রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষপদে এবার বসছেন কেন্দ্রের ‘শক্তি’কান্ত

শক্তিকান্ত দাশ

নোট বাতিলের সময় সাদা চুলের এই আমলাকে গোটা দেশ চিনে ফেলেছিল। মানুষের সমস্যা বুঝে নানা রকম নিয়ম বদল, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া— এ সব আর্থিক বিষয়ক সচিব হিসেবে তাঁকেই সামলাতে হয়েছিল। তাই এবার আরবিআইয়ের  নতুন গভর্নরও হচ্ছেন এই শক্তিকান্ত দাস। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সদস্যই বসছেন শীর্ষ ব্যঙ্কের সবচেয়ে বড় পদে। আর পেশাদার অর্থনীতিবিদ নয়, শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রধান পদে পোড়খাওয়া আমলার উপরেই ভরসা রাখল কেন্দ্র। উর্জিত পটেলের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেই কেন্দ্র। সংবাদ সংস্থার তরফে একথাই জানানো হয়েছে। সংবাদ সংস্থা আইএএনএস জানিয়েছে এই  সিদ্ধান্তে  অনুমোদন দিয়েছে মোদী ক্যাবিনেট। অর্থ কমিশনের সদস্য হওয়ার আগে অর্থ বিষয়ক দপ্তরের সচিবের পদও সামলেছেন শক্তিকান্ত। ২০১৭ সালে  তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ১৯৮০ সালের তামিলনাড়ু ক্যাডারের এই আইপিএস  কর্মজীবনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন।

এর আগে  সোমবার  রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শীর্ষ  পদ থেকে  ইস্তফা  দিলেন উৰ্জিত প্যাটেল। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাতেই কারণেই তিনি গভর্নরের পদ ছেড়ে  দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে পদত্যাগের কারণ হিসেবে  তিনি নিজে অবশ্য  ব্যক্তিগত কারণের কথাই বলেছেন। উৰ্জিত লিখেছেন, ‘ ব্যক্তিগত কারণে আমি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরবিআইতে কাজ করতে  পারা আমার কাছে  গর্বের বিষয়। আরবিআইয়ের কর্মী ও আধিকারিকদের পরিশ্রম-ই ব্যাঙ্ককে  সাম্প্রতিক সময়ে সাফল্যের সরণিতে নিয়ে এসেছে। আমায় সাহায্য করেছেন বলে  আমি আরবিআইয়ের কর্মী, আধিকারিক থেকে শুরু করে পরিচালন সমিতিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ কিছু দিন আগে আরবিআইয়ের ব্যাঙ্কের উদ্বৃত্ত ব্যবহার থেকে  শুরু করে  আরও  কয়েকটি  বিষয়কে কেন্দ্র করে গোলমাল দেখা দেয়। গত মাসে টানা  ন’ ঘণ্টা ধরে বৈঠকে করে দুপক্ষ। আর সেখানে উদ্বৃত্ত অর্থের একটা অংশ দেওয়ার জন্য প্যানেল গঠনেও সম্মত হয় আরবিআই। তাছাড়া বাজারে আরও বেশি পরিমাণে অর্থের জোগান দিতেও সম্মত হয়  ব্যাঙ্ক। 

অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে শক্তিকান্ত দাশ

মোদীর সংসারে রঘুরাম রাজন প্রথম দফার মেয়াদ ফুরোনোর পরে গভর্নর পদ থেকে ইস্তফা দেন। তার জায়গায় আসে উর্জিত। প্রথম দফার মেয়াদ শেষের ৯ মাস আগেই তিনিও পদত্যাগ করলেন। এমআইটি থেকে গবেষণা করা, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রঘুরাম বা লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স, অক্সফোর্ডের প্রাক্তনী উর্জিতের তুলনায় শক্তিকান্ত দাস স্রেফ ইতিহাসে এমএ। ফলে তাঁর নিয়োগে অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছেন।

সরকারি সূত্রের যুক্তি, অর্থনীতিবিদ না হলেও শক্তিকান্ত অনেক আগে থেকেই তামিলনাড়ু ও কেন্দ্রীয় সরকারে আর্থিক দফতর সামলেছেন। ইউপিএ আমলে গুরুত্বপূর্ণ পদও সামলেছেন। আবার বর্তমান অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির ঘনিষ্ঠও তিনি। আর্থিক বিষয়ক সচিবের পদ থেকে অবসরের পর জি-২০-তে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। ওড়িশার এই অফিসার এখন পঞ্চদশ অর্থ কমিশনেরও সদস্য। কেন্দ্রের আমলা মহলের একাংশের মতে, শক্তিকান্তর আসল উপযোগিতা অন্য জায়গায়। তা হল তাঁর ঐকমত্য তৈরির ক্ষমতা। কেন্দ্রের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সংঘাতের আবহে তাঁর এই ক্ষমতা কাজে দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, জেটলির অর্থ মন্ত্রক যখন লোকসভা ভোটের আগে খয়রাতি করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে থাকা উদ্বৃত্ত অর্থের ভাগ চাইছে, তখন সেই জেটলির অধীনে সচিব হিসেবে কাজ করা শক্তিকান্তের পক্ষে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা বজায় রাখা সম্ভব হবে তো? 

নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্তের বক্তব্য, ‘‘শক্তিকান্ত অসাধারণ টিম লিডার, ঐকমত্য তৈরিতেও দারুণ। উনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা বজায় রেখেই আর্থিক বৃদ্ধিতে নজর দেবেন।’’

এ দিকে উর্জিতের পদত্যাগের পরের দিনই কেন্দ্রীয় সরকার নতুন গভর্নর নিয়োগ করে ফেলায় আর একটি প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই। আর তা হল, সরকার কি তাহলে উর্জিতের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা আগে থেকেই জানতেন ? একটি সূত্রের দাবি, উর্জিত আগেই পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁকে বিধানসভা ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়। যদিও সরকারের কেউই এর সত্যতা স্বীকার করেননি।

খবর সংগ্রহীত: NDTV

Back To Top