অগ্নিগর্ভ বরাক উপত্যকা, হাইলাকান্দির মসজিদে হিন্দুত্ববাদীদের হামলা

                  ~আবু রিদা ~

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ৬ ষষ্ট দফার দুই-একদিন আগে শিখ দাঙ্গা প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা শ্যাম পিত্রোদার ‘হুয়া তো হুয়া’ মন্তব্যে মোদী ও বিজেপি নেতৃবৃন্দ মুখর হয়ে ওঠেন। নরেন্দ্র মোদী অভিযোগ করেন, এই মন্তব্যের মধ্যে কংগ্রেসের মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী কখনই আত্ম সমীক্ষা করেন না। অতীত প্রতারণা ও মিথ্যাচার চেপে রেখে তার ওপর সাজানো নতুন মিথ্যাচারের সুদৃশ্য ইটের পর ইট। ২০০২ সালে গুজরাটে তারই মুখ্যমন্ত্রীত্বে সংঘটিত মুসলিম গণহত্যা কি ১৯৮৪ সালের শিখ গণহত্যার থেকে কোন ভাবেই কম ছিল না। বরং গুজরাটে মুসলিম গণহত্যার সংখ্যা, বীভৎস ও বর্বরতা ছিলও অনেক বেশি। কিন্তু মোদী ২০০২ সালের গণহত্যার কথা মুখে আনেন না কখনও। অথচ ১৯৮৪ সালের শিখ গণহত্যার জন্য কংগ্রেস কে দায়ী করতে সদা ব্যস্ত। দুটো গণহত্যায় মানবতা বিরোধী। এই দুটোরই যদিও ন্যায় বিচার হত তাহলে খোদ নরেন্দ্র মোদীকে থাকতে হত জেলের মধ্যে। তাছাড়া মোদীর পাঁচ বছরে তাঁর গো-রক্ষকদের হাতে এতো শত শত মুসলিম ও দলিত মানুষদের হত্যার জন্য তিনি কি দুঃখ প্রকাশ করেন? অপররাধীদের শাস্তি দেন? উপরন্ত,তাঁর উপরে রয়েছে অগণিত সাজানো এনকাউন্টারের অভিযোগ। আসলে তিনি বিদ্বেষের সওদাতার।  

 আসামে ক্ষমতাসীন  নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি। বিজেপির সহযোগী সংগঠন আর এস এস ও বজরঙ দল আসামে নির্মাণ করে চলেছে ঘৃণা বিদ্বেষের পাহাড়। হিংসার বাতাবরণ। অগ্নিগর্ভ মুসলিম অধ্যুষিত বারাক উপত্যকা তারই নমুনা।

            বরাক উপত্যকার একটি জেলা হাইলাকান্দি। সদর শহর হাইলাকান্দি। এই শহরের একটি শতাব্দী প্রাচীন মসজিদ, পুরাণ বাজার মসজিদ। হিন্দু ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিবেষ্টিত। বড় মসজিদ কাছারী মসজিদ অবস্থিত। এই এলাকাটি মিশ্র এলাকা। পুরান বাজার মসজিদে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ নামাজ পড়তে আসে। মসজিদ সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় নামাযীরা গাড়ি পারকিং করে।

            মে (২০১৯) গোড়ার দিকে নামাযীরা যখন নামাজরত তখন পারকিং করা গাড়ির সিট গুলো কেটে ফালা ফালা করে দেয় এবং হেলমেট গুলো চুরি করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। এর পর ১০ মে শুক্রবার আরএসএস ও বজরঙ দলের দুষ্কৃতিরা জয় শ্রীরাম বলতে বলতে ইট পাথর ছুড়ে মসজিদে হামলা চালাতে থাকে, নামাযীরা যখন জুম্মার ফরয নামজে মগ্ন। এতে অনেকের চোট লাগে। ফরয নামায শেষ হলে নামাযীরা  পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। দু’ পক্ষের সংঘর্ষ চলতে থাকে। পাশাপাশি প্রায় একই সময়ে কাছারী বাজার মসজিদ আক্রান্ত হয় হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা। সেখানেও ওঠে জয় শ্রীরাম ধ্বনি। কাছারী বাজার মসজিদ হামলায় যিনি নেতৃত্ব দেন তিনি একজন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী । তার দোকানে মুসলিমরাই বেশি মিষ্টি কেনা-কাটা করে। তাই মুসলিমরা দেখে অবাক হয়ে যায় যে, তাদের সেই প্রিয় মিষ্টি বিক্রেতাই আজ তাদের অপর প্রধান হামলাকারী। এর পর উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বিভিন্ন এলাকায় মুসলিমদের দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে। এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ কিছু মুসলিমও পাল্টা ভাঙচুর করে।

            এর পর পুরান বাজার মসজিদে পুলিস বাহিনী ও নিরাপত্তা রক্ষা বাহিনি হাজির হয়। কার্ফু জারী করা হয়। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে মানুষজন ফিরে যেতে শুরু করে। এরই মধ্যে পুলিস অকারণে গুলি চালায়। নিহত হয় এক মুসলিম যুবক। অন্য পাঁচ ছয় জন মুসলিম জখম হয় এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন  থাকে। নিহত যুবকের নাম জসিমুদ্দিন।

            হাইলাকান্দিতে কার্ফুর সাথে সাথে গোটা বরাক উপত্যকা নেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে পবিত্র রমজান মাসে মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশি হয়রানি ও পেরেশানির শিকার। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও রমজানের রাত্রিকালীন খাবার-দাবার কেনা-কাটাও তাদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে ওঠে।

            কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা এখানেই ক্ষান্ত থাকেনি। গোটা বরাক উপত্যকা তাদের লীলাক্ষেত্রে পরিণত হয়। সুযোগ বুঝে অথবা রাতের অন্ধকারে  হঠাৎ  তারা মুসলিমদের উপর হামলা করে। এভাবে অনেকে আহত হয় এবং ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।        

            শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্তানে বিশ্বাসী বরাক উপত্যকা কি জাহান্নামে পরিণত করতে চাই মোদী-শাহের সাগরেদরা।

            আতঙ্কে আমাদের মনে ভেসে আসে নেলী হত্যাকাণ্ডের হাজার হাজার শবদেহের ছবি যাদের অধিকাংশ নিষ্পাপ শিশু।  

Back To Top