কলকাতার মেয়র পদে ফিরহাদ হাকিমঃ বিদ্বজনেরা কি বলছেন?

দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র পদে পাঁচ মুসলিমকে বসানো হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই পদে আর কোনও সংখ্যালঘু মুসলিমকে দেখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই প্রথম কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র পদে নিয়োগ দিলে একজন সংখ্যালঘুকে। তিনি হলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ১৯৩৫ সালে প্রথম মুসলিম মেয়র হয়েছিলেন এ কে ফজলুল হোক। এরপর এ কে এম জাকারিয়া, আব্দুর রহমান সিদ্দিকি, সৈয়দ বদরুদ্দোজা এবং সৈয়দ মুহাম্মদ ওসমান। নতুন মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে প্রত্যাশা জানতে বিশিষ্টজনদের মুখোমুখি হলেন কলম প্রতিনিধি আব্দুল ওদুদ।

চলুন দেখা যাক, কে কি বলছেন

ইন্তাজ আলী শাহ, (রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান)।

রাজ্যের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের অন্যতম কাণ্ডারি ফিরহাদ হাকিম। তার প্রতি মুখমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অগাধ আস্থা। আর তার জন্যই কলকাতা কর্পোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে বসালেন তাকে এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে আমার প্রত্যাশা তিনি সবাইকে নিয়ে কাজ করবেন। উভয় সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিগুলির যাতে আরো বিকাশ ঘটে সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবেন। 

মাওলানা মুহাম্মদ শফিক কাসেমি (নাখোদা মসজিদের ইমাম)

প্রথমেই ফিরহাদ হাকিম সাহেবকে মুবারকবাদ জানাব। তিনি বর্তমানে যে দফতরে য়েছেন সেখানেও দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করে গিয়েছেন এবং সেই কাজে সফল হয়েছেন বলেই মুখমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়রের পদের দায়িত্ব দিয়েছেন। আশা করব, তিনি এই কাজেও সমানভাবে সফল হবেন। কলকাতাকে তিনি আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সমস্ত মানুষের জন্য কাজ করবেন।

শাহ আলম (আমানত ফাউন্ডেশনের কর্ণধার)

কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র পদে ফিরহাদ হাকিমের আগমনকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তিনি সদর্থক কাজ করবেন। স্বাধীনতার পর এই প্রথম কোনও সংখ্যালধু এই দায়িত্ব পেলেন। ফিরহাদ হাকিমকে মেয়র করায় একটি বিষয় সামনে এল মমতা বন্দোপাধ্যায় সকলকে নিয়েই কাজ করতে চান, তারই বহিঃপ্রকাশ এটি। তার কাছে আবেদন করব কলকাতায় বহু বস্তি রয়েছে। সেই বস্তিগুলির উন্নয়নে তিনি এগিয়ে আসবেন। কলকাতায় আবাসনও একটি বড় সমস্যা সেগুলির দিকেও সমান গুরুত্ব দেবেন।

ডঃ আব্দুল মুজিদ (মাওলানা আজাদ অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান)

কলকাতা কর্পোরেশনে এর আগেও বহু গুণীজন মেয়র হয়েছেন। এবার সেই গুণীজনদের সঙ্গে আরো একটি নাম সংযোজিত হল ফিরহাদ হাকিম। আমি তার কাছ থেকে আশা করব সবশ্রেণীর মানুষের সমাজের ন্যায্য অধিকার পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তাকে আমি কুরনিশ জানাচ্ছি। তিনি কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সমস্ত কলকাতাবাসীর জন্যই কাজ করবেন এই প্রত্যাশা করব। একজন যোগ্য লোক মেয়র হয়েছেন।

ডঃ আবু তাহের কামরুদ্দিন ( মাদ্রাসা শিক্ষা পরিষদ সভাপতি)

জনাব ফিরহাদ হাকিম কাজের এবং কাছের লোক হিসেবে আমাদের সমাজে পরিচিত। কলকাতা কর্পোরেশনে মুখ্যমন্ত্রী আবারো একজন যোগ্য্য ব্যক্তিকে মেয়র করে উদার মনের পরিচয় দিলেন। নতুন মেয়রের কাছে আবেদন জানাব কলকাতায় বহু পরিবারের আবাসন একটি বড় সমস্যা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সকলের জন্য সার্বিকভাবে কাজ করবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কলকাতাকে যে স্বপ্নের নগরী বানাতে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন সেই কাজ সফল করতে আরও তৎপর হবেন।

সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস (দলিত নেতা)

খুব ভালো লাগছে এটা দেখে যে স্বাধীনতার পর একজন মুসলিম নেতা কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র হতে চলেছেন। কলকাতা তো বাবুদের শহর। এখানে এতদিন দলিত ও মুসলিমদের  কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হত না।। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সেই জায়গায় একজন সংখ্যালঘুকে গুরু দায়িত্ব দিয়ে সাহসের পরিচয় দিলেন।

হেরোদ মল্লিক (সভাপতি, বঙ্গীয় খ্রিষ্টান পরিষেবা)

একজন সংখ্যালঘু হয় ভালো লাগছে যে স্বাধীনতার পর এই প্রথম একজন সংখ্যালঘু নেতা কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র হচ্ছেন। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এখন সংখ্যালঘুদের জন্য যথেষ্ট কাজ হচ্ছে। আশা করব কলকাতা কর্পোরেশনেও সেই কাজের ধারা বৃদ্ধি পাবে।

মনসা সেন (ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়ার রাজ্য সভাপতি)

আমাদের সংবিধান সেকুলারিজমের কথা বলেছে। কিন্তু সংখ্যালঘু বাঁ দলিতদের সেভাবে ক্ষমতার শীর্ষে আনা হয়না। এটাই যেন রেওয়াজি হয়ে দাড়িয়ে ছিল। মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রমাণ করে দেখিয়ে দিলেন, তিনি যোগ্যতা দেখেন, জাত-ধর্ম দেখেন না।  

সূত্রঃ পুবের কলম

 

Back To Top