ঠিক যেন রামায়ণ-এ হনূমানের পাহাড় নিয়ে আসা কাণ্ড। রাজস্থানে ৩১ টি পাহাড় উধাও…

মঙ্গলবার শীর্ষ আদালত ‘সেন্ট্রাল এমপাওয়ারড কমিটি’ (সিইসি)-র একটি রিপোর্ট দেখিয়ে জানিয়েছে, ‘ফরেস্ট সার্ভে অব ইন্ডিয়া’ (এফএসআই)-র সংগৃহীত ১২৮টি নমুনার থেকে স্পষ্ট, রাজস্থানের আরাবল্লীর ৩১টি ছোট ছোট পাহাড় আর নেই। ঘটনায় স্তম্ভিত সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, বেআইনি খননের জেরেই ‘নিরুদ্দেশ’ ওই ৩১টি পাহাড়। রাজ্য সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরাবল্লীর ১১৫.৩৪ হেক্টর এলাকায় বেআইনি খনন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

বিচারপতি মদন বি লোকুর এবং বিচারপতি দীপক গুপ্তের বেঞ্চ জানিয়েছে, আরাবল্লীতে খনন কাজ থেকে রাজস্থান সরকার ৫০০০ কোটি টাকা রয়্যালটি পায়। কিন্তু দিল্লির লাখো বাসিন্দার জীবন বিপন্ন করে এই কাজ চালিয়ে যেতে পারে না রাজস্থান। আদালতের আশঙ্কা, এ ভাবে একের পর এক পাহাড় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াই দিল্লি-দূষণের অন্যতম কারণ।

রাজস্থান সরকারের আইনজীবীর কাছে বিচারপতি লোকুর বিদ্রুপ করে জানতে চান— ‘‘৩১টি পাহাড় নেই। এ ভাবে পাহাড় উধাও হয়ে গেল, কী হবে? মানুষ কি তবে হনুমান হয়ে যাচ্ছে নাকি, যে পাহাড় তুলে নিয়ে যাচ্ছে?’’ বেঞ্চের কথায়, ‘‘রাজস্থানের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পাহাড় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। এটা একেবারে সত্যি। কিন্তু এর দায় কে নেবে?’’

ভারতের সংবিধান কেন মুসলিমরা ব্যবহার করে নিজের উন্নতি ঘটাতে পারেনি। মুন্সী আবুল কাশেম-এর লেখা

শুনানি চলাকালীন আদালত জানতে চেয়েছিল, বেআইনি খনন আটকাতে রাজ্য সরকার কী কী করেছে? সরকারি আইনজীবী তাতে বলেন, ‘‘আমরা শো-কজ নোটিস দিয়েছি। এফআইআরও করা হয়েছে।’’ কিন্তু জবাবে সন্তুষ্ট হয়নি কোর্ট। বিচারপতি লোকুর ও বিচারপতি গুপ্তের বেঞ্চ এর পরে বলে, ‘‘পাহাড় ঈশ্বরের তৈরি। ঈশ্বর যদি এই কাজ করে থাকেন, তা হলে নিশ্চয় তার পিছনে কিছু কারণ আছে। পাহাড় তো বাঁধের কাজ করে। এ ভাবে পাহাড় উধাও হয়ে গেলে, রাজধানীর নিকটবর্তী এলাকা থেকে দূষণ ক্রমশ গ্রাস করবে দিল্লিকে। নিজের রাজ্যের কিছু খনি মালিকের স্বার্থ রাখতে, আপনারা দিল্লির লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বিপন্ন করছেন।’’ আদালত এ-ও সতর্ক করেছে, ‘‘খনন কাজ থেকে হয়তো রাজস্থান সরকার ৫ হাজার কোটি টাকা রয়্যালটি পায়। কিন্তু দিল্লির মানুষের স্বাস্থ্য খাতে তার দশ গুণ খরচ হয়ে যাচ্ছে।’’

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে লেখা। পড়ুন এবং জানুন আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর সম্পদের কি হয়েছিল?

রাজস্থান সরকারের আইনজীবী ফের জানান, বেআইনি খনন আটকাতে সমস্ত দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাতে বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে, ‘‘কী ধরনের দায়িত্ব? ক্ষতি তো ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে!’’ কোর্ট স্পষ্টই জানায়, আরাবল্লীকে রক্ষা করতে ব্যর্থ রাজস্থান সরকার। রাজ্য এত দিন বিষয়টিকে ‘হাল্কা ভাবে’ নেওয়ার জন্যই তারা ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে, এ-ও জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যে পালন করা হচ্ছে, সেই মর্মে রাজস্থানের মুখ্যসচিবকে এক সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দিতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পরবর্তী শুনানি ২৯ অক্টোবর।

 

খবর- আনন্দবাজার

Back To Top