ইসলামিক জলসার দান – মুদাসসের সেখ

ছবি- প্রতীকী

একবার সৌভাগ্যবসত জলসায় গিয়েছিলাম। হ্যাঁ সৌভাগ্যই বটে। নিজের ইচ্ছার গুরুত্ব বোঝার পরে আমার জীবনে এটা প্রথম জলসা যেখানে শুধু বক্তব্য শোনার জন্য গিয়েছিলম। তখন রাত দশটা হবে। এক ঘন্টা বক্তব্য শোনা হল। বক্তব্যের কোন বিষয় বস্তু বুঝতে না পারাই উঠে দাড়ালাম। দেখলাম অনেকের চোখ অশ্রুসিক্ত। কিছুক্ষন পরে বক্তা জলসার উদ্দেশ্যে দানকারীদের নাম পড়তে লাগলেন। আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম বেশ বাজার বসেছে, ছেলে-মেয়ের ভীড় উপচে পড়েছে। তবে অনুমানিক দুশো মিটারের মধ্যে কোন দোকান নেয়। ভলেনটিয়ার গুলো খুব সিরিয়াস, যেন তারা ছাত্র আর পরের দিন তাদের পরীক্ষা। দেখলাম একটা বুড়ি মেয়ে সাথে একটা বাচ্চা নিয়ে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে। জলসার উজ্জ্বল আলোতে তার কাপড়ের ময়লা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মেয়েটি বারবার জলসার ময়দানের দিকে যেতে চাইছে, কিন্তু ভলেনটিয়াররা বাধা দিচ্ছে। মাইকে শোনা যাচ্ছে ‘মাহমুদুল্লা দশ হাজার টাকা দান করেছেন, বলুন সুবহানাল্লাহ’। এই দানের কিছু অংশই মেয়েটির দরকার ছিল। শুন্য হাতে মেয়েটি রাস্তার পাশের গোলিটি দিয়ে হাটতে লাগল আর আমি তার পিছেপিছে। দেখলাম একটা ছোট ত্রিপলের ছাদের নিচে আরেকটি বাচ্চা শুয়ে আছে আর কাচের বোতল থেকে একটা পলতে উঁকি মারছে ক্ষীণ আলো নিয়ে। আমি ফিরে এলাম। আমি যেন বধির, যেন বোবা। কোন অদৃশ্য শক্তি আমার দম বন্ধ করে দিচ্ছে। আমার কিছু শোনা হল না। তারপর মধ্য রাত পেরিয়ে গেছে। আমরা ফিরে আসছি। ঐ দূরে রাজসাহীর কৃত্রিম উজ্জ্বল আলো দেখা যাচ্ছে, আরেক দিকে ভৌরব নদীর ঠান্ডা প্রাকৃতিক বাতাস আমার উষ্ণ মুখমণ্ডল স্পর্শ করে যাচ্ছে। আর আমার অবচেতন মন থেকে উদয় হচ্ছে আহমাদ আমীনের প্রবন্ধ “আসল ধর্ম আর কৃত্রিম ধর্ম”।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

লেখকের সঙ্গে কোনরকম যোগাযোগের জন্য এখানে ক্লিক করুন
Back To Top