি লিফট, ২১৮০০ জানালা। ( সুত্র- 9/11 Memorial & Museum)

 

Back To Top