কলকাতার চিটফান্ড ও প্রমোটার মার্কা সাংবাদিকতা এই জগতটাকে কলঙ্কিত করল


সুমন চট্টোপাধ্যায়

মোহাম্মদ সাদউদ্দিন, দিনকাল ডেস্কঃ গৌর কিশোর ঘোষ, সন্তোষ কুমার ঘোষ, বরুন সেনগুপ্ত , নিখিল চক্রবর্তী, তুষারকান্তি ঘোষ, খুসবন্ত সিং, অরুণ সৌরে, এম জে আকবর, আব্দুল আজীজ আল আমান , এ জি নুরানি, আব্দুর রাউফ, অঞ্জন বসু, শঙ্কর ঘোষ, কিংবা নিখিলেশ রায়দের লেখনি বা সাংবাদিকতা আমাদের মননকে প্রভাবিত করেছে। তাদের লেখার প্রতি আজও মানুষ শ্রদ্ধাশীল। যদিও বরুন সেনগুপ্ত তার ‘বর্তমান’ দৈনিকে শেষের দিকে বিজেপি আর এস এস কে তোল্লা দিয়ে কার্যত হিন্দুত্ববাদকে শক্তিশালী করেছেন। কিন্তু আনন্দবাজারের কলামনিষ্ট বরুণ সেনগুপ্ত আজও বাংলার মানুষের কাছে শ্রদ্ধার আসনে। এক সময় আনন্দবাজারের বুধবারের যে উত্তর সম্পাদকীয় লিখতেন সুমন চট্টোপাধ্যায় আমি তারও খুব ভক্ত ছিলাম। কিন্তু ২০১১ বা ২০১২ সাল থেকে চিটফান্ড পরিচালিত মিডিয়া বা সংবাদ মাধ্যম সাংবাদিক জগতকে কলঙ্কিত ও কলুষিত করেছে। একশ্রেণীর সাংবাদিকদের  অর্থলিপ্সু মানসিকতা , মিল্লাতের নামে ধর্ম ভিক্তিক বা সাম্প্রদায়িক ভিক্তিক ( community journalism) সাংবাদিকতা করতে এসে এক ধরনের সাংবাদিক অঢেল পয়সাও করেছে যা আমাদের চোখে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে এই চিটফান্ডের শুরু কিন্তু ৮০-র দশকে । ৯০-র দশকে ওভারল্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড তাদের প্রাতিষ্ঠানিক মুখপাত্র ‘ঘরে বাইরে’ সাপ্তাহিক সংবাদপত্রকে দৈনিক ‘ওভার ল্যান্ডে’ পরিণত করে। ১৯৯১ সালের ৮ নভেম্বর কাগজটি দৈনিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। অর্থালগ্নি সংস্থার কাগজ হলেও গ্রামীণ সাংবাদিকতাকেও এই সংবাদপত্র একটি জায়গায় আনতে পেরেছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালে অর্থ তছরুপের অভিযোগে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত কুমার ভাওয়ালকে রাজ্য সরকার গ্রেপ্তার করে । তারপর ওভাল্যান্ড পত্রিকার মৃত্যু ঘণ্টা বেজে যায়।

চিটফান্ড মিডিয়ার বাড়াবাড়ি শুরু হল আবারও । সারদা , রোজভ্যালি, আইকর, চক্রগ্রুপ , চেরাগ, সিলিকন ভ্যালি সহ বেশ কিছু চিটফান্ড মিডিয়ার ব্যবসায় এলো সরকার কে ভীতি সঞ্চার ও নিজেদের কালো টাকাকে সাদা করার জন্য । সুমন চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তার হওয়ার পর ‘বিশ্ব বাংলা’ নিউজ পোর্টালে চিটফান্ড কাণ্ডে প্রথম গ্রেপ্তার হওয়া ‘সংবাদ প্রতিদিন’ এর কার্যনির্বাহী সম্পাদক এবং সারদা গ্রুপের ৫-৭ টি মিডিয়া হাউসের সিইও কুণাল ঘোষ অনেক বাতেল্লাবাজি করলেন। তিনি সারদা গ্রুপের কাছে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা পেতেন যা ভারতের শীর্ষ সাংবাদিকরা পেতেন কি? রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কুণাল বাবু সারদার কর্ণধারকে প্রতি মুহূর্তে ভয় ধরিয়ে দিয়ে সব কিছু আদায় করে ছেড়েছেন। একথা কি অসত্য ? তিনি কি নিজে ধোঁয়া তুলসীর পাতা ? সারদা গ্রুপের আরেক দৈনিক ‘সকাল বেলার’ সেট আপ করেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক অঞ্জন বসু।  তৃণমূল ক্ষমতায় আসছে আর ততৃণমূলের প্রভাব খাটিয়ে ‘সকাল বেলা’ থেকে অঞ্জন বাবুর মতো বিনয়ী ব্যক্তিত্বকে অপমান করেছিলেন কে, কুণাল বাবু তার জবাব দেবেন কি? ইতিহাস কাউকে কে ছেড়ে দেয়! ইতিহাস ইতিহাসের পথেই ধাবিত হয়। সে তার নিজের নিয়মেই চলে। তাই যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও সুমন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার বরণ করতে হল তার লোভকে সংবরণ না করার জন্য। সুমন চট্টোপাধ্যায় আর কুণাল ঘোষ অর্থলিপ্সু হিসাবে মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ । সাংবাদিকদের দেখলে রাজনৈতিক , গুন্ডা, মস্তানরাই ভয় করে। আর আজকের সাংবাদিকরা রাজনীতিকদের কাছে যেন গদগদ। চিটফান্ড সংস্থার টাকার গোলাম। এই ভাবেই কলকাতার সপ্রদায় ভিক্তিক মিডিয়া গুলো একই পথে হাঁটছে। সুমন বাবু গ্রেপ্তার হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়া যে ভূমিকা পালন করেছে। কলকাতার মুলস্রোতের সংবাদ মাধ্যম গুলি সে ভূমিকা পালন করেনি। এতে চিটফান্ড আর প্রমোটারি মার্কা সাংবাদিকতা প্রশ্রয় পেয়ে গেল।আর এর ফলে সাংবাদিকতা জগৎ ক্রমশ কলঙ্কিত হচ্ছে যা আমাকে ভাবায় একজন সাংবাদিক হিসাবেও।

Back To Top