নিয়তি – পর্ব ৫

~আসমা আক্তার পিঙ্কি

 

হঠাৎ ইমান সিঁড়ি দিয়ে নামতে ও –নামতে বলতে লাগলো–কি হয়েছে!? এতো চেঁচামেচি কেন………..

— বৌ মনি কী হয়েছে? তুমি এতো রেগে আছো কেন???
আর বলিস না ভাই, তোর বউ তো প্রথম দিনেই আমার মুখের উপর কথা বলছে, আমার পোশাকআশাক নিয়ে পর্যন্ত মন্তব্য করছে।
ইমাদ ফাহমিদার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে কোনো কিছু না ভেবেই নাজিফার কাছে গিয়ে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললো —– মানবতার ক্ষাতিরে একটা স্যরি বলেছি বলে আপনি কী সাপের পাঁচ পা দেখেছেন ??????
নাজিফা কোনো কথাই বললো না, অনায়াসে ইমাদের সব কথা শুনতে লাগলো। ইমাদ ওর এরুপ নিশ্চুপতা দেখে অবাক হয়ে গেলো —- মানুষ এতো ধৈর্যশীলতা কীভাবে হয়!!!!!
—- কী ব্যাপার কথা বলছেন না কেন???
লিসেন যান বৌ মনির কাছে গিয়ে মাফ চান ।

—– দেখুন আমি ওনাকে খারাপ কিছুই বলিনি, জাস্ট বললাম যে ওনি এসব পরে আপনার সামনে আসাটা ঠিক মানায় না।

—–দেখেছো ইমাদ আবার সেই একই কথা বলছে, যতবড় মুখ নয় ততবড় কথা, আজ তোমার দাদাভাইয়ের কাছে যদি আমি না বিচার দিয়েছি তাহলে আমার নাম ফাহমিদা না। আর ও যদি আমার কাছে মাফ না চায় তাহলে আমি আজ কোনো খাবারেই খাবোনা, এই বলে দিলাম।
এই বলে ফাহমিদা নিজের ঘরে চলে গেলো, সালেহা তখন একটু মুচকি হেসে বললো — উফ! বাঁচলাম কেন যে আমার বড় ছেলে এর মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে আল্লাই ভালো জানে।

—–ইমাদ নে খেয়ে নে, একটু তাড়াতাড়ি কর নাবা আর নওরীনের স্কুল আছে তো। ইমাদ আর কোনো কথাই বললো না , ও বুঝেছে ফাহমিদার কাজেই শুধু ঝগড়া করা, এখন ও মনে পড়ে মিতুর সাথে সামান্য কারন নিয়ে কী পরিমান ঝগড়া করতো, তবে মিতু এই মেয়েটির মতো নিশ্চুপ থাকতো না, মিতুকে যদি বৌ মনি বলতো একটা, মিতু বলতো একশো টা , এখন ও মনে পড়ে শুুধু মাএ বৌ মনির কারনে ও কতবার আমাকে বলেছিলো — চলো আমরা আলাদা হয়ে যাই। কিন্তু এই কথাটি কখনোই আমি মায়ের কান অবদি আসতে দেয়নি, কারন আমি জানতাম — মা আর যাই হোক আমাদের দুই ভাইয়ের আলাদা হয়ে যাওয়াটা কখনোই মেনে নিতে পারবেনা। কেননা বাবা মারা যাওয়ার পর আমি আর দাদাভাইয়ে তো মায়ের কাছে সব।

আজ আবার এই বৌ মনির কারনে সেই মানুষটাকে মনে পড়ে গেলো, যে আমাকে অসহায় করে দূরে কোথা ও চলে গেলো। মিতুর কথা মনে পড়তেই ছেলেটার চোখ- দুটো লাল হয়ে যায়, ছেলে মানুষ তাই সে বুঝে ফেললো কান্না তাকে মানায় না। সহসা ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে দাড়ালো , নাজিফা তখন নিতুকে আর শাশুড়ি কে রুটি দিচ্ছিল, ইমাদের এভাবে উঠে দাড়ানো দেখে, সালেহা বিস্ময় কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো — কী হয়েছে? এভাবে উঠে দাড়িয়েছিস কেন???
—– খিদে নেই?
এই বলে ইমাদ চলে যেতে চাইলে নাজিফা অমনেই ওর হাতটা গিয়ে ধরে ফেললো , নাজিফার এতো সাহস দেখে ইমাদ খুব বেশি অবাক হয়— চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো —- How dare you?????আপনি আমার হাত ধরার সাহস কোথায় পেলেন ???
—- সাহস তো আপনিই দিয়েছেন।
—- মানে???
— মানে হলো আপনি যখন আমার অনুমতি না নিয়ে আমার হাত ধরার সাহস পেয়েছেন ঠিক তেমনি আমি ও আপনার অনুমতি না নিয়ে আপনার হাত ধরার সাহস পেয়েছি।
নাজিফার এমন উওর শুনে সালেহা খুশিতে বলতে লাগলো—শাবাশ মা!
ইমাদ অবাক হয়ে গেলো, ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই মেয়েটি সত্যিই অদ্ভুত, এতো খারাপ কথা বলি কিন্তু. তারপর ও ………….
—- কী হলো কী ভাবছেন?
— না কিছুনা।
—- যান টেবিলে গিয়ে বসুন।
—- আমি কী আপনার কথা শুনবো নাকি??? কে আপনি যে আপনার কথা শুনতে হবে???
—- আমি হয়তো আপনার কেউ না, কিন্তু দেখুন, না খেয়ে থাকলে তো আর সবকিছুর সমাধান করা যায়না, তাই বলি কী এতো কথা না বলে খেতে বসুন।
নাবা ও তখন বলতে লাগলো — বাবাই আতো, আতো।
মেয়ের কথা ফেলাতে না পেরে ইমাদ খেতে বসে।

নাজিফা সবাই কে খাবার দিয়ে এক পর্যায় নাবাকে নিজের হাতে জ্যাম আর পাউরুটি খাওয়াতে গেলে নওরীন নাজিফার হাতটা ধরে ফেলে, চোখগুলোকে বড়— বড় করে নাজিফাকে বলতে লাগলো —- তুমি একদম আমার বোনকে খাওয়া বেনা।
নাজিফা একটু স্নেহময় কন্ঠে নওরীনকে তখন বললো —- মা ও তো ছোট ওকে আমি খায়িয়ে না দিলে ও খাবে কী করে???
নওরীন তখন হাসতে— হাসতে বললো —– আপনি তো মাত্র একদিন হয়েছেন এসেছেন, এতদিনতো আমার বোনকে দিদুনেই খায়িয়ে দিতো, সুতারং আজকে ও না হয় দিদুনেই খায়িয়ে দিবে।
নিতু নওরীনের কথাগুলো শুনে মনে– মনে বলতে লাগলো — গুড নওরীন, এটাই তো আমি চেয়েছি আর তুই করেছিস, ভেরি গুড।
ইমাদ নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলো নওরীনের এরুপ আচরণ দেখে, মাত্র নয় বছর বয়স অথচ এই বয়সে ও এতো পরিমান খারাপ হয়ে গেছে। হয়তো মেয়েটিকে আমার ও পছন্দ না কিন্তু তাই বলে আমি যেরুপ আচরণ করতে পারি ও তো তা পারেনা, কেননা ও তো বাচ্চা আর তাছাড়া শত হোক নাজিফা তো ওর মায়ের মতোই।
এই ভেবে ইমাদ নওরীনকে অনেক জোরে একটা ধমক দিলো , নওরীন অমনেই কান্না করে দিলো।
নাজিফা তখন ওকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে , ও তখন নাজিফাকে বলে — Don’t touch me,তোমার জন্য বাবাই এই প্রথম আমাকে বকা দিয়েছে। এই বলে না খেয়ে চলে গেলো। নাজিফা তখন ইমাদকে বললো — এটা আপনি কেন করলেন, ও তো ছোট মানুষ, আর ছোট মানুষ দের ভালোবাসা দিয়ে বুঝাতে হয় ধমক দিয়ে নয়।
—- আপনি চুপ করুন সব আপনার জন্যই হয়েছে, জাস্ট আপনার জন্যই আমি আমার মেয়েকে এই প্রথম বকেছি।

এই বলে ইমাদ না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। নিতু তখন সালেহাকে উস্কানির জন্য বলতে লাগলো —- দেখেছো কী মেয়ে বউ করে আনলে?? যে ভাই কখনো না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হতোনা, আজ এই প্রথম সে না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে ।
শত হোক ছেলেতো না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছে এটা সত্যি, সালেহার খুব খারাপ লাগে , নিতুকে, কোনো কিছু না বলেই সালেহা নিশ্চুপ ভাবে রুমে চলে গেলো ।

নিতু তা দেখে মহা খুশিতে গান গাইতে লাগলো, আর নাস্তাটা নিয়ে উপরে চলে গেলো। নাজিফার চোখ দুটো জলে ঝাপসা হয়ে যায় — উপরের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ কে বলতে লাগলো — আমি কী কখনোই কাউকে সুখী করতে পারবোনা, আল্লাহ আপনি কী কখনোই আপনার এই বান্দাকে একটু সুখ দিবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ আপনি আমাকে সাহায্য করবেন, কিন্তু আর কতদিন আমি এভাবে মানুষদের কষ্ট দিবো, অমনেই দু ফোঁটা অশ্রু নাজিফার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো, ঠিক তখনি নাবা নাজিফার আঁচল ধরে টান দিলো, নাজিফা বিস্মিত হয়ে নিচের দিকে তাকাতেই দেখে নাবা ।

ওর সামনে বসতেই, নাবা বলতে লাগলো — এই তুমি আমাকে তায়িয়ে দিবেনা??? তুমি তাদছো কেন??
নাজিফা ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো — এমনেই কাঁদছি মা। আয় আমি তোকে খায়িয়ে দিচ্ছি, এই বলে নাজিফা নাবাকে খাওয়াতে লাগলো। নাবা তখন নাজিফাকে বলতে লাগলো —- তুমি কে?? তুমি কী মা, তুমি কী মা???
নাজিফা তখন নাবাকে কোলে নিয়ে বলতে লাগলো — হ্যা মামুনি, আমিই তোর মা।
নওরীন অমনেই নাজিফার সামনে এসে বলতে লাগলো — না , তুমি মা নও, ফুফু বলেছে তুমি সৎ মা। নাবা ওনার কোল থেকে নাম বলছি, ওনি আমাদের মা নয়।
এই বলে নওরীন নাবাকে জোর করে নাজিফার কাছ থেকে নিয়ে যায়, নাবা কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে — আমি মা দাবো, মা আমি তোমার কাদে
তাদবো………….

 

ষষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

তৃতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

চতুর্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

Back To Top