“অয্যোধ্যা নয়, কর মকুব চাই” দিল্লিতে এই স্লোগান নিয়ে হাজির হাজার হাজার কৃষক, আজকের লক্ষ্য সংসদ ভবন

রামলীলা ময়দানের রঙ সম্পূর্ণ লাল হয়ে গিয়েছিল গতকাল। উদ্দেশ্য সংসদ ভবন। হাজার হাজার লাল পতাকায় ভরে গিয়েছিল বিশাল রামলীলা ময়দান। স্লোগান ওঠে, ‘অযোধ্যা নাহি, করজি মাফ চাহিয়ে’ (অযোধ্যা নয়, কর মকুব চাই)। দেশের রাজধানীতে গিয়ে নিজেদের দাবিগুলির কথা জানানো যাবে এবং সরকারও মন দিয়ে তাঁদের সব সমস্যার কথা শুনে তার সমাধানের জন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ উপায় অবলম্বন করবে, এমন এক আশা নিয়েই গোটা দেশের কয়েক হাজার কৃষক বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এসে জড়ো হয়েছেন। তাঁদের আসল দাবি, কৃষিঋণ মকুব এবং ফসলের জন্য ভালো দাম পাওয়া। এই বিশাল মিছিলকে সমর্থন জানিয়েছে বাম সহ দেশের বেশ কয়েকটি কৃষক সংগঠন। পাঁচটি বিভিন্ন জায়গা থেকে ২৫ কিলোমিটার হেঁটে রামলীলা ময়দানের দিকে এসেছেন তাঁরা। আজ শুক্রবার তাঁদের লক্ষ্য সংসদ ভবনে যাওয়া। সেই কারণে বিশেষ নিরাপত্তার জন্য ৩,৫০০ পুলিশ সংসদ ভবন চত্বরে মোতায়েন করেছে দিল্লি পুলিশ। অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রেনে বা ট্রাকটরে করে দিল্লি এসেছেন হাজার হাজার কৃষক। দিল্লিতে শেষবার কৃষক বিক্ষোভ হয়েছিল ২ অক্টোবর। সেই সময় ব্যারিকেড, জল কামান এবং কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছিল। এবারে অন্তত তেমন কিছু হবে না বলেই আশা করছেন কৃষকনেতারা। ১২০০ জন কৃষক তামিলনাড়ু থেকে গতকাল সকালে দিল্লি এসে পৌঁছলেন দুটি খুলি নিয়ে। ওই খুলি দুটি তাঁদেরই সতীর্থ দুই কৃষকের। যাঁরা ঋণ মেটাতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। এই রকমই আরও কত বেদনাসিক্ত ঘটনা প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে রয়েছে।

ওড়িশার ভ্রমর বিশি নামে এক কৃষক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “আমি ৩ লক্ষ টাকার ঋণ নিয়েছিলাম। ৩ বছর আগে। আমার পক্ষে ওই ঋণ শোধ করা খুব মুশকিল। আমি চাই আমার ঋণ মকুব করে দেওয়া হোক”। পাঁচ সদস্যের পরিবারে তিনিই একমাত্র আয় করেন। সুন্দরবন থেকে ৬৫ বছর বয়সী উর্মিলা নাইয়া বলেন “যে ধরনের সবজি আমরা ওখানে চাষ করি, তার জন্য যথেষ্ট বাজারই নেই। কেজি প্রতি ১ টাকা বা ২ টাকাতে বিক্রি করতে হয় আমাদের। কী করে চলবে বলুন তো?” ৭৮ জন কৃষকের সঙ্গে দিল্লি এসেছেন সুন্দরবন থেকে। ৩০ ঘন্টা পথ উজিয়ে। দিল্লির পাঁচটি গুরুদ্বার বহু কৃষককে রাতে থাকার জন্য স্থান দিয়েছে। যদিও, বেশিরভাগ কৃষকই রামলীলা ময়দানে তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটান। দিল্লির জল বোর্ড তাঁদের জন্য জলের ব্যবস্থা করেছে। আম আদমি পার্টি দিচ্ছে খাবারের প্যাকেট। বহু চিকিৎসক, উকিল, অধ্যাপক, শিল্পীরা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে এগিয়ে আসছেন কৃষকদের পাশে দাঁড়াবেন বলে। এই কৃষক মার্চকে কীভাবে সামলায় কেন্দ্রের শাসক বিজেপি সরকার, তাই এখন দেখার, মনে করছে রাজনৈতিকমহল।

 

 

 

সংবাদঃ NDTV

Back To Top