বিজ্ঞান ও মুসলমান’

~নিজাম পারভেজ শুভো

“যে জাতি তার ইতিহাস ভুলে যায় সে জাতি কখনো বড় হতে পারে না”

বর্তমানে বিশ্ব যখন আলোর গতিতে এগিয়ে চলছে, দিন দিন মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে, পশ্চিমাবিশ্ব যখন মুসলমানদের আবিস্কার করা বস্তু দিয়ে সারা বিশ্বকে তাদের পায়ের তলায় নিয়ে চলে এসেছে, যখন তারা সারা বিশ্বের মানুষদের গতিবিধি নজরবন্দি করছে তাদের ঘরে বসে ঠিক সেই সময় সমস্ত আধুনিক জিনিসের আবিষ্কর্তা মুসলিমরা ঠিক কোন জায়গায় রয়েছে সেই প্রযুক্তির ব্যবহারে। কোন জায়গায় রয়েছে এককালের বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগের সেই মুসলিম মনীষীদের  অবদান! আমরা, মানে তাদের উত্তরসূরীরা কি তাঁদের সেই ঐতিহ্য কে বহন করতে পারছি না কি সব ভুলে একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতিতে পরিণত হচ্ছি, এটা আমাদের সব থেকে বর্তমান প্রশ্ন।
আধুনিক বিশ্বে মুসলিমদের অবদান আধুনিক সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান অনস্বীকার্য। মুসলমান ছাড়া আধুনিক সভ্যতা অসম্ভব। পশ্চিমারা যতই বড়াই করুক না কেন যে তারাই সবথেকে সভ্য জাতি, আসলে কিন্তু সেটা ভুল। আজকের ইউরোপ মুসলমানদের বদৌলতেই হয়েছে। মিসাইল থেকে ফাইবার কেবল, আধুনিক যন্ত্রপাতি থেকে আমাদের যাবতীয় ব্যবহার্য সবকিছুতেই রয়েছে মুসলমানদের অবদান। আজকে জেনে নেব সেইরকম কিছু বস্তুর ব্যাপারে, যেগুলো মুসলমানরাই এই বিশ্বকে উপহার দিয়েছে। কফিঃ বর্তমানে আমাদের জীবনের অঙ্গ, কফি ছাড়া যেন দিন চলে না। এই কফির বাজার এখন পশ্চিমাদের দখলে থাকলেও এর আবিষ্কর্তা হলেন একজন আরব মুসলমান। আবিসিনিয়ার খালিদ নামে একজন প্রথম এই কফি বানিয়ে খান। পরে এই কফি সৌদি আরব সহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। উড়োজাহাজঃ রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের হাজার বছর আগে আব্বাস ইবনে ফিরনাস, কর্ডোভার এই কবি, গণিতজ্ঞ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্রথম মানুষ যে উড়তে পারে এই কল্পনা করেন এবং কয়েকবার চেষ্টার পরে ওড়ার জন্য মেশিন তৈরি করেন এবং ৮৫২ সালে কর্ডোভার গ্রান্ড জুমা মসজিদ এর মিনার থেকে ওড়েন। যাই হোক সে মেশিন উড়তে সক্ষম না হলেও তিনি হালকা জখম অবস্থায় ওই মেশিনের দ্বারা অবতরণ করেন এবং সেই মেশিনকেই প্রথম প্যারাশুট হিসেবে ধরা হয়। এরপর ৮৭৫ সালে ৭০ বছর বয়সে পাহাড় থেকে ওড়ার চেষ্টা করেন এবং আকাশে ১০ মিনিট ওড়েন। বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এই মহান ব্যক্তির নামে নামাঙ্কিত। বীজগণিতঃ বিজ্ঞান থেকে আমাদের জীবন সবক্ষেত্রেই বীজগণিতের গুরুত্ব অপরিসীম। এই বীজগণিত বা অ্যালজেবরা এর জনক হচ্ছেন মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খোওয়ারিজমি। বীজগণিতের উপরে তার বিখ্যাত গ্রন্থ “হিসাব আল জাবর ওয়াল মুকাবালাহ” বিশ্বের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বীজগণিতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। কেমিস্ট্রি/রসায়ণঃ বিজ্ঞানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কেমিস্ট্রি। এই কেমিস্ট্রিও উদ্ভাবন করেন একজন মুসলিম। তিনি ছিলেন জাবির ইবনে হায়ান। কুফার এই বাসিন্দা বহুপ্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন রসায়নবিদ, জ্যোতির্বিদ, ইঞ্জিনিয়ার, দার্শনিক এবং সেইসাথে ডাক্তার। শল্য-চিকিৎসাঃ আজকে যেকোন কিছু হলেই আশ্রয় নিতে হয় অপারেশনের। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি কারা অপারেশনের কাজে ব্যবহৃত অস্ত্রপাতির আবিস্কার করেছে! আধুনিক শল্য-চিকিৎসার জনক হচ্ছেন আবু আল কাসিম খালাফ ইবনে আল আব্বাস আল জাহারিবি।  আন্দালুসের এই বাসিন্দা ছিলেন বিখ্যাত ডাক্তার। বর্তমানকালে ব্যবহৃত ৯০ শতাংশ অপারেশনের যন্ত্রপাতি তাঁর বিখ্যাত বই “কিতাব আল তাসরিফ” থেকে পাওয়া। শুধু এইগুলোই নয়, গো-বসন্তের টিকা আবিস্কার করেছিলেন মুসলমানরাই। কিন্তু পরে তুর্কি থেকে ইউরোপিয়ানরা নিয়ে যায় এবং তাদের নামে চালিয়ে নেয়। শল্য-চিকিৎসার জনক সারা বিশ্বে অ্যাবুলক্যাসিস নামে পরিচিত। নাম শুনে বোঝার উপায় নেই যে ইনি মুসলিম নাকি অন্য কেউ। গ্যালিলিওর ৫০০ বছর আগে মুসলমানরাই বলেন যে পৃথিবী গোল। টুথ ব্রাশ থেকে ক্যামেরা, সাবান, শ্যাম্পু, কার্পেট, টাকা লেনদেনের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় “চেক” সহ হাজার হাজার আবিস্কার করে মুসলমানরা আবিস্কার এই বিশ্বকে আধুনিক বানিয়েছে, জীবনকে করেছে সহজ অথচ ঘুরেফিরে আজ মুসলমানদের সেকেলে বলা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে এবং মুসলমানদের মিডিয়া না থাকার কারণে আজ মুসলমানরা তাদের সোনালি ইতিহাস থেকে অনাবগত। দুঃখের বিষয় হলেও এটা খুবই সত্য যে বর্তমানে একটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হল নোবেল, যেটা ১১৭ বছর থেকে দেওয়া হচ্ছে। সেই ১১৭ বছরের ইতিহাসে মাত্র ১২ জন মুসলমান নোবেল পেয়েছেন। যার মধ্যে মাত্র ৩ জন বিজ্ঞানে এবং ২ জন সাহিত্যে। বাকি সবগুলো শান্তিতে। মাত্র ৩ জন নোবেল পেয়েছে বলে এটা নয় যে মুসলমানরা উন্নতি করেনি বা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করছে না! কিন্তু আসলে যতটা করা দরকার ততটা হচ্ছে না। প্রায় প্রত্যেক মুসলিম দেশগুলোতে সম্পদের প্রাচুর্য থাকলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁদের অবদান যৎসামান্যই। মুসলমান যারা এই বিশ্বকে আধুনিক বানিয়েছে তারা আজ কেন এইভাবে পিছিয়ে থাকবে? কেন তাঁদের শুনতে হবে তাঁরা সেকেলে? প্রশ্নটা থেকেই যায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top